বিশ্বে কার্বন নির্গমন যেভাবে চলছে তা কমানো না গেলে এখন থেকে ৮০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের একটি বড় অংশ সাগরের পানির নিচে চলে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত এক নতুন রিপোর্টে এ তথ্য উঠে এসেছে ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি যতটা হবে বলে আগে ধারণা করা হয়েছিল পানির স্তর আসলে তার চাইতে অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে বিজ্ঞানীরা হুঁশিয়ার করেছেন।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকায় জমে থাকা বরফ গলার হার দ্রুততর হওয়াই এর কারণ। এতে ‘ভয়ংকর পরিণাম’ হতে পারে। এর ফলে ৮০ লাখ বর্গ কিলোমিটার পরিমাণ ভূমি সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে। এর মধ্যে থাকবে বাংলাদেশের এক বড় অংশ।
বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশের অনেক এলাকা তখন এমন হয়ে যাবে যে সেখানে লোকজনের বসবাস খুবই দুরূহ হয়ে পড়বে।
এতদিন বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ২১০০ সাল নাগাদ পৃথিবীর সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বাড়বে এক মিটারের কিছু কম। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে ওই হিসেব ছিল অনেক ‘রক্ষণশীল’।
নতুন জরিপে বলা হচ্ছে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়তে পারে তার প্রায় দ্বিগুণ। এর ফলে ৮০ লাখ বর্গ কিলোমিটার পরিমাণ ভুমি সাগরের পানিতে তলিয়ে যাবে। এর মধ্যে থাকবে বাংলাদের এক বড় অংশ এবং মিশরের নীল নদ উপত্যকা।
বিপন্ন হবে লন্ডন, নিউইয়র্ক এবং সাংহাইয়ের মতো অনেক শহরের অস্তিত্ব। কোটি কোটি লোককে এর ফলে বাড়িঘর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে হবে।
যে জায়গাগুলো পানির নিচে চলে যাবে তার অনেকগুলোই গুরুত্বপূর্ণ ফসল ফলানো অঞ্চল, যেমন নীল নদের বদ্বীপ।
প্রসিডিংস অব দি ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস নামের জার্নালে এ জরিপের ফল প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, যদি বর্তমানের মতোই তাপ নিঃসরণ চলতে থাকে, তাহলে ২১০০ সালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬২ থেকে ২৩৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। এতে উষ্ণতা বাড়বে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। বিশ্ব উষ্ণতা বাড়ার ক্ষেত্রে চরম খারাপ অবস্থা এটি।
এর আগে ২০১৩ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, সমুদ্রস্তরের উচ্চতা ৫২ থেকে ৯৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকায় বরফ গলার প্রক্রিয়ার অনেক দিকই তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাথন বামবার নেতৃত্বদানকারী গবেষক। তিনি বলেন, আগে ভাবা হয়েছিল যে ২১০০ সাল পর্যন্ত বরফের স্তর ৭ থেকে ১৭৮ সেন্টিমিটারের মতো বাড়তে পারে। কিন্তু সাগরের উষ্ণতা বাড়ায় হিমবাহ ও বরফের স্তরের বাইরের চূড়া গলে যেতে থাকায় এর মাত্রা দুই মিটার হতে পারে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের আইপিসিসি প্রতিবেদনে এ ক্ষেত্রে ১৭ থেকে ৮৩ শতাংশ সম্ভাবনার কথা বলেছিল। তবে নতুন জরিপ ৫ থেকে ৯৫ শতাংশের কথা বলছে।
নতুন জরিপ অনুসারে, তাপমাত্রা ২ সেলসিয়াস ডিগ্রি বাড়লে গ্রিনল্যান্ডের বরফের স্তর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে। যদি তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি বাড়ে, তাহলে অ্যান্টার্কটিকার বরফের স্তর আরও বেশি প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরো বলেছেন, সামনের বছরগুলোয় তাপমাত্রা নিঃসরণ রোধে বড় ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হলে এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। সূত্র: বিবিসি
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]