
অবরুদ্ধ গাজায় অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগে আরও ১১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে, জানিয়েছে ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এই নিয়ে গাজায় অনাহারজনিত মৃত্যু ২১২-তে দাঁড়িয়েছে, এদের মধ্যে ৯৮ জন শিশু।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়টি আরও জানায়, শনিবার গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা শুক্রবার বলেছে, গাজায় যে পরিমাণ ত্রাণ প্রবেশ করছে তা ‘লোকজনের প্রয়োজ মেটানোর জন্য ন্যূনতম প্রয়োজেনের চেয়ে অনেক কম’।
বিবিসি জানিয়েছে, গাজায় কোনো অনাহার থাকার কথা ইসরায়েল অস্বীকার করে বলেছে, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সীমান্ত থেকে ত্রাণ নিয়ে বিতরণ করছে না।
যে অল্প ত্রাণ ছিটমহলটিতে প্রবেশ করতে সেগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করতে গিয়ে আবার লোকজনকে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে প্রাণ দিতে হচ্ছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে ২১ জন নিহত হয়েছেন।
মে মাসের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত নতুন সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ছিটমহলটিতে অনেকগুলো ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করে। তারপর থেকে জিএইচএফের এসব কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ১৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি প্রধানত ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে এবং কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রগুলোর পাহারাদার মার্কিন ভাড়াটে রক্ষীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ বলেছে, এদের মধ্যে অধিকাংশই নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে, ৮৫৯ জন জিএইচএফের কেন্দ্রগুলোতে ও ৫১৪ জন ত্রাণবহরগুলোর রুটগুলোতে। জিএইচএফ জাতিসংঘের এই পরিসংখ্যান প্রত্যাখ্যান করেছে।
আর ইসরায়েল অভিযোগ করে বলছে, ত্রাণ কেন্দ্রগুলোর কাছে হামাস বিশৃঙ্খলা উসকে দিচ্ছে। তাদের বাহিনীগুলো ‘ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিকদের ওপর গুলি ছোড়ে না’ বলে দাবি করেছে দেশটি।
কিন্তু তাদের এসব দাবি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ইসরায়েল গাজায় বিবিসি বা অন্য কোনো সংবাদ সংস্থাকে স্বাধীনভাবে সংবাদ সংগ্রহের অনুমতি দিচ্ছে না।
ইসরায়েল বিতর্কিত এক পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে তারা গাজার প্রধান শহর গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেবে বলে জানিয়েছে। আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে বাসিন্দাদের শহরটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য তারা চূড়ান্ত সময়সীমা নির্ধারণ করছে বলে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে জানা যাচ্ছে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা এই নতুন পরিকল্পনা অনুমোদন করে শুক্রবার এর বিস্তারিত প্রকাশ করেছে। এই পরিকল্পনায় গাজা যুদ্ধ শেষ করার পাঁচটি ‘মূলনীতি’ অনুমোদন করেছে তারা। তার মধ্যে গাজার ‘নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ’ নেওয়া অন্যতম।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলোর তথ্য বলছে, নিরাপত্তা পরিষদ গাজা দখলের যে পরিকল্পনা নিয়েছে, তাতে প্রাথমিকভাবে পুরো গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দিকেই মনোযোগ দেওয়া হবে, সেখানকার আনুমানিক ১০ লাখ বাসিন্দাকে আরও দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি মধ্য গাজার শরণার্থী শিবির এবং যেসব এলাকায় জিম্মিরা আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, সেগুলোও সেনা নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
কয়েক সপ্তাহ পর মানবিক সহায়তা জোরদারের পাশাপাশি দ্বিতীয় আরেকটি সামরিক অভিযান হবে।
এসব পরিকল্পনা ইসরায়েলের ভেতরেও তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। সামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি গাজায় আটক জিম্মিদের পরিবারের অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গেলে এখনও জীবিত আছে বলে ধারণা করা ২০ ইসরায়েলি জিম্মির জীবন ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
ইসরায়েলে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যেই গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বেড়ে চলেছে। গত প্রায় ২২ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ৬১৩০০ জনেরও বেশি।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]