কিছুক্ষণ আগে শান্তিনগর পপুলারে ইটিটি (এমবুলেটরি ইসিজি) পরীক্ষা করতে গেলাম। দেখলাম ডাক্তার আসর বসিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে। কে নাকি আলহামদুলিল্লাহ বলে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। আর্মির এতজন পদত্যাগ করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। চেহারা দেখেই বুঝেছি জামাতি।
নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'গুজব ছড়াচ্ছেন কেন? একজন মানুষ সারা জীবনের সঞ্চয়, পেনশনসহ সব সুযোগ সুবিধা ছেড়ে কেন পদত্যাগ করবে? জামাতি প্রোপাগান্ডা কেন ছড়াচ্ছেন?...'
আমার মতো মুমূর্ষু রোগী তাকে ধমক দিচ্ছে , সে বোধহয় নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না! ঘ্যান ঘ্যান বাহানা দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
এই হচ্ছে অবস্থা। ১৬+ বছর ক্ষমতায় থেকেও অনলাইনে এবং তার প্রভাবে অফলাইনে আওয়ামী লীগ একটি অসম যুদ্ধ মোকাবেলা করছে। একবার এক লাখ সাইবার যোদ্ধা তৈরির গল্প শুনেছিলাম। এবারের নির্বাচনেও ১ লক্ষ ২৪ হাজার, মতান্তরে ১ লক্ষ ২০ হাজার সাইবার পীর মাশায়েখগণ কাজ করেছে বলে শুনেছি। এছাড়া শেখ হাসিনা বিরোধীরাও স্রোতে গা ভাসিয়ে নির্বাচনি প্রচার করেছে। ওনারা কোথায়? কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ও গুজব ছড়িয়ে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তখন ওনারা কোথায় ছিলেন? ৫০ হাজার এক্টিভিস্ট সক্রিয় থাকলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেত। সেটি হয় নি কারণ ডেডিকেটেড এক্টিভিস্টের অভাব।
অনলাইনে সবচেয়ে ব্যর্থ কোনো সংগঠন থাকলে সেটা অবশ্যই ছাত্রলীগ। এদের বেশিরভাগের এক্টিভিজম মানে সিনিয়র বা অনুসারীদের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো। ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা প্রকাশ্যে জানিয়ে দল, দেশ ও দশের কী উপকার হচ্ছে তারাই জানে। আবার এটাও হতে পারে কোনো ইস্যুতে লেখার মত মেধাটুকুও তাদের বেশিরভাগের নেই। অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অনলাইন এক্টিভিটিকে দলীয় কাজের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে বিবেচনা না করলে কী হয় তা বার বার প্রমাণিত হচ্ছে এবং হবে।
সাংগঠনিক সক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটি করতেও লাখ টাকার লেনদেন হওয়ার কথা শুনি। তথাকথিত আন্দোলনের সময় এসব নেতাকর্মীরা কোথায় থাকেন? সাংগঠনিক দক্ষতা না থাকলে তারা পদে থাকবে কেন? কোন বাড়ির কোন ছেলেটি গুজব ছড়াচ্ছে, অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদেরকে চিহ্নিত করা কী কঠিন কোনো কাজ? সরকার আন্দোলনকারীদের পক্ষে আদালতে লড়ছে - এটি তুলে ধরতে সকল ইউনিট কেন ব্যর্থ হলো?
আরেকটি গ্রুপের কথা না বললেই নয়। আওয়ামী লীগের হয়ে যারা প্রায় ঢাল তলোয়ার ছাড়াই '৭১-এর পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে তাদের কোনো পরিচিতি নেই। এই নিধিরাম সর্দাররা কখনো বিপদে পড়লেও উত্তরণের কারো সাহায্য পায় না। এই সরকারের আমলেই বিজামাতিদের বিরুদ্ধে কথা বলে অনেককে আইনি ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। কোনো ত্রাণকর্তা পাওয়া যায় নি। তারপরও কোন মোহে যেন তারা এক্টিভিজম ছাড়তে পারে না! এই শ্রেণীর এক্টিভিস্টদের সংখ্যা বাড়ে নি, বাড়ার কথাও নয়। কিন্তু এদেরকে অনেক দরকার।
আল্টিমেটলি এভাবে হবে না। আওয়ামী লীগে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। নেতৃত্বের শর্ত নির্ধারণ করতে হবে সোশ্যাল মিডিয়া লিটারেসি। সাবেক ছাত্রনেতা, দক্ষ সংগঠক এবং মেধাবী ও যোগ্যদের হাতে নেতৃত্ব দিতে হবে।
কান কথা শুনে যাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে তাদেরকে দলে আনতে হবে। যারা দূরে সরে আছেন, তাদেরকে দলে স্থান দিতে হবে। কঠিন সময় সম্মুখে। তবে শেখ হাসিনা চাইলেই সামাল দিতে পারবেন।
লেখক : আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল, তথ্য প্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট ও অনলাইন একটিভিস্ট।
(ফেসবুক ওয়াল থেকে)
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]