কর্মজীবী নারীরা কীভাবে কাজের সমন্বয় করবেন?
প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৫৫
কর্মজীবী নারীরা কীভাবে কাজের সমন্বয় করবেন?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কর্মজীবী মায়ের মেয়েরা তুলানামুলক বেশি বুদ্ধিমতি, উচ্চশিক্ষিত এবং ক্যারিয়ারের প্রতি বেশি সচেতন হয়। ইদানীং কর্মজীবী মায়ের ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রচলিত লিঙ্গভিত্তিক আচরণ কমে যাচ্ছে, ছেলেরাও গৃহস্থালী কাজে মেয়েদের সাহায্য করছে।


যুগের সাথে তাল মিলিয়ে গেলে আধুনিক জীবনে নারীদের আর ঘরে বসে থাকের উপায় নেই। জীবনের আর দশটি কাজের সাথে তাল মিলিয়ে চালাতে হবে কর্মক্ষেত্রও। এদিকে কর্মজীবী নারীরা থাকেন নানা সমস্যায়, প্রতিদিন, প্রতিমুহূর্তে।


অফিসে গিয়েও সন্তানদের চিন্তা হয়- বাচ্চারা স্কুল থেকে ফিরলো কিনা, ঠিকঠাকমতো খেলো কিনা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, দুইজনেই অফিস থেকে একই সময়ে ফিরে স্বামী হাতমুখ ধুয়ে খাটে বা সোফায় আরাম করে বসেন এবং স্ত্রীর কাছে সান্ধ্যকালীন চা নাস্তা চান। আর স্ত্রী কোনোরকমে হাতমুখ ধুয়ে রান্নাঘরে ঢুকে যান। বিকালের নাস্তা এবং রাতের খাবার তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। সংসারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাচ্চাদের পড়ানো ও স্কুলের খোঁজখবর খুশিমনে নিয়ে থাকেন। কখনও প্রয়োজন, কখনও নিজের ইচ্ছাতেই ব্যস্ত থাকেন তিনি।


যুদ্ধক্ষেত্রে বিরতি থাকলেও সংসার নামক যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো বিরতি নেই। প্রতিটি মুহুর্তে একজন কর্মজীবী নারীকে লড়ে যেতে হয়। জীবন আগের থেকে গতিশীল হলেও অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের বোঝাপড়ার বিষয়গুলো সেকেলেই থেকে গিয়েছে। আমাদের পরিবার এবং সমাজে কর্মজীবী মায়েরা সম্মান পায় না। সন্তান যদি রেজাল্ট খারাপ করে, তাহলে পরিবার দায়ী করে মাকে, মা সময় না দেয়ায় বাচ্চার রেজাল্ট খারাপ হয়। বাচ্চা অসুস্থ হলেও মায়ের দোষ। মা চাকরি করার কারণে বাসায় থাকে না। সন্তানের কোনো পরিচর্যা নাই, তাই সন্তান লেখাপড়া করে না এবং অসুস্থ হয়। কারো সন্তান বখে গেলেও দোষ মায়ের; মা ভালো শিক্ষা দেয়নি। ছোটখাটো ভুল ত্রুটি হলেই নারীকে অদক্ষতা ও অলসতার অপবাদ শুনতে হয়।


জীবনের বিভিন্ন জটিলতা যেমন দায়িত্ব পালনে ব্যার্থতার ভয়, সন্তানের চিন্তা, সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা, কর্মক্ষেত্রে জটিলতা একজন কর্মজীবী মা’কে মানসিকভাবে দূর্বল করে দেয়। আগে যে শিশু বিনোদনের জন্য সবুজ মাঠে দৌড়ে বেড়াত, খেলতো ছোট্ট পুতুল বা খেলনা গাড়ি নিয়ে, আজ সেই শিশুই বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার বেছে নিচ্ছে। নগরায়ণ গৃহিণী মাকে কর্মজীবী মায়ে পরিণত করেছে আজ। এখন সকালে কর্মজীবী মাকে নাস্তা তৈরি করার পাশাপাশি বাইরে কাজে যেতে হয়। ফলে, নগরায়ণ একদিকে মায়েদের কাজের সুযোগ যেমন তৈরি করেছে, তেমনি মাকে অনেকটাই দূরে সরিয়ে নিয়েছে তার সন্তান থেকে। 


