শিরোনাম
না বলা কথা
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:৩৯
না বলা কথা
মুক্তাদিউর রহমান শিমুল
প্রিন্ট অ-অ+

কয়েকদিন থেকে মনটা ভিষণ খারাপ ছিল। যে যেমন করে যাকে পাচ্ছে রাজনীতিতে চরিত্র হরণের খেলায় মেতে উঠেছে। আমিও সেই রোষানলের একজন।


আমার অপরাধ আমি যুবলীগ চেয়ারম্যানের ফলোয়ার। আর আমি মনে-প্রাণে রাজনীতি করতে চাই। এখন প্রশ্ন হতে পারে রাজনীতি করতে হলে চেয়ারম্যানের লোক হওয়া লাগবে? নেত্রীর লোক হও। কিন্তু সংগঠন করতে হলে সংগঠনপ্রধানের যে কোনো একজনের সাথে থেকে সাংগঠনিক কাজ করতে হয়। এটা সংগঠনের প্রাথমিক শিক্ষা। আর আওয়ামী রাজনীতিতে তো সবাই নেত্রীর লোক। অনেকেই যারা ভাইয়ের লোক মনে করেন। সেই ভাইও তো নেত্রীর লোক।


যুবলীগের অধিকাংশ নেতাই যখন সেফ জোনে চলে যাচ্ছে, তখনও আমি চেয়ারম্যান স্যারের পক্ষে থাকছি। আমার মতো চুনোপুঁটিকে নিয়ে যখন রাঘববোয়ালদের সাথে লেখা হচ্ছে তখন ভেবেই নিয়েছি এখান থেকে আমার বাঁচার পথ ক্ষীণ।আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করে যুবলীগের রাজনীতি শেষ করতে হবে। আমাকে যুবলীগের অনেকেই বলেছেন, তোমার রাজনীতি শেষ তোমাকে রাজনীতি করতে দেবে না। যদি পারো কয়েকজন সিনিয়র নেতার নাম বললেনতাদের সাথে গোপনে যোগাযোগ করো। তারা সবকিছু ঠিক করে দেবে।


সত্যি বলতে কি এতকিছু দেখে আমিও মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম আর রাজনীতি করা যাবে না। আমার রাজনীতি এখানেই মনে হয় শেষ করতে হবে। বন্ধু-বান্ধব আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি...। মন খারাপ করেই দুই তিন থেকে চুপচাপ বসে ছিলাম। কিন্তু আমি যা মনে করেছিলাম তা মিথ্যায় পরিণত হলো।


গতকাল ২৭ সেপ্টেম্বর, আমার জন্মদিন ছিল। আমি ধরেই নিয়েছিলাম আমার রাজনীতি মাটি হয়ে গেছে। আমাকে রাজনীতিতে জনবিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু আজ রাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রমাণ করলাম, আমার ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। আমি অপরাধী নই। আমাকে নিয়ে যা লেখা হয়েছে তা আমি নই। যদি তাই হতো হাজার হাজার ছাত্রলীগের সাবেক সহযোদ্ধা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধব আমাকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা দিত না, আমাকে নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিত না, আমাকে মোবাইলে শুভেচ্ছা দিত না। রাজনীতি করি বলেই তো এত কিছু পেয়েছি। তাদের ভালোবাসি বলেই তারা আমাকে ভালোবাসে। আমি মনে করেছিলাম এটা মনে হয় একপক্ষ ভালোবাসা। রাতে বাসায় এসে তিন দিন আগে মনে মনে নেয়া সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম।


পোস্ট না পেলে কি রাজনীতি করা যায় না। যারা আমাকে শুভেচ্ছা দিল, এত মানুষের সাথে সম্পর্ক, তাদের সাথে কি পোস্ট ছাড়া মিছিল-মিটিং করা যাবে না। দলীয় পোস্ট ছাড়াও রাজনীতি করা যায়। কষ্ট হবে তাই বলে কি রাজনীতি করা যাবে না। ছাত্রলীগে বড় পোস্ট না পেয়ে কি আমি রাজনীতি ছেড়ে দিয়েছিলাম? যে রোটন ভাই আমাকে পোস্ট দেয় নাই সেই রোটন ভাই এখন আমাকে বলে তোমাকে পোস্ট না দেয়া আমার ভুল ছিল। তার সাথে সম্পর্কের গভীরতা আরো মজবুত হয়েছে বরং অনেকেই আছে বড় বড় পোস্ট নিয়ে চলার পথ পরিবর্তন করেছেন। যারা মনে করছে পোস্ট না পেলে রাজনীতি ছেড়ে দেবে, তাদের কাছে সবিনয়ে বলতে চাই, আমি পোস্ট না পেলে রাজনীতি করব কিনা সেটা অতীতে প্রমাণ করেই রাজনীতি করছি। আপনি পোস্ট না পেলে টিকে থাকতে পারবেন তো? পোস্ট ছাড়াও রাজনীতি করা যায় আমি ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছি। আমি ছাত্রলীগের যতগুলো কর্মী তৈরি করেছি, পোস্ট না থাকলেও রাজনীতি করতে পারব।


মার্টিন লুথার কিং তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, আমি জানি, কিছু মানুষ তোমাকে পছন্দ করে না। ব্যাপারটা এমন নয় যে, তুমি তার কোনো ক্ষতি করেছ। তবু তুমি তার কাছে স্রেফ অপছন্দের মানুষ। তোমার হাঁটা-চলা, কথাবার্তা অনেকের কাছেই ভালো লাগবে না। কেউ হয়তো তোমাকে অপছন্দ করে, কারণ তুমি তার চেয়ে ভালো কাজ জানো। তুমি জনপ্রিয়, তোমাকে লোকে পছন্দ করে, সেটাও অপছন্দনীয় হওয়ার কারণ হতে পারে। তোমার চুল তার চেয়ে সামান্য বড় বা ছোট, তোমার গায়ের রং তার চেয়ে খানিকটা উজ্জ্বল কিংবা অনুজ্জ্বল- হয়তো কারণটা এমন! কেবল কারও কোনো ক্ষতি করলেই তুমি তার অপছন্দের পাত্র হবে, তা নয়। অপছন্দ ব্যাপারটা আসে ঈর্ষাকাতরতা থেকে। মানুষের সহজাত চরিত্রেই এ অনুভূতির প্রভাব আছে।


অবশেষে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না, আমার ছাত্রলীগের সেসব বন্ধু-বান্ধব, ছাত্রলীগের অগ্রজ-অনুজ ও শুভানুধ্যায়ীদের, যারা আমার চলার পথের গতি বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছেন।


জয় হোক সেই রাজনীতিবিদদের, যারা রাজনীতি করতে চায়, সংগঠন করতে চায়, দেশের জন্য, ভালোবাসা পেতে নয়, ভালোবাসা দিতে।


রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জন্মদিনে এই হোক শপথ।


জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু


মুক্তাদির রহমান শিমুলের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com