'বিধ্বস্ত বিমানটি পুরোনো নয়, রক্ষণাবেক্ষণে কোনো আপস করি না'
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ১৯:০৭
'বিধ্বস্ত বিমানটি পুরোনো নয়, রক্ষণাবেক্ষণে কোনো আপস করি না'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেছেন, বাংলাদেশ বিমানবাহিনী যুদ্ধবিমানের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে কোনো আপস করে না।


বিধ্বস্ত বিমানটি পুরোনো নয় বলেও দাবি করেছেন তিনি।


রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বিমান বাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন কথা বলেছেন।


এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, 'গতকাল দুপুর ১টা ১৩ মিনিটে আমাদের যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণের সময় বিধ্বস্ত হয়েছে রানওয়ের নিকটে। ক্র্যাশ সাইটটা ছিল মাইলস্টোন স্কুলের একটা বিল্ডিং যেখানে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী এবং শিশুসহ শিক্ষক এবং অনেকে নিহত হয়েছেন।'


'যারা ওখানে ছিল তাদেরকে আমরা যত দ্রুত সম্ভব উদ্ধার করে হেলিকপ্টার ব্যবহার করে এবং ফাস্ট রেসপন্ডার হিসেবে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর উদ্ধারকর্মীরা গিয়েছিল। ফায়ার ব্রিগেডও তাতে রেসপন্ড করেছিল এবং আমরা যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি,' বলেন তিনি।


বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, 'বিমানটা যখন পাইলটের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল তিনি তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন বিমানটাকে খালি জায়গায়, বিশেষ করে ওই মাঠটাই পেয়েছিল যেখানে তিনি নামানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তারপরেও তার শেষ চেষ্টা সফল হয়নি।'


তিনি বলেন, 'বিমানটা আছড়ে পড়েছিল ওই বিল্ডিংয়ের উপরে। কিন্তু তিনি নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্যে বা বিমানটাকে সঠিক দিক নির্দেশনায় যাওয়ার জন্য যে মূল্যবান সময় দিয়েছেন, তার জন্যে ইজেকশন বা বিমান থেকে বের হওয়ার সময় বিলম্বিত হয়ে যায় এবং তিনি তার নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।'


তিনি আরও বলেন, 'গতকাল থেকেই দেশের এই বিপদের সময় আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টারা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, চিকিৎসকবৃন্দ, ফায়ারসার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবী, বিভিন্ন সেবাদানকারী সংস্থা, সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাধারণ জনগণ কাঁধে কাধ মিলিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে।'


বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, 'ইতোমধ্যে গতকাল আমরা একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছি। তারা অতি শিগগির তদন্ত করে বের করবে যে কী ঘটনা ঘটেছিল এবং তার ভিত্তিতে যদি কোনো ভুলত্রুটি থাকে, অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।'


তিনি বলেন, 'আমি বিশেষ অনুরোধ করতে চাই দয়া করে আপনারা দেশের এই বিপদের সময় সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন গুজব-মিসইনফরমেশনে কান দেবেন না। আমি সফরে বেরিয়েছিলাম, জরুরি সফর ছিল। কিন্তু আমি বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি ফিরে এসেছি আজ সকালে।'


'প্রতিদিন যখনই আমাদের কাছে কোনো আপডেট আসে, আহত-নিহত সেটা আমরা সাথে সাথে আইএসপিআরের মাধ্যমে আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি। এখানে লুকানোর বা গোপন করার কোনো বিষয় নেই,' বলেন তিনি।


এক প্রশ্নের জবাবে এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান বলেন, 'যুদ্ধবিমান সাধারণত সহজে পুরোনো হয় না। প্রতিটি বিমানের একটা লাইফ লাইফটাইম আছে। এই বিমানগুলোর প্রায় ৩০ বছর পর্যন্ত লাইফ সাইকেল থাকে। এক যুগ দুই যুগ না, ব্যাপারটা হচ্ছে আমরা এটাকে ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছি কিনা। আমি আশ্বস্ত করতে চাই যে বিমানের ক্ষেত্রে আমরা কোনো কম্প্রোমাইজ করি না রক্ষণাবেক্ষণে। আমরা যে দেশ থেকে বিমান ক্রয় করি সে দেশ থেকে আমরা রক্ষণাবেক্ষণের সব প্রযুক্তি এবং দরকার হলে যা যা প্রয়োজন হয় সেটাও আমরা তাদের সঙ্গে চুক্তি করে নিই।'


'প্রযুক্তিগতভাবে এই বিমানগুলো পুরোনো হয়েছে, কিন্তু এই বিমান পুরোনো না। এখন আমরা নতুন প্রযুক্তির বিমানের জন্য অবশ্যই চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে নতুন প্রযুক্তির বিমান আনব। তার মানে এই না যে ওটাও অ্যাক্সিডেন্ট হবে না। আসল কথা হলো আমরা এই বিমানগুলো যথাসম্ভব ভালোভাবে মেরামত করি। যা যা মেইনটেন্যান্স প্রয়োজন, সেগুলো করি,' বলেন তিনি।


দুর্ঘটনা বিষয়ক আরেক প্রশ্নের জবাবে বিমান বাহিনী প্রধান বলেন, 'তদন্তের আগে কোনো ধারণার কথা বলা ঠিক হবে না। তবে এটা একটা সিঙ্গেল ইঞ্জিন বিমান। ইঞ্জিনের অনেক টেকনিক্যাল প্রবলেম হতে পারে—পাখির আঘাত হতে পারে, অন্য কিছু হতে পারে। তদন্ত করতে একটু সময় লাগবে আপনাদের ধৈর্য ধরতে হবে।'


তিনি বলেন, 'প্লেনের যত ঘণ্টা থাকার কথা, ওই ইঞ্জিনের তত ঘণ্টার এক ঘণ্টাও বেশি আমরা ফ্লাই করি না। এটার যা যা রিপেয়ার করার কথা, সেটা আমরা সম্পূর্ণভাবে করি। কিন্তু বিকল যখন হবে সেটা বলে কয়ে হয় না। সেটা কখন হবে সেটা আমরা বলতে পারি না।'


ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রশিক্ষণের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে এমন জায়গা খুঁজে বের করলেও পাশে আবার ঘনবসতি হয়। এখানে যখন বিমানবন্দর হয়েছিল আমি যখন প্রথম এখানে ১৯৮৫ সালে ফ্লাই করেছিলাম তখন এই ওদিকে কিছুই ছিল না, উত্তরা বলতে কিছু ছিল না। এটার সঙ্গে ঘনবসতির সম্পর্ক করা ঠিক না। আমাদের দেশ ছোট, সব জায়গায় মানুষ। এটা (কুর্মিটোলা) আমাদের মেইন বেইজ, সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট জায়গা এটা। ভিআইপিরা এখানে থাকে, আমাদের স্থাপনা এখানে, পার্লামেন্ট এখানে। একটা প্রটেকশনের ব্যাপার আছে—এখানে একটা স্ট্রং এয়ারবেজ থাকা খুবই দরকার।'


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com