নবজাতক ও মায়ের মৃত্যু
ডাক্তারদের গাফিলতি স্বীকার করল সেন্ট্রাল হাসপাতাল
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৩, ১৫:১১
ডাক্তারদের গাফিলতি স্বীকার করল সেন্ট্রাল হাসপাতাল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

নবজাতক ও মা মাহবুবা রহমান আঁখির চিকিৎসায় নিজেদের গাফিলতির কথা স্বীকার করেছেন সেন্ট্রাল হাসপাতালে সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর ডাক্তার এ টি এম নজরুল ইসলাম। সোমবার (১৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২টায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে একইসঙ্গে আঁখির মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশও করেছেন তিনি।


নজরুল ইসলাম বলেন, আঁখির চিকিৎসায় হাসপাতালের অবশ্যই গাফিলতি ছিল। গাফিলতি ছিল প্রথমত ডা. সংযুক্তা সাহার, তারপর ওটির চিকিৎসকদের, কারণ সে সময় তারা সিনিয়র ডাক্তারদের ডাকেননি। আমরা এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন আসার কথা। ইতোমধ্যে ৫ দিন চলে গেছে, আর বাকি আছে ২ দিন। আসা করছি এ সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা সম্ভব হবে।


এদিকে, রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত সেন্ট্রাল হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলসহ মাহবুবা রহমান আঁখির পরিবারকে ২ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেবার দাবি জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা।
সকালে সেন্ট্রাল হাসপাতালের সামনে মানববন্ধনে এ কথা জানান তার সহপাঠীরা। এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আঁখি ও তার নবজাতক সন্তানের মরদেহ ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া চলছে।
সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের পর মা মাহমুদা রহমান আঁখি রোববার (১৮ জুন) দুপুর ২টার দিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় মারা যান। আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।


গত ৯ জুন প্রসব ব্যথা উঠলে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে মাহবুবা রহমান আঁখিকে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেই সময় ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না, তবুও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, তিনি আছেন এবং অপারেশন থিয়েটারে কাজ করছেন। একপর্যায়ে আঁখি সেন্সলেস হয়ে যান। এমন অবস্থায় ডেলিভারি করলে হার্টবিট বন্ধ হয়ে আইসিউতে মারা যায় নবজাতকটি। এমন ঘটনার পর আঁখিকে সেন্ট্রাল হাসপাতাল থেকে ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ল্যাবএইডের চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছিল না। এরমধ্যে ব্রেন স্টোকও করেন আঁখি। তার সাথে রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছিল না।
সেন্ট্রাল হাসপাতালের এ ঘটনায় চিকিৎসক ও নার্সসহ ১১ জনকে বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।


এ ছাড়া বুধবার (১৪ জুন) ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু এবং মা মৃত্যুঝুঁকিতে পড়ার ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা করা হয়। মামলায় ডা. শাহজাদী, ডা. মুনা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। মামলার পর বুধবার রাতেই ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদফতর গঠিত পরিদর্শন টিম গত শুক্রবার (১৬ জুন) বিকেলে হাসপাতালটি পরিদর্শন করে। পরে সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। সেই সঙ্গে গাইনি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহা হাসপাতালটিতে আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা দিতে পারবেন না বলেও জানানো হয়। আর আঁখির চিকিৎসার ব্যয়ের কথা বলা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com