ইকুয়েডরের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করেছে মেক্সিকো। রাজধানী কুইটোতে অবস্থিত মেক্সিকোর দূতাবাসে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা ইকুয়েডরের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট হোর্হে গ্লাসকে গ্রেফতার করায় দেশটির সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে মেক্সিকো।

শুক্রবার (৫ মার্চ) ভাইস-প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসকে গ্রেপ্তার করতেই মেক্সিকান দূতাবাসে ওই অভিযান চালায় পুলিশ। গ্লাসকে গ্রেফতারের পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেক্সিকোর সরকার।

৭ এপ্রিল, রবিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

গ্লাসকে নিরাপদে দেশের বাইরে পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে মেক্সিকোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল মেক্সিকো। কিন্তু দূতাবাসে প্রবেশ করে গ্লাসকে গ্রেফতার করেছে ইকুয়েডরের বিশেষ বাহিনী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইকুয়েডরের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসকে গ্রেফতার করতে রাজধানী কুইটোতে অবস্থিত মেক্সিকান দূতাবাসে পুলিশের হামলার পর ইকুয়েডরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছে মেক্সিকো।

মেক্সিকান প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর বলেছেন, তারা (ইকুয়েডর) ‘আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন’ করে দূতাবাসে ‘জোরপূর্বক প্রবেশ’ করেছে।

বিবিসি বলছে, দুর্নীতির অভিযোগে ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর দেশটির সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাস গত বছরের ডিসেম্বরে মেক্সিকান দূতাবাসে আশ্রয় নেন। গ্লাসের আইনজীবী বলেছেন, তিনি নির্দোষ।

তবে দূতাবাসে হামলা চালিয়ে গ্লাসকে গ্রেফতারের পর পুলিশ পাহারায় তাকে গুয়াকিল শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং সেখানে তিনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় কারাগারে বিচারের অপেক্ষায় থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

জর্জ গ্লাস ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ইকুয়েডরের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের কারণে তাকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।

সেই বছর পরে ব্রাজিলিয়ান নির্মাণ জায়ান্ট ওডেব্রেখটে দুর্নীতির অভিযোগে তাকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। প্রসিকিউটররা বলেছেন, তিনি ১ কোটি ৩৫ লাখ মার্কিন ডলার ঘুষ নিয়েছেন।

গত বছরের নভেম্বরে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। কিন্তু ইকুয়েডর কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির আরও অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে আরেকটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং এরপরই গ্লাস রাজধানী কুইটোর মেক্সিকান দূতাবাসে আশ্রয় নেন।

গত শুক্রবার মেক্সিকো জানায়, তারা পরিস্থিতির ‘পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণের পরে’ জর্জ গ্লাসকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। তবে এই পদক্ষেপকে ইকুয়েডরকে অবৈধ হিসাবে দেখছে।

এই অভিযানের আগে এক বিবৃতিতে ইকুয়েডরের সরকার বলেছিল, এটি একটি সার্বভৌম দেশ। এখানে কোনো অপরাধীকে মুক্ত থাকতে দেয়া হবে না।

এদিকে, মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জর্জ গ্লাসকে গ্রেফতারের জেরে (ইকুয়েডরের সঙ্গে) কূটনৈতিক সম্পর্ক অবিলম্বে স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

তিনি আরো লিখেছেন, ইকুয়েডরের পুলিশ জোরপূর্বক আমাদের দূতাবাসে প্রবেশ করে এবং সেই দেশের সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্টকে আটক করে। তিনি একজন শরণার্থী ছিলেন এবং তিনি যে নিপীড়ন ও হয়রানির সম্মুখীন হয়েছেন তার কারণে আশ্রয়প্রক্রিয়া সম্পন্নের কাজ করছিলেন। এটি আন্তর্জাতিক আইন এবং মেক্সিকোর সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

এর কয়েক ঘণ্টা পরে মধ্য আমেরিকার দেশ নিকারাগুয়াও ‘অস্বাভাবিক এবং নিন্দনীয় পদক্ষেপের’ ফলে ইকুয়েডরের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে বলে এক সরকারি বিবৃতিতে ঘোষণা দেয়।

মেক্সিকোর পররাষ্ট্রসচিব অ্যালিসিয়া বারসেনা জানিয়েছেন, দূতাবাসে পুলিশি হামলার এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন কূটনীতিক আহত হয়েছেন।

আইনজীবী ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার আদ্রিয়ান পেরেজ সালাজার বলেন, অনেকের কাছে এটিকে বিচারের উপহাস বলে মনে হয়েছে। একটি দূতাবাসে জোর করে আইন লঙ্ঘন করার অধিকার কারও নেই।

ডিসেম্বর থেকে মেক্সিকান দূতাবাসের আশ্রয়ে ছিলেন গ্লাস। দুইবার দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। তাকে ইকুয়েডরের কর্মকর্তারা নির্যাতন করছেন বলেও গ্লাস দাবি করেন।

বিবার্তা/লিমন