জুলাই সনদের আইনি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৫, ২২:০৮
জুলাই সনদের আইনি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের তৃতীয় ধাপের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো নিয়ে তৈরি করা জুলাই সনদের আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত এবং বাস্তবায়ন পদ্ধতি কী হবে তা নিয়ে এবার প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। সেখানে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সুপ্রিম কোর্টের মতামত, গণভোট বা অধ্যাদেশ জারির পরামর্শ এসেছে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে।


রোববার (১০ আগস্ট) জাতীয় সংসদ এলডি হলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকে করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।


বৈঠকে পর কমিশনের সহ সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আমরা এমন একটি টেকসই ও শক্তিশালী পথ অনুসন্ধান করছি, যার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। আজ বিভিন্ন বিকল্প আলোচনা হয়েছে, তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আমরা সব বিকল্প ও তাদের প্রভাবগুলো গভীরভাবে পর্যালোচনা করতে চাই।


বৈঠকে আইন বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন– সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিশনের এক সদস্য জানান, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একটি অংশ জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আর্টিকেল ১০৬ এর আওতায় রেফারেন্স চাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা মনে করেন, ৫ আগস্টের পর থেকে দেশ একটি নতুন সাংবিধানিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করেছে এবং সুপ্রিম কোর্ট তা অগ্রাহ্য করতে পারবেন না।


বিশেষজ্ঞদের আরেকটি অংশের পক্ষ থেকে প্রস্তাবের এসেছে– রেফারেন্ডামের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের। তবে, অনেকেই মনে করেন, এটি রাজনৈতিকভাবে জটিল হবে। কারণ, এতে সবাই একমত নাও হতে পারেন। এছাড়াও বর্তমানে অধ্যাদেশের পরিধি বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান খোঁজা যেতে পারে বলে প্রস্তাব এসেছে।


কিছু বিশেষজ্ঞ সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে সংবিধান সভা গঠনের কথাও আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার (এলএফও) সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে, যার ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনা করা নেওয়ার পরামর্শ এসেছে।


অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, এটি মূলত প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা ছিল। আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত শুনেছি এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত আইনি পথ নির্ধারণের চেষ্টা করছি। আমরা আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব, আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয়ভাবে, যাতে সব বিকল্প যাচাই করা যায়।


তিনি বলেন, এখন আমরা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করছি না, কারণ আমাদের প্রথমে একটি আইনি পথ নির্ধারণ করতে হবে। পরে প্রয়োজন হলে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা হবে।


কমিশনের সূত্র বলছে, সোমবার (১১ আগস্ট) জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কোনো আইন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে বৈঠক করবে না। রোববারের বৈঠকে যেসব মতামত এসেছে সেগুলো নিয়ে কমিশনের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত এবং পরবর্তী আলোচনার সূচি নির্ধারণ করবে।


জাতীয় ঐকমত্য কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত। এটি গত বছরের অক্টোবর মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের ওপর রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিশনগুলো ছিল সংবিধান, নির্বাচনী ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি প্রতিরোধ, প্রশাসন ও পুলিশ সংস্কার।


জাতীয় ঐকমত্য কমিশন প্রথম ধাপে ৩২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৪৪টি বৈঠক করে। সেখানে ১৬৬টির মধ্যে ৬২টি প্রস্তাবে সম্মতি পায় কমিশন। দ্বিতীয় ধাপে ৩০টি দলের সঙ্গে ২৩টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আলোচ্য ১৯টি বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে।


দ্বিতীয় ধাপে সম্মত বিষয়ের মধ্যে রয়েছে– সংসদের স্থায়ী কমিটির সভাপতি বিরোধী দল থেকে নির্বাচন করা, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতায় ক্ষমা প্রদানের বিধান, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সংবিধান সংশোধনী, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, নির্বাচন কমিশন গঠন, পুলিশ কমিশন গঠন এবং নাগরিক মৌলিক অধিকারের সম্প্রসারণ।


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com