শিরোনাম
তুরস্কের পত্রিকায় খাসোগি হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা!
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:৪৫
তুরস্কের পত্রিকায় খাসোগি হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সাংবাদিক জামাল খাসোগি সৌদি আরবের রাজপরিবারের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গত বছরের ২ অক্টোবর ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক জামাল খাসোগি তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে খুন হন। খবর ডেইলি সাবাহর।


সাংবাদিক জামাল খাসোগির সঙ্গে শেষ মুহূর্তে কী ঘটেছিল, তার একটি অডিও রেকর্ড তুরস্কের গোয়েন্দা বাহিনী প্রকাশ করেছে। সৌদি কনস্যুলেটে জামাল খাসোগির সঙ্গে কী ঘটেছিল, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তুরস্কের দৈনিক সাবাহ।


এতে বলা হয়, খাসোগিকে হত্যা করে কীভাবে তার দেহ কনস্যুলেটের বাইরে নেয়া হবে, সেসব বিষয় উঠে এসেছে ওই অডিওতে। মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে খাসোগিকে হত্যা ও তার দেহ টুকরো টুকরো করা হয়।


‌‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’- এটিই ছিল সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগির শেষ কথা।


দৈনিকটি গোয়েন্দা অডিওর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলেছে, খাসোগি কনস্যুলেটে ঢোকামাত্রই পরিচিত এক ব্যক্তি তাকে অভ্যর্থনা জানান ও একটি কক্ষে নিয়ে যান। অভ্যর্থনা জানানো ওই ব্যক্তির নাম মেহের আবদুল আজিজ মুতরিব। মেহের আবদুল আজিজ একজন জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা সদস্য ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের দেহরক্ষী।


মেহের খাসোগিকে বলেন, ‘বসুন খাসোগি। আপনাকে সৌদিতে ফেরত নেয়া হবে। ইন্টারপোল আমাদের এ নির্দেশ দিয়েছে। ইন্টারপোল চায়, আপনি ফিরে যান। তাই আপনাকে নিতে আমরা এখানে এসেছি।’ প্রত্যুত্তরে খাসোগি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। আমার হবু স্ত্রী বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন।’


এরপর মুতরিব খাসোগিকে একটি বার্তা লিখে দেয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। মুতরিব খাসোগিকে বলেন, ‘আপনার ছেলের কাছে এই কথাগুলো লিখুন, যদি আমার (খাসোগির) সঙ্গে যোগাযোগ না করতে পারো, তা হলে চিন্তা করো না।’


খাসোগি ওই বার্তা লিখতে অস্বীকৃতি জানালে মুতরিব তাকে বলেন, ‘আমি বলছি- এটি লিখুন জনাব খাসোগি। দ্রুত এটি লিখুন। আমাদের সাহায্য করুন, তা হলে আমরাও আপনাকে সাহায্য করতে পারব। কারণ শেষমেশ আমরা আপনাকে সৌদিতে ফিরিয়ে নেবই। আর যদি আমাদের সাহায্য না করেন, তা হলে কী ঘটবে তা বুঝতেই পারছেন।’


এরপর খাসোগিকে টেনে নেয়ার শব্দ শোনা যায়। চেতনা হারানোর আগে খাসোগির শেষ কথা শোনা যায়, ‘আপনারা কী করছেন। আমার হাঁপানির সমস্যা আছে। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’


এর মধ্যেই খাসোগির মাথায় একটি প্লাস্টিক ব্যাগ পরিয়ে দেয়া হয়। এরপর ওই অডিওতে বেশ কিছুক্ষণ ধস্তাধস্তির শব্দ পাওয়া যায়। এ সময় চারপাশ থেকে হত্যাকারী দল খাসোগিকে মাঝে মাঝে বেশ কিছু প্রশ্ন করতে শোনা যায়।


খাসোগি ওই কনস্যুলেটে ঢোকার আগেই মেহের আবদুল আজিজ মুতরিব কাউকে প্রশ্ন করেন, ‘পুরো দেহ কি কোনো ব্যাগের মধ্যে ঢোকানো যাবে?’ এর প্রত্যুত্তরে সালাহ মোহাম্মদ আবদাহ তুবাইগি নামে খ্যাতিমান সৌদি ফরেনসিক চিকিৎসক বলেন, ‘না, খুব ভারী হবে। খাসোগি অনেক লম্বা।’


এ সময় আবদাহ তুবাইগিকে বলতে শোনা যায়, ‘যদিও আমি মৃতদেহের ওপর ছুরি চালাই। তবে আমার কাজে আমি খুব দক্ষ। কাজ শেষে আপনারা বিচ্ছিন্ন অংশগুলো প্লাস্টিকে মুড়ে স্যুটকেসে ঢুকিয়ে বাইরে নিয়ে যাবেন।’


প্রথমদিকে খাসোগিকে হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করে সৌদি আবর। তবে শেষে তারা স্বীকার করে, কনস্যুলেটের মধ্যে কিছু লোকের সঙ্গে খাসোগির হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত হন তিনি।


যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ বলেছে, খাসোগি হত্যার ঘটনা সৌদি যুবরাজ সালমানের আদেশেই ঘটেছে। তবে সৌদি কর্তৃপক্ষ সবসময় এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ ছাড়া খাসোগির দেহ নিয়ে সৌদি কী করেছে, তা এখনও জানায়নি দেশটি।


খাসোগির হত্যায় সৌদি কর্তৃপক্ষ ১১ ব্যক্তিকে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যদিও তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com