১১ বছরের মধ্যে বিশ্ববাজারে চালের দাম সর্বোচ্চ
প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩, ২১:৩৯
১১ বছরের মধ্যে বিশ্ববাজারে চালের দাম সর্বোচ্চ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতে কৃষকদের অর্থসহায়তা বাড়ানোর উদ্যোগ এবং আবহাওয়াগত কারণে উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে।


এল নিনো ধাঁচের আবহাওয়ার প্রভাবে অদূর ভবিষ্যতে চালের দাম আরও অন্তত ৫ গুণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক বাজার বিশ্লেষকরা। বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।


রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের চাল রফতানির ৪০ শতাংশেরও বেশি ভারত থেকে আসে। ২০২২ সালে দেশটি ৫৬ মিলিয়ন টন চাল রফতানি করেছে। তবে, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ‍উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভারত থেকে চাল রফতানি কমতে পারে। পাশাপাশি ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে চালের রফতানি কমলে এই খাদ্যপণ্যের দাম আরও বাড়বে।


বিশ্বের বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ ভারতের চাল রপ্তানিকারকদের সংগঠন রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আরইএ) প্রেসিডেন্ট বি ভি কৃষ্ণ রাও রয়টার্সকে বলেছেন, ভারত বরাবরই সবচেয়ে কম দামে চাল রপ্তানি করে। কিন্তু গত প্রায় দেড় বছর ধরে চাল উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোতে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। ফলে চালের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।


এর ফলে কৃষকদের কাছ থেকে সরকারকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে এবং আমাদেরও রপ্তানিমূল্য বাড়াতে হচ্ছে।


বিশ্বে চাল উৎপাদনের পাশাপাশি রপ্তানিতেও শীর্ষে রয়েছে ভারত। প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজারে যত চাল কেনা-বেচা হয়, তার ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে এই দেশটি। ২০২২ সালে মোট ৫ কোটি ৬০ লাখ টন চাল রপ্তানি করে ভারত।


চাল বিশ্বের একমাত্র প্রধান খাদ্যশস্য, যেটি উৎপাদনের জন্য নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া ও মৌসুমী বৃষ্টিপাত অপরিহার্য। বিশ্বের সাড়ে তিন কোটিরও বেশি মানুষের প্রধান খাবার ভাত। প্রতি বছর বিশ্বে যে পরিমাণ চালের উৎপাদন হয়, তার ৯০ ভাগই হয় এশিয়ার বৃষ্টিবহুল অঞ্চলগুলোতে।


যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম এই মুহূর্তে চাল উৎপাদনে বিশ্বে শীর্ষে থাকা ৬টি দেশ। কিন্তু এল নিনো ধাঁচের আবহাওয়া, অনিয়মিত মৌসুমি বৃষ্টিপাত, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, খরাসহ বিভিন্ন কারণে গত বছর চালের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। বাজারে বর্তমানে চালের যে দাম, তা ইতোমধ্যে গত ১১ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।


ভারতীয় চালের দাম বেড়ে যাওয়াই এই উল্লম্ফণের প্রধান কারণ। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বাজারবিষয়ক সূচক বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চলতি জুলাই মাসে চালের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ। গত মাসে এই মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশ।


ভারতের চাল উৎপাদনকারী রাজ্যগুলোর বেশিরভাগ জমি দুই ফসলী। অর্থাৎ বছরে দু’বার ধান চাষ করা যায় জমিগুলোতে। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিভিত্তিক বাজার বিশ্লেষক সংস্থা গ্লোবাল ট্রেডিং হাউসের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ও বৈরী আবহাওয়া পরিস্থিতির কারণে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দেশটিতে গত বছর ২৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে গ্রীষ্মকালীন চালের উৎপাদন।


এদিকে, চালের উৎপাদন হ্রাস পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে বেগ পেতে হচ্ছে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে। কারণ সামনের বছরই দেশটিতে লোকসভা নির্বাচন এবং খাদ্যশস্যের দাম যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে নির্বাচনে।


নয়াদিল্লির একজন ডিলার রয়টার্সকে বলেছেন, বর্তমানে অভ্যন্তরীণ বাজারে চাল-গমের দাম নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাচ্ছে সরকার। যদি পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়, সেক্ষেত্রে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারে।


পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক থাইল্যান্ডেও গত বছর চালের উৎপাদন ২৫ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। একই কারণে চতুর্থ বৃহত্তম চাল রপ্তানিকারক দেশ ভিয়েতনামেও চালের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।


চাল উৎপাদনে শীর্ষে থাকা অপর দেশ চীন ইতোমধ্যে অভ্যন্তরীণ বাজার স্থিতিশীল রাখতে রপ্তানির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। নয়াদিল্লির ওই ডিলার জানিয়েছেন, চলতি বছর মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান এবং ভিয়েতনাম থেকে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টন চাল বিশ্ববাজারে আসতে পারে। তবে ভারত ও চীনের যোগান যদি না বাড়ে, সেক্ষেত্রে এই চার দেশ থেকে আসা শস্য আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমাতে খুব কার্যকর হবে না।


অন্যদিকে, চীনকে অনুসরণ করে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনও আন্তর্জাতিক বাজারে চাল সরবরাহের পরিবর্তে মজুতের দিকে বেশি মনযোগী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের একজন শীর্ষ চাল রপ্তানিকারক।


তিনি বলেন, একসময় আন্তর্জাতিক চালের বাজারে ক্রেতাদের প্রাধান্য ছিল। এখন বিক্রেতাদের প্রাধান্য বাড়ছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com