সব বাদ দিয়ে তিলের তেলই কেন?
প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৭
সব বাদ দিয়ে তিলের তেলই কেন?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

তিলের তেল মূলত একটি ভেজিটেবল অয়েল। তিলের তেল বেশ উচ্চমাত্রায় পুষ্টিকর, কেননা এই তেল বেশি কিছু অ্যাসেনশিয়াল ভিটামিন যেমন- ভিটামিন ই, বি কমপ্লেক্স ও ডি সমৃদ্ধ। পাশাপাশি এই তেলে আছে কপার, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। এছাড়াও তিলের তেলে রয়েছে ফ্যাটি এসিড।


শরীরের নানা রোগব্যাধি দূর করতে তিল তেল,  বেশ উপকারী। এই তেলের এত গুণ, জানলে অবাক হবেন আপনি।


তিল তেল কাদের জন্য বেশি উপকারী?


ডায়বিটিস নিয়ন্ত্রণ


ছোট থেকে বড়, সব বয়সিদের মধ্যেই ডায়াবিটিসের ঝুঁকি এখন অনেক বেশি। ডায়াবেটিক রোগীদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী সাদা তিল।


উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে 


উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাদা তিলের জুড়ি মেলা ভার। এই তিলে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও এই তেলে রান্না করা ভাল?


ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়


সাদা তিলের তেলে একাধিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। তাই প্রতি দিনের খাবারে এই তেল ব্যবহার করলে শরীরে ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। যাঁদের কেমোথেরাপি নিতে হয়, তাঁদের খাদ্যতালিকায় এই তেল রাখার কথা বলেন পুষ্টিবিদরা।


ব্যথা উপশম করে


এই তেল হাড়কে মজবুত করে। তিলের তেলে রয়েছে তামা, যা গাঁটের ব্যথা, পা ফুলে যাওয়া, পেশিতে ব্যথা কিংবা বাতের ব্যথার উপশমে খুবই কার্যকর। যাঁদের আর্থারাইটিসের সমস্যা আছে তাঁরাও তিলের তেল দিয়ে রান্না করতে পারেন, উপকার পাবেন।


স্বাস্থ্যরক্ষায় তিলের তেল


১) অকালে চুল পেকে যাওয়া রোধ করে, নিয়মিত মাথার স্ক্যাল্প ম্যাসাজ করতে হবে।


২) আথ্রাইটিস পেইন-এর ক্ষেত্রে এই তেল খাবার তেল হিসেবে ব্যবহার এবং মালিশ দুটোই করলে উপকার পাবেন।


৩) রান্নায় এই তেলের ব্যবহার ব্লাড প্রেশার কমায়।


৪) ডায়েটে এই তেলের ব্যবহার স্ট্রেস ও ডিপ্রেশন কমায়।


৫) রান্নায় তিলের তেলের ব্যবহার ইনসুলিন এবং গ্লুকোজ লেভেল ঠিক রাখে বলে ডায়াবেটিস-এর রোগীরা এটাকে নিয়মিত খাবারের তেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।


সৌন্দর্যচর্চায় তিলের তেল 


১. স্কিনটোন ইভেন করতে
তিলের তেলে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকায়, যাদের প্যাচি স্কিন বা ত্বকে দাগ ছোপ আছে, তারা দিনে দুই বার এই অয়েল হালকা করে ম্যাসাজ করে ১৫ মিনিট রেখে দিয়ে, গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে মুছে নিলে, স্কিনটোন অনেকটাই ইভেন হয়ে যাবে।


২. শুষ্ক ত্বকের যত্নে
এই তেল একটি অসাধারণ ময়েশচারাইজার। পাশাপাশি এতে ডিটক্সিফাইং উপাদান থাকায় শুষ্ক ডেড সেল দূর করে ত্বককে সফট ও হাইড্রেটেড করে তোলে। রাতে ঘুমানোর আগে দু ফোঁটা তিলের তেল যেকোনো ক্রিমের সাথে মিশিয়ে ফেইসে অ্যাপ্লাই করবেন। চাইলে এই তেল আপনি আপনার পছন্দের ফেইস প্যাকেও লাগাতে পারেন, তবে খুব বেশি না, দুই থেকে তিন ফোঁটা পরিমাণে।


