শিরোনাম
রুচিবর্ধক খাবার শুটকি মাছ: যা খেলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:৫০
রুচিবর্ধক খাবার শুটকি মাছ: যা খেলে বাড়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রুচিবর্ধক খাবারগুলোর মধ্যে অতি পরিচিত খাবার হল শুটকি মাছ। অনেক প্রাচীনকাল থেকে শুটকি মাছের প্রচলন রয়েছে আমাদের দেশে। শুটকি মাছ মূলত রোদে শুকিয়ে বানানো হয়ে থাকে। বড় বড় মাছ ধরে সেগুলোকে চিরে প্রচন্ড রোদে শুকিয়ে শুটকি মাছ হিসাবে সংরক্ষণ করা হয়। শুটকি মাছের স্বাদ একটু ভিন্নধর্মী হয়ে থাকে। আগেকার দিনে এই শুটকি মাছের রান্নার প্রতিযোগিতার বড় বড় আয়োজন করা হতো।


ইলিশ, রুপচাঁদা, লইট্টা, ছুরি, ছোট চিংড়ি, গজার, পুঁটি, কাঁচকি ইত্যাদি মাছ শুকিয়ে শুটকি তৈরি করা হয়। এটি বেশ জনপ্রিয় পদ। এই মাছ গুলোকে কাঁচা অবস্থায় লবণ মাখিয়ে কড়া রোদে শুকানো হয়। তাই মাছের দেহের পানি বা তরল অংশ শুকিয়ে যায়। ফলে এই মাছে কোনো জীবাণু জন্মাতে পারে না। প্রচুর পরিমাণে রৌদে শুকানো হয় এই মাছ। তাই এতে ভিটামিন ‘ডি’র (সূর্যের আলোতে থাকে ভিটামিন ‘ডি’) পরিমাণ রয়েছে পর্যাপ্ত অনুপাতে।


শুটকি মাছে রয়েছে নানা পুষ্টি উপাদান। এতে রয়েছে প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদির মতো দেহের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান। এছাড়াও আরও রয়েছে সেলেনিয়াম, নায়াসিন, ভিটামিন-বি১২, কোলেস্টেরল, স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড, ক্যালরি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সকল উপাদান।


শুটকি মাছে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ প্রোটিন থাকে যা দেহের জন্য খুবই উপকারী। এই প্রোটিনে থাকা অ্যামিনো এসিড ডিমে থাকা প্রোটিনের সমতুল্য। এছাড়াও শুটকিতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।


শুটকি মাছে রয়েছে সোডিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি স্নায়ুকেও নিয়ন্ত্রণ করে এবং মাংসপেশির গঠন ঠিক রাখে। এছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে পটাশিয়াম যা দেহের পানির ভারসাম্য ঠিক রাখে। দেহের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের জন্য দেহে পানির ভারসাম্য ঠিক থাকা অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি এই পটাশিয়াম স্নায়ুতন্ত্র, মাংসপেশি ও হৃৎপিণ্ডের কাজেও সহায়তা করে।


তাছাড়াও এই খাদ্যে রয়েছে ফসফরাস। ফসফরাস দেহের হাড়ের গঠন, দাঁতের গঠন এমনকি ডিএনএ ও আরএনএ এর গঠন ঠিক রাখতেও সাহায্য করে। পাশাপাশি এতে থাকা ভিটামিন-বি১২ রক্তের লোহিত রক্তকণিকা গঠনে সাহায্য করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে স্থির রাখে। এছাড়াও এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।


শুটকিতে রয়েছে নায়াসিন। এই নায়াসিন দেহে খাবার থেকে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি স্নায়ুতন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র ও ত্বক সুস্থ রাখে। এছাড়াও এই খাবারে রয়েছে কোলেস্টেরল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।


যারা অনেক বেশি পরিশ্রম করেন তারা এই মাছ খেতে পারেন। এটি দেহে ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে ও দেহে কাজ করার শক্তি জোগায়।


দেহের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুটকি বেশ কার্যকর। এটি দেহে উপকারী কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি বেশ উচ্চমানের আমিষ, প্রোটিন যুক্ত খাবার হওয়ায় হার্টেরও উপকার হয়। পাশাপাশি প্রচুর কোলেস্টেরল যুক্ত হওয়ায় এটি ওজন কমাতেও বেশ সাহায্য করে।


দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শুটকি মাছ বেশ উপকারী একটি খাদ্য। নিয়মিত এটি খেলে যক্ষা, সর্দি, কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, জ্বর ইত্যাদি রোগ সহজে হয় না। পাশাপাশি অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধেও এটি প্রতিরোধ গড়তে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে আয়োডিন, আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি রক্ত বাড়ানোর পাশাপাশি দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে।


গর্ভবতী মায়েদের দেহের জন্য গর্ভাবস্থায় আয়রন,সোডিয়াম ইত্যাদি উপাদান প্রয়োজনীয়তা। আর শুটকি মাছে এ সকল উপাদান আছে। পাশাপাশি অন্যান্য আরও অনেক উপাদানও রয়েছে যা গর্ভবতী মায়ের জন্য দরকারি। তাই গর্ভাবস্থায় মায়েরা এটি খেতে পারেন।


অনেকের হরমোন জাতীয় সমস্যা থাকে। হরমোন জাতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে খেতে পারেন শুটকি মাছে। এটি দেহের হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং হরমোন জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। এছাড়াও বাড়ন্ত শিশুদের দেহের গঠনেও এটি সাহায্য করে। পাশাপাশি কায়িক পরিশ্রমের পর দেহে শক্তি জোগাতেও এর রয়েছে অনেক উপকার।


যাদের জন্য শুটকি মাছ ঝুঁকিপূর্ণ


উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল থাকার কারণে এটি বেশি খেলে দেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। ফলে দেহের নানা ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তাই যারা মোটা তারা এই খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ। পাশাপাশি হার্টের সমস্যা থাকলেও এটি এড়িয়ে চলুন।


পিত্তথলি বা গলব্লাডারে পাথর হলে, কিডনির সমস্যা থাকলে বা অন্য কোনো জটিলতা থাকলে এই খাবার খাওয়া উচিৎ নয়। এতে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে।


শুটকি সংরক্ষণ করে প্রক্রিয়াজাত করার সময় অনেক লবণ ব্যবহার করা হয়। আর লবণ উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়। পাশাপাশি হৃদযন্ত্রেরও সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে এই খাবার এড়িয়ে চলুন। বাতের ব্যথা থাকলে শুটকি না খাওয়াই ভালো। এতে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।


সাম্প্রতিক সময়ে শুটকি সংরক্ষণে ক্ষতিকর বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এসব কীটনাশক দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। তাই এটি রান্নার আগে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে নিয়ে তারপর রান্না করা ভালো। এতে ক্ষতিকর কীটনাশক ও জীবাণুর কার্যকারিতা কমে যায়।


বিবার্তা/লিমন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com