
ব্রণের সমস্যায় অনেকেই নাজেহাল। অনেকের ছোট থেকেই শুরু হয় সমস্যা। মুখে ব্রণ দেখা দিলে অনেকেই হীনমন্যতায় ভোগেন। যার প্রভাব সরাসরি পড়ে ব্যক্তিজীবনে।
তবে পরিচিতদের কাছ থেকে এর সমাধানও মেলে ঢের। চন্দনবাটা থেকে শুরু করে ভাতের মাড় পর্যন্ত অনেকেই ব্রণ সমস্যা দূর করার মোক্ষম সব উপায় বাতলে দেন, বাস্তবে যা আদতে কোনো কাজে লাগে না।
হরমোনের তারতম্যের কারণে যে কোনও বয়সেই ব্রণ হতে পারে। এক বার ব্রণ হলে সহজে তা কমতে চায় না। বাজারচলতি প্রসাধনী ছাড়াও ঘরোয়া উপায়েও অনেকেই ব্রণ তাড়ানোর চেষ্টা করেন। ব্রণ নিয়ে সকলের মনে নানা রকম ভুল ধারণা রয়েছে। সেগুলির জন্যেই ব্রণ তাড়ানো অনেক কঠিন হয়ে পড়ে।
মূলত, ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থি থেকে সেবাম নামের একধরনের তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসৃত হয়। এই গ্রন্থির নালির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে সেবাম নিঃসরণ বাধাগ্রস্ত হয় এবং তা জমে ফুলে ওঠে, যা ব্রণ নামে পরিচিত। প্রায়ই ব্রণের চারপাশে প্রদাহ হয় এবং লাল হয়ে যায়। জীবাণুর সংক্রমণ হলে এতে পুঁজ হয়। সংক্রমণ সেরে গেলেও মুখে দাগ থেকে যেতে পারে।
ব্রণ কেন হয়
সুনির্দিষ্ট কারণ নিশ্চিত না হলেও হজমের সমস্যা, অ্যালকোহল, বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের প্রভাবে ব্রণ হয়। বংশগত কারণও অন্যতম। প্রোপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনিস নামের একধরনের জীবাণু এর জন্য দায়ী হতে পারে।
যে ভুল ধারণার জন্য তাড়াতে পারছেন না ব্রণ!
১। পেট পরিষ্কার না হলে ব্রণ হয়: যাঁদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকে, তাঁদের যে ব্রণ হবেই, এমন কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে কারও যদি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ হয়, তা থেকে স্ট্রেস হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। তাতে ব্রণ হতে পারে।
২। অতিরিক্ত মানসিক চাপে ব্রণ হতে পারে: মানসিক চাপে ব্রণের প্রবণতা বাড়তে পারে। কিন্তু যাঁদের সাধারণত ব্রণ হয় না, তাঁদের কোনও কারণে মানসিক চাপ সৃষ্টি হলেই যে ব্রণ হওয়া শুরু হবে, তেমন নয়। তাই ব্রণের সঙ্গে মানসিক চাপের তেমন কোনও যোগসূত্র নেই।
৩। একটা বয়সের পর ব্রণ এমনই সেরে যাবে: অনেকেই মনে করেন বয়ঃসন্ধির সময়ে ব্রণ হয়। বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এমনিই ব্রণ ঠিক হয়ে যায়। তা কিন্তু নয়। বয়সের অপেক্ষায় থেকে ব্রণের চিকিৎসা না করলে কিন্তু মুশকিল। ব্রণের সমস্যা যদি খুব বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়, তা হলে অবশ্যই চিকিৎসার বা বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন।
৪। মুখের ধুলোবালি থাকলে ব্রণ হয় : মুখে ধুলো থাকলেই যে ব্রণ হবে এমন কোনও মানে নেই। তবে মুখে কোনও ব্রণ থাকলে, তাতে ধুলো ঢুকে ব্রণ আরও বড় হয়ে যেতে পারে। তাই নিয়ম করে দিনে দু’বার মুখ ধোয়া জরুরি। কিন্তু বেশিবার মুখে সাবান বা ফেসওয়াশ দিলে ত্বক আরও বেশি স্পর্শকাতর হয়ে যেতে পারে।
৫। ব্রণ চাইলেই ফাটিয়ে দেওয়া যায় : অনেকেই মনে করেন, ব্রণ ফাটালে কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু ব্রণ ফাটালে অনেক সময়ে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। তা ছাড়া ব্রণ ফাটালে দাগ হয়ে যাবেই। যা সহজে দূর হয় না।
ব্রণ হলে কী করবেন
• দিনে দু-তিনবার হালকা সাবান বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে। বাইরে থেকে এসেই মুখ ধুয়ে ফেলুন। এ ছাড়া হালকা গরম পানির স্টিম নিতে পারেন।
• তেল ছাড়া ওয়াটার বেসড মেকআপ ব্যবহার করুন।
• মাথা খুশকিমুক্ত রাখার চেষ্টা করুন।
• পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন এবং আলাদা তোয়ালে ব্যবহার করুন।
• রাতে পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি খান ও পানি পান করুন।
• কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে। প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
ব্রণ হলে যা করবেন না
• রোদ এড়িয়ে চলুন।
• তেলযুক্ত ক্রিম বা ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন না।
• ব্রণে হাত লাগাবেন না, খুঁটবেন না।
• চুলে এমনভাবে তেল দেবেন না, যাতে মুখটাও তেলতেলে হয়ে যায়।
• তেলযুক্ত বা ফাস্টফুড খাবার ও উচ্চ শর্করাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]