শীতকালে পা ফাটার সমস্যাও বাড়ে। তাই মোজা পরে রাখতেই পছন্দ করেন বেশির ভাগ মানুষ। কিন্তু যত্ত ভয় সব জুতা খোলার সময়। এই বুঝি দুর্গন্ধ ছড়াবে। মাঝেমধ্যে এটা এতটাই ভয়ানক হয় যে আশপাশের মানুষজনও বিরক্ত বোধ করে। ফলাফল ভ্রুজোড়া কুঁচকে সবাই তাকিয়ে থাকে। একটু সচেতন হলেই এড়াতে পারবেন এ ধরনের বিড়ম্বনা।
যাদের নিয়মিত মোজা পরার অভ্যাস, তারা তো মোজা ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোতেই পারেন না। অনেকের পায়ে মোজা পরার জন্য প্রবল দুর্গন্ধ তৈরি হয়। অফিস-কাছারিতে, আড্ডায় কিংবা অনুষ্ঠানে মোজা থেকে তৈরি হওয়া দুর্গন্ধের ফলে লজ্জায় পড়তে হয়, এমন ঘটনাও ঘটে থাকে।
পায়ে থাকা ঘামের সঙ্গে মোজার ব্যাক্টেরিয়া মিশিয়ে গিয়েই তৈরি হয় বিকট গন্ধ। চিকিৎসকদের ভাষায় একে ব্রোমোডোসিস বলে। পায়ে থাকা ঘামের সঙ্গে মোজার ব্যাক্টেরিয়া মিশে গিয়েই তৈরি হয় বিকট গন্ধ।
এমনিতে ঘাম নিজে কিন্তু বর্ণ-গন্ধহীন। কিন্তু এটি এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। আপনি যখন জুতা-মোজা পরে অনেকক্ষণ থাকেন, তখন এই ব্যাকটেরিয়াগুলো আপনার পায়ের আবদ্ধ পরিবেশে ভীষণ গরমে পা থেকে বের হওয়া ঘামের পরিবেশ কাজে লাগিয়ে এই গন্ধের সৃষ্টি করে।
ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে স্বাভাবিকভাবেই সহাবস্থান করে। কিন্তু শরীরে যখন ঘাম হয়, তখন পায়ের পাতার সামনের দিকে ঘামের ঘনত্ব বেশি থাকে। কারণ শরীরের অন্য অংশ বাতাসের সংস্পর্শে আসার সম্ভাবনা থাকলেও পায়ের পাতার এই অংশটুকু সাধারণত বাতাসের সংস্পর্শে আসে না।
ফলে পায়ের পাতায় গরমের ফলে তৈরি হয় ঘাম পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে বেশি ঘনত্বের মরা কোষগুলোকে লক্ষ করে ব্যাকটেরিয়াগুলো এই অংশগুলোতে বেশি মাত্রায় উপস্থিত থাকে। এরা একটি বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এখানে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে।
তবে এর থেকে মুক্তির উপায় রয়েছে হাতের কাছেই। জেনে নিনি উপায়গুলো কী কী,
১) ঘাম কম হোক বা বেশি, চামড়ার যত্ন ও ঘামের গন্ধ থেকে বাঁচতে সুতির মোজা ব্যবহার করুন। সিন্থেটিক মোজা পরলে ঘাম বেশি হয়।
২) খাদ্যতালিকাতেও পরিবর্তন আনুন, খুব মশলাদার খাবার বিপাকক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। বদহজম বা অম্লতা ঘন ঘন হলে তা ঘামের গন্ধ আরও বিশ্রী হয়।
৩) চা-কফির নেশা থাকলে এড়িয়ে চলুন। যে কোনও উত্তেজক পানীয় শরীরে হরমোন নির্গমনে সাহায্য করে। তাতে স্নায়ু উত্তেজিত হয় পরোক্ষে। ফলে সহজেই ঘাম হয়।
৪) জুতোকে মাঝেমাঝেই রোদে দিন। জুতোর ভিতরে আলো-হাওয়া পৌঁছলে ছত্রাক, ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়ার প্রকোপ কমে। একই মোজা পর পর দু’দিন ব্যবহার করার অভ্যাস ত্যাগ করুন। অনেকেরই এই প্রবণতা থাকে। তা অত্যন্ত বদভ্যাস।
৫) মোজা পরলেই পা ঘেমে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে নাজেহাল যাঁরা, তাঁরা বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে ঈষদুষ্ণ লবণ-জলে পা ডুবিয়ে রাখুন মিনিট পনেরো। লবণ ছত্রাক রোধ করতে সক্ষম। ফলে পা ঘামার সমস্যাকে কমিয়ে দেয় অনেকটাই। একটু সময়সাপেক্ষ হলেও পা ঘামার সমস্যা দূর করতে লবণ-জলের জুড়ি নেই।
আরো জানুন
জুতা পরার আগে
পায়ে জুতা পরার আগে জুতাটা পরিষ্কার করে নিন। এ ছাড়া যাদের পায়ে গন্ধ হয় তারা মোজা পরার আগে একটু সচেতন থাকা ভালো। একই মোজা রোজ না পরে প্রতিদিন পরিষ্কার মোজা পরুন। নরম, বাতাস চলাচলের উপযোগী জুতা বেছে নিন। বারবার পরার আগে জুতা রোদে শুকিয়ে নিন। বাসায় ফিরে জুতা খুলে খোলামেলা স্থানে রেখে দিন। বাজারে ঘাম প্রতিরোধক লোশন পাওয়া যায়, চাইলে সেটা ব্যবহার করতে পারেন।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]