আমাকে তিনি আজ ভোর ছটায় ফোন দিয়ে জানিয়েছেন চাঁদপুর থেকে গুরুত্বপূর্ণ একজন সাক্ষী লঞ্চে করে ঢাকা এসে পৌঁছেছে। ১ তারিখের পর খুব খোঁজাখুঁজি শেষে আমরা তার সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছি। আজ মামলার ২য় দিনের শুনানিতে সাক্ষ্য দেবে সে। তিনি নিজে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে সকাল আটটায় আমার মেডিকেল সেন্টারে উপস্থিত হয়েছেন যাতে করে আমি আমার সাক্ষ্যদানের অভিজ্ঞতার আলোকে তাকে কিছুটা গাইড করতে পারি।
শিখিয়ে পড়িয়ে, চিকিৎসা ব্যবস্হাপত্র দিয়ে তাকে ৯ টায় পাঠালাম কোর্টে। বাবা বললেন ডিপার্টমেন্টে গিয়ে সময় কাটাবেন আর ঠিক ১১ টায় চলে আসবেন শহীদ মিনারে, আমি যেন অবশ্যই সময় মত উপস্থিত থাকি।
ড. অজয় রায় আমার বাবা ড. জালালুর রহমানের সরাসরি শিক্ষক। গুরু শিষ্য সম্পর্ক, দুজনেরই জন্ম তারিখ এক..১ লা মার্চ। আমি ২রা মার্চ জন্মেছিলাম বলে দুজনেরই খানিকটা আফসোস ছিলো। আমার বাবা-মা তাঁদের প্রথম সন্তানকে( আমাকে) দেখাতে প্রথম যে বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন সেই বাড়িটা ড. অজয় রায়ের ফুলার রোডস্হ ১৩/এইচ কোয়ার্টারটি। গত এক বছর ধরে আমি ঐ ভবনেরই ১৩/ এফ বাসাটিতে জীবন কাটাচ্ছি। শৈশব কৈশোর তারুণ্য সবই কেটেছে তার মত বটবৃক্ষের ছায়ায়। মায়া করে বলতেন ফিজিক্স পড়বে। কিন্তু তার শিষ্যের ইচ্ছাতে ডাক্তার হয়েছি,ফিজিক্স খুব মন দিয়ে পড়তাম যদিও।
দীপনের প্রথম প্রয়াণদিবসে রিদাত রিদমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে বলেছিলাম- এরা দীপনের ছেলেমেয়ে..... আমার হাতটা শক্ত করে ধরে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলেছিলেন- ওরা জলির ছেলেমেয়ে। কেন ওমন করে বলেছিলেন- আমি জানিনা।
পুত্রহত্যার বিচারের রায় দেখে যেতে পারেন নি। প্রায় ৫ বছর ধরে পুত্রদেহ পড়ে আছে হিমঘরে। ২৮ শে অক্টোবর আদালতে গিয়ে যে সিটে বসেছিলেন, ১ ডিসেম্বর আমি সেই সিটের পাশের সিটটিতে গিয়ে বসি দীপন হত্যামামলার বাদী হিসেবে। আমার বামদিকে যেমন খাঁচাভর্তি খুনী ছিলো, ওনার সাক্ষ্যর দিনেও অভিজিতের খুনীরা হাজির ছিলো।একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানালেন ফারাবি খাঁচার ভেতর থেকেও স্যারকে কটাক্ষ করে কথা বলেছে।অতঃপর সেইটুকু বেদনাও তার প্রাপ্তিতে যোগ হয়েছে, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং ওপারে চলে গিয়েছেন গতকাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইহজনমে তার মত বড় মাপের শিক্ষক ২য় জন আর কবে পাবে? এই যে শ্রদ্ধা জানানোর আয়োজন.... এটা কি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট না হয়ে শিক্ষক সমিতি আয়োজন করতে পারতো না? কড়া রোদে কফিনের ওপর কোন শামিয়ানা নাই। দীপনের বাবাকে ছায়ায় রেখে রেখে একসময় এগিয়ে দিয়েছি, কিন্তু তিনি এবং বয়োজ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা রোদে কষ্ট পাচ্ছিলেন। বাবা বাসায় যাবেন বলে বিদায় নিলেন আমার কাছ থেকে, আজকের আদালতে কি হলো আমরা একে অপরকে খোঁজ নিয়ে জানাবো বললাম। অজয় রায়ের মৃত্যুর পর কেমন যেন একা হয়ে গেলেন আবুল কাসেম ফজলুল হক।
অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ পৃথিবীতে আজ।
রাজিয়া রহমান জলির ফেসবুক থেকে পাওয়া
বিবার্তা/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]