পাবনা বেড়ায় এলএমএএফপি ডিগ্রি নিয়ে নিজ বাড়িতে চেম্বার খুলে বসেছেন সর্বরোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. সুদেব বিশ্বাস। শুধু চিকিৎসাই দেন না, তিনি ভর্তি রাখেন রোগী। চেম্বারকে বানিয়ে ফেলেছেন মিনি হাসপাতাল। নিয়মবহির্ভূতভাবে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চমক দেখিয়ে গ্রামীণ গরিব রোগীদের চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে নগরবাড়ি ১০ শয্যা বিশিষ্ট বাসন্তি বসু স্মৃতি হাসপাতালের সামনে ডা. সুদেব বিশ্বাস নিজ বাড়িতে ‘জনসেবা চিকিৎসালয়’ নামে চেম্বার খুলে দীর্ঘদিন যাবৎ রোগী দেখে আসছেন। তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে আসছেন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা। সুদেব নিজেকে ডা. পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এতে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ।
জ্বর নিয়ে কোন রোগী চেম্বারে আসলেই ডেঙ্গু রোগী বলে ভর্তি রাখেন তার হাসপাতালে। চেম্বারের ভিতরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। রোগীদের ভর্তি রাখার জন্য পাঁচ-ছয়টি বেড (সিট) রয়েছে। রোগী প্রতি ভিজিট নেন তিনশত টাকা। নিজে ওষুধ লিখে নিজ চেম্বার থেকেই ওষুধ বিক্রি করেন ।
ডা. সুদেব বিশ্বাসের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসা ময়সার আলী বিবার্তাকে জানান, আমি লোকমুখে শুনে চরকল্যাণপুর থেকে জ্বর নিয়ে ডাক্তার দেখাতে আইছি। ডা. সাহেব নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাকে বলেছেন আমার ডেঙ্গু হয়েছে। তাই আমাকে ভর্তি করে স্যালাইন দিছে। আমার তো মনে হয় না আমার ডেঙ্গু হইছে। এহানে আইসাই তো ফাইসা গেলাম।
নগরবাড়ি বাসুন্তিপুরের বাসিন্দা আজগর আলী বিবার্তাকে জানান, পাশের সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায় না। এজন্য বাধ্য হয়ে মানুষ এই পল্লী চিকিৎসকের চিকিৎসা নেন। এখানে যে কোন রোগী আসলেই এই ডা. তাকে কোন রকম পরীক্ষা ছাড়াই স্যালাইন দিয়ে বেডে শুইয়ে রাখে। তবে ডা. সুদেব বিশ্বাসের চেম্বারে প্রচুর রোগী আসেন বলে জানান তিনি।
পল্লী চিকিৎসক ডা. সুদেব বিশ্বাস বিবার্তাকে বলেন, আমি বিধি মোতাবেক রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছি। পল্লী চিকিৎসক হয়েও ডাক্তার পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মানুষকে ভালো সেবা দেই, তাই আমাকে সবাই ডা. বলে ডাকে। আমার মত অনেক পল্লী চিকিৎসক ডাক্তার পরিচয় দেয়, আমি দিলে সমস্যা কি! পল্লী চিকিৎসক হিসেবে তার বৈধ কাগজপত্র সম্পর্কে জানতে এবং দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে অপরাগতা প্রকাশ করে সাংবাদিককে গালিগালাজ করেন। গালাগালির এক পর্যায়ে তিনি সংবাদিককে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন।
স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এই ভুয়া পল্লী চিকিৎসকরা বিভিন্নভাবে সাধারণ রোগীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে এবং প্রতারণা বন্ধের জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ওপর জোর দাবি জানান তারা। স্থানীয়রা আরও জানান, কিভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে অনুমোদন ছাড়াই চেম্বারকে হাসপাতাল বানিয়ে নিয়েছেন তিনি!
উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পল্লী চিকিৎসকরা এমন অনিয়ম করলেও সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে সচেতন মহলের দাবি।
এই বিষয়ে একাধিক ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পল্লী চিকিৎসকদের জন্য টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের গিফট দেয়া হয়। এজন্যই তারা আমাদের কোম্পানির ওষুধ লিখে দেন রোগীদের। আর এই গিফট দিয়ে ওষুধ লিখিয়ে নেওয়ার জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা নিয়ে মার্কেটে কাজ করতে হয় আমাদের।
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা ইউএই এন্ড এফপিও ডা. ফাতেমা তুয জান্নাত বিবার্তাকে বলেন, এলএমএএফপি এটা কোন ডিগ্রির মধ্যেই পরে না। কমপক্ষে এমবিবিএস ছাড়া কেউ নামের সাথে ডাক্তার লিখতে পারে না। ওই পল্লী চিকিৎসকের বিষয়ে আমি শুনেছি। আমি ইউএনও মহোদয়ের সাথে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিব।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোরশেদ ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, এ উপজেলায় আমি নতুন যোগদান করেছি। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
বিবার্তা/রোমেল/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]