কিন্তু বেশ কিছু সহজ টিপস মনে চললে খুব সহজেই নতুন মাতৃত্ব এবং কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবেন তারা। চলুন জেনে নেওয়া যাক, নতুন মা হলে কর্মজীবনে ভারসাম্য বজায় রাখার সহজ কিছু টিপস-


** প্রথমেই নিজের যত্ন


পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, নিয়মিত ঘুমানোর অভ্যাস করুন; ঘুম শরীরের ক্লান্তি দূর করে নতুন শক্তি যোগায়। অফিসেও কাজের ফাঁকে কিছুটা বিশ্রাম/বিরতি নিন। নিয়মিত এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন। সময়ের অভাব- এই অজুহাতে কম বা অপুষ্টিকর খাবার খাবেন না। মনে রাখবেন, বাচ্চা জন্মদানের পর শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। আর বাচ্চা যতদিন বুকের দুধ খায় আপনার শরীরে প্রচুর পুষ্টির যোগান দরকার। তাই প্রচুর শাকসবজি, ফলমূ্ল, তরল খাবার (যেমনঃ শরবত, স্যুপ) এবং শস্যজাতীয় খাবার খান।


এই সময়ে নিজের খেয়াল রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু অনেকেই এই সময়ে নিজের খেয়াল রাখতে চান না। এজন্য সপ্তাহে কিছু সময় নিজের জন্য বের করে নিন, যে সময়গুলোতে আপনি পছন্দের কাজগুলো করতে পারবেন। যেমন গান শোনা, ছবি আঁকা ইত্যাদি করতে পারেন। এইগুলো আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।


** কেয়ার-গিভারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন


মা’র অনুপস্থিতিতে শিশুর খেয়াল রাখতে পারে বাড়ির কাজের লোক, আয়া বা নিজের দাদী-নানী। এই ব্যক্তিরাই মূলত শিশুর সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সময় কাটায়। তাই তাদের সঙ্গে বিশ্বাস এবং সততার একটি সম্পর্ক থাকা দরকার। শিশুদের জন্য আয়া নিতে চাইলে সবসময় তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নি আগে।  কাজে নেয়ার সময়ই কাজ সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা দিয়ে দিন তাকে।


** সময় বণ্টন করুন


অফিস শুরু হওয়ার আগে পরিবারের সব সদস্যের একটি পারিবারিক ক্যালেন্ডার তৈরি করুন। তাদের কাজের সময়সূচী ও অ্যাপোয়েন্টমেন্ট এক জায়গায় থাকা দরকার। সবকিছু একটি ডায়েরিতে রাখলে কাজ সহজ হবে। এর মাধ্যমে আপনি পরিবারের সদস্যদের সপ্তাহে কখন কী কাজ আছে জানতে পারবেন। এতে শিশুর দেখাশোনা এবং ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট ঠিক সময় মতো করাতে পারবেন।


** রুটিন ঠিক রাখুন


অফিস শুরু হওয়ার আগেই আপনার দিন এবং রাতের রুটিন ঠিক রাখুন। শিশুরাও রুটিনের মধ্যে থাকতে ভালোবাসে। যতটা সম্ভব রুটিনে সবকিছু ঠিকভাবে সাজিয়ে রাখুন যাতে কাজ শুরু হলে কোনো কিছু মিস না হয়ে যায়।


** কর্মক্ষেত্রে সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখুন


কর্মক্ষেত্রে আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়, অসুস্থতা, ছুটির বিষয়গুলো জানিয়ে রাখুন। সেই সাথে অফিসে সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করুন। জানিয়ে রাখতে পারেন আপনার অ্যাপোয়েন্টমেন্ট গুলোও। এতে আপনি স্ট্রেসমুক্ত থাকবেন।


** খাবারের পরিকল্পনা করে রাখুন


কর্মজীবী নারীর জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো তার খাবার। তাই সকাল, দুপুর এবং রাতে কী খাবেন তা আগেই ঠিক করে রাখুন। বাসায় যারা রান্না করবেন তাদের আগে থেকেই জানিয়ে রাখলে দিনের শুরুতে এটি নিয়ে আর ভাবতে হয় না। চাইলে একবারে পুরো সপ্তাহের খাবারের তালিকা ঠিক করে রাখতে পারেন। এতে ঝামেলা কম হবে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com