৩. ত্বকের রিংকেলস দূর করতে  
বয়স বিশের পরে তিলের তেল ব্যবহার শুরু করা উচিত। আর যদি আপনি আমার মতো ২৫+ হয়ে থাকেন, তাহলে আজকে থেকেই এই তেল ব্যবহার শুরু করা উচিত। কেননা এই তেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে বলে এটি অসাধারণভাবে অ্যান্টি-এজিং এর কাজ করে। মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে এই তেল কয়েক ফোঁটা ভালোভাবে অ্যান্টিক্লক ওয়াইজ ম্যাসাজ করবেন। এরপরে গরম পানিতে ভেজানো তোয়ালে মুখের ওপর এক মিনিট পেতে রেখে মুছে ফেলুন।


৪. সানবার্ন ও ক্লোরিন বার্ন কমাতে  
কক্সবাজার, সেন্ট মারটিন ঘুরে আসার পরে আয়নার দিকে আর তাকাতে মন চায় না কারো। এই সানবার্ন দূর করতে, গোসলের আগে ভালোভাবে তিলের তেল সারা শরীরে, যেমন হাত, পা, মুখ, গলা, ঘাড় যেসব জায়গায় বেশি সানবার্ন হয়েছে, সেখানে ভালোভাবে মালিশ করে, এরপরে গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিন। এভাবে বেশ কয়েকদিন করলে ভালো উপকার পাবেন। এছাড়াও যারা নিয়মিত সুইমিং পুলে যান, তাদেরও ক্লোরিন পানিতে স্কিন-এর বেশ সমস্যা হয়। তাই সুইমিং পুলে নামার আগে এই তেল মেখে নিলে ক্লোরিন আপনার ত্বকের কোন ক্ষতিই করতে পারবে না।   


৫. খুশকি ও ফাঙ্গাস দূর করতে
চুলে খুশকির সমস্যা থাকলে বা কোনো রকম ফাঙ্গাল ইনফেকশন থেকে থাকলে রোজ রাতে তিলের তেল মাথায় দিয়ে সকালে শ্যাম্পু করবেন। তেলটা কীভাবে বানাবেন? ছোটো এক কাপ তিলের তেল নিয়ে তাতে এক চা চামচ মেথি নিয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন, এরপর সেটা চুলে লাগাতে হবে। আশা করি দ্রুতই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।


৬. অকালে চুল পাকা রোধ করতে
অনেকের বয়স ত্রিশ ছুঁতে না ছুঁতেই চুল সাদা হওয়া শুরু করে দেয়। এই সমস্যা থেকে আপনাকে বাঁচাতে পারে তিলের তেল। নিয়মিত তিলের তেল মাথার স্ক্যাল্প-এ ম্যাসাজ করুন। তিলের তেল একটু ভারী বলে পুরো চুলে লাগাতে হলে অন্য কোন হালকা তেল যেমন অলিভ অয়েল বা নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে লাগাবেন। অকালে পেকে যাওয়া রোধের পাশাপাশি এটি চুলের রংকেও ডার্ক করে তোলে আস্তে আস্তে।


৭. উকুন দূর করতে
উকুন দূর করতে অনেকেই বিশেষ সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করেন যেগুলো উকুন দূর করার পাশাপাশি চুলকে ফ্রি-ভাবে রুক্ষ করে দেয়। ঘরোয়া রেমেডি হিসেবে, প্রয়োজন অনুযায়ী তিলের তেলের মধ্যে নিম পাতা নিয়ে, একটু মাইক্রোওভেন এ গরম করে স্ক্যাল্প এ লাগান। পুরো চুলে ভালো করে লাগাতে হবে নইলে উকুন দূর হবে না। দু ঘণ্টা পরে শ্যাম্পু করে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে উকুন দূর হবে প্লাস চুলে শাইন আসবে।


৮. হেয়ার ড্যামাজ থেকে বাঁচতে
নানারকম স্টাইলিং-এর কারণে চুল ড্যামেজ হয়ে থাকলে, একটা পাকা অ্যাভোকাডো ম্যাশ করে নিয়ে তাতে মেশান ৫ চামচ তিলের তেল (চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী এই পরিমাণ বাড়িয়ে নিতে পারেন)। এবার পুরো চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে দু’বার করলে ভালো উপকার পাবেন।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com