
মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে দেশটির প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)। এ জয়ের ফলে দেশটির পার্লামেন্ট পিপলস মজলিশের নিয়ন্ত্রণ পেতে যাচ্ছে দলটি।
রবিবার (২১ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন ৯৩টি আসনের মধ্যে ৮৬টির ফলাফল ঘোষণা করে। ফলাফল এটাই দেখাচ্ছে যে, দেশটির ভোটাররা আঞ্চলিক শক্তিধর ও ঐতিহ্যগত শুভাকাঙ্ক্ষী দেশ ভারতের বলয় থেকে বেরিয়ে এসে মুইজ্জুর চীনপন্থি নীতির প্রতি ঝুঁকে পড়ার বিষয়টিতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে।
ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ৯৩ আসনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে মুইজ্জুর দল পিএনসি দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮৬টি আসনের মধ্যে পিএনসি পেয়েছে ৬৬টি আসন। এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে এই সংখ্যা অনেক বেশি। বিদায়ী পার্লামেন্টে পিএনসি ও তাদের শরিকদের মাত্র আটটি আসন ছিল। আনুষ্ঠানিক বা সরকারিভাবে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করতে এক সপ্তাহ লেগে যাবে আর নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশ শুরু হবে মে মাসের শুরুতে।
দেশটির ভোটাররা আঞ্চলিক শক্তিধর ও ঐতিহ্যগত শুভাকাঙ্ক্ষী দেশ ভারতের বলয় থেকে বেরিয়ে এসে মুইজ্জুর চীনপন্থি নীতির প্রতি ঝুঁকে পড়ার বিষয়টিতে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে।
২২ এপ্রিল, সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপির দেয়া প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
মালদ্বীপের এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচন ছিল প্রেসিডেন্ট মইজ্জুর জন্য কঠিন পরীক্ষা। কারণ ভারতবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত মুইজ্জুর প্রেসিডেন্ট হলেও পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁর আগের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সালেহর দল মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) হাতে। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেছিলেন, পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া মুইজ্জুর দলের জন্য কঠিন হবে।
মালদ্বীপের স্থানীয় সংবাদপত্র ‘মিহারু’র প্রতিবেদন অনুসারে এই নির্বাচনে ৪১ জন নারী প্রার্থী অংশ নেয়। তবে তাদের মধ্যে কেবলমাত্র তিনজন জয়ী হয়ে আসতে পেরেছেন আর তারা মুইজ্জুর দলেরই সদস্য।
এই নির্বাচনকে চীনের সঙ্গে দেশটির ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতা স্থাপনে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছিল বিতর্কিতভাবে পুনরুদ্ধার করা জমিতে হাজার হাজার অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের উদ্যোগ।
গত মেয়াদে পিএনসি ও তার মিত্রদের পার্লামেন্টে আসন ছিল মাত্র আটটি। যার কারণে দলটি ছিল কোণঠাসা অবস্থায়। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই জোটের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন মোহামেদ মুইজ্জু।
ফলাফল অনুসারে গত মেয়াদে ‘সুপার মেজরিটির’ তকমাধারী মালদ্বিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি) মাত্র ডজনখানেক আসন নিয়ে বেশ বেকায়দায়ই পড়েছে। এই দলটি ভারতপন্থি হিসেবেই বেশি পরিচিত যার নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ।
গতকাল রোববার প্রথম ভোটার হিসেবে রাজধানী মালের একটি কেন্দ্রে নিজের ভোট দেওয়ার পর মোহামেদ মুইজ্জু মালদ্বীপের ভোটারদের প্রতি ব্যাপকভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বিষুবরেখা জুড়ে ৮০০ কিরোমিটার ব্যাপ্তি নিয়ে এক হাজার ১৯২টি প্রবাল দ্বীপের এই দেশটি বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার কারণে নিজের অস্তিত্বের ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও দেশটির সাবেক নির্মাণবিষয়ক মন্ত্রী মুইজ্জু বেশ কিছু উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি জমি পুনরুদ্ধার ও দ্বীপগুলোকে উঁচু করে ফেলার মতো কাজ যার ফলে সমুদ্রের ঢেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না নাগরিকদের বসবাসের ক্ষেত্রে। তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন তার এই পরিকল্পনা বন্যার ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
প্রাচীন সাদা বালিরর সমুদ্র সৈকত ও নিরিবিলি রিসোর্টের কারণে মালদ্বীপ অন্যতম শীর্ষ বিলাসবহুল অবকাশ গন্তব্য হিসেবে বিশেষভাবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। তবে সাম্প্রতি সময়ে এটি অন্যতম ভূরাজনৈতিক ‘হটস্পট’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যার প্রধান কারণ এই দ্বীপপুঞ্জের পাশ ঘিরেই রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিমের সংযোগকারী আন্তর্জাতিক নৌবাণিজ্যের রুট।
এ মাসের নির্বাচনি প্রচার চলাকালেই মুইজ্জু চীনা রাষ্ট্রীয় কোম্পানির সঙ্গে তার হাইপ্রোফাইল অবকাঠামো নির্মাণ পরিকল্পনার বিষয়ে চুক্তি সেরে ফেলেন। তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন মালদ্বীপের বিশাল সমুদ্রসীমা নজরদারির কাজে নিয়োজিত ৮৯ জন ভারতীয় সৈন্যের বহরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়েও বেশ তৎপর রয়েছে।
গেলো বছরের সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে ভারতবিরোধী মুইজ্জু বিজয়ী হন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই মালদ্বীপে থাকা ভারতীয় সেনাদের দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। এ নিয়ে ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হয়।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]