বিএসএমএমইউয়ে সফল লিভার প্রতিস্থাপন
প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:৪৩
বিএসএমএমইউয়ে সফল লিভার প্রতিস্থাপন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সফলভাবে লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। গত ১ জানুয়ারি বগুড়ার লিভারের রোগী মো. মন্তেজার রহমানের (৫৩) দেহে এ অস্ত্রোপচার করা হয়। তিনি নন-বি, নন-সিজনিত ‘এন্ড স্টেজ লিভার ডিজিজে’ আক্রান্ত ছিলেন।


রবিবার (১৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‘মুজিব শতবর্ষ লিভার ট্রান্সপ্লান্ট প্রোগ্রাম’ এর অংশ হিসেবে সফল লিভার প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান তিনি।


মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, লিভার দানকারী শামীমা আক্তারের দেহ থেকে সুস্থ লিভারের ৬০ শতাংশ কেটে ফেলা হয়। মন্তেজার রহমানের সিরোটিক লিভারের পুরোটাই কেটে বের করে ফেলা হয়। পরে শামীমা আক্তারের দেহ থেকে কেটে নেওয়া সুস্থ লিভারের ৬০ শতাংশ জোড়া দেওয়া হয়। লিভার দাতা শামীমা আক্তারের লিভারটি ধীরে ধীরে রি-জেনারেট করবে। এটি লিভার নামক অঙ্গটির একটি বিশেষত্ব। মন্তেজার রহমান নন-বি, নন-সি জনিত ‘ইন্ড স্টেজ লিভার’ ডিজিজে আক্রান্ত ছিলেন।


উপাচার্য বলেন, দেশের স্বল্প আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে এই চিকিৎসা সুবিধা পেতে পারে এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক-নির্দেশনায় হাসপাতালে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন কার্যক্রমের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বছরের প্রথম দিনের লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন অপারেশনটি ছিল একটি গিভিং ডোনার লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন, এর অর্থ হলো রোগীর আত্মীয় সম্পর্কিত কোনো ডোনার থেকে লিভারের একটি অংশ কেটে রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয় (রোগীর সিরোটিক লিভারের পুরোটিই কেটে ফেলা হয়)।


শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক ৮০ লাখ রোগী লিভার সংক্রান্ত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে অন্যতম ‘ইন্ড স্টেজ লিভার ডিজিজ’ যা হলো ক্রনিক প্রদাহ জনিত লিভারের শেষ অবস্থা, যেখানে লিভার তার কার্যক্ষমতা হারায়। সাধারণত হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই ভাইরাস সংক্রমণ অথবা লিভারে অতিরিক্ত চর্বিজনিত প্রদাহ থেকে লিভার টিস্যুর পরিবর্তন শুরু হয়, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক লিভার টিস্যুর পরিবর্তন হয়ে সিরোটিক লিভার টিস্যু তৈরি হয়।


তিনি বলেন, সিরোটিক লিভার টিস্যু স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে অক্ষম। যখন রোগীর লিভারের একটি বড় অংশ সিরোটিক হয়ে যায় তখন আমরা বলি রোগীটি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত। এই লিভার সিরোসিসের শেষ পর্যায় হচ্ছে ইন্ড স্টেজ লিভার ডিজিজ। এর একমাত্র চিকিৎসা লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন। এছাড়াও লিভারের আরও কিছু রোগ রয়েছে, যেমন লিভারের কোনো একটি অংশে লোবে ক্যান্সার (হেপাটোসেলুলার ক্যান্সার), বাচ্চাদের ক্ষেত্রে লিভারের জন্মগত ত্রুটি (বিলিয়ারি এট্রেশিয়া, মেটাবোলিক ডিজিজ ইত্যাদি) এর চিকিৎসাও লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন।


অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমাদের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ বিভিন্ন হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জনসংখ্যার মাত্র ৫-১০ শতাংশ এ ভাইরাসের জন্য টিকা নিয়েছে। যা অত্যন্ত অপ্রতুল। ফলে হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রান্ত রোগব্যাধী বেড়েই চলেছে।


তারা বলেন, প্রতিবছর বাংলাদেশে আনুমানিক ৪-৫ হাজার রোগীর লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন চিকিৎসা প্রয়োজন। দেশে আগে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর রোগীদের একটি বিশাল অংশ দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য চলে যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশসহ বহির্বিশ্বে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। ফলে দেশের স্বল্প আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এ চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত।


জানা যায়, অপারেশনে লিভার গ্রহীতার পক্ষে ছিলেন অধ্যাপক মো. মোহছেন চৌধুরী, অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র দাস, অধ্যাপক, ডা. আবদুল্লাহ মো. আবু আইয়ূব আনসারী, সহকারী অধ্যাপক এবং ডা. সারওয়ার আহমেদ সোবহান। লিভার দাতার পক্ষে ছিলেন- অধ্যাপক মো. জুলফিকার রহমান খান, অধ্যাপক ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান, ডা. মো. নূর ই এলাহী, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাইফ উদ্দীন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশীষ সাহা।


বিবার্তা/রিয়াদ/এসএফ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com