বিশ্বব্যাংকের নাম ব্যবহার করে ঋণের প্রলোভন, সতর্ক থাকার পরামর্শ
প্রকাশ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭:২২
বিশ্বব্যাংকের নাম ব্যবহার করে ঋণের প্রলোভন, সতর্ক থাকার পরামর্শ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

অর্থের বিনিময়ে ঋণ দেয়ার কথা বলে বিশ্বব্যাংকের নাম ব্যবহার করতে পারে প্রতারক চক্র। তাই বাংলাদেশিদের এ ধরনের প্রলোভন থেকে সতর্ক থাকতে বলেছে বিশ্বব্যাংক।


বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের নাম ও লোগো ব্যবহার করে অনলাইনে ঋণ কেলেঙ্কারি নিয়ে সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এ সতর্কতার কথা জানিয়েছে তারা।


বিবৃতিতে বলা হয়, অর্থের বিনিময়ে ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতির নামে প্রতারণা থেকে সাধারণ জনগণকে সতর্ক করছে বিশ্বব্যাংক।


এতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংক কখনো সরাসরি ব্যক্তি পর্যায়ে ঋণ দেয় না এবং কারও ব্যক্তিগত আর্থিক তথ্য চায় না। প্রতারকরা ফেসবুক পেজ তৈরি করে বিশ্বব্যাংকের নাম ভাঙিয়ে ঋণ দেয়ার প্রলোভনে ফেলছে। এজন্য তারা মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারসহ নানা কৌশল ব্যবহার করছে।


প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, বিশ্বব্যাংক এই ধরনের কোনো কার্যক্রমে সম্পৃক্ত নয়। তাই আপনারা এসব প্রতারক চক্র থেকে সতর্ক থাকুন।


বিশ্বব্যাংকের নাম-লোগো ব্যবহার করে অনলাইনে প্রতারণা: বিশ্বব্যাংকের নাম ও লোগো ব্যবহার করে ফেসবুক পেজে দ্রুত ও সহজ শর্তের ঋণের প্রলোভন দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে কয়েকটি প্রতারক চক্র। এসব চটকদার অফারের ফাঁদে পড়ে অনেক মানুষ ইতিমধ্যে মোটা অঙ্কের টাকা খুইয়েছেন।


এ রকম একটি ফেসবুক পেজে ‘ডব্লিউবি বিডি সার্ভিস’। পেজটি বিজ্ঞাপন দিচ্ছে: ‘ব্যবসা শুরু করার জন্য বা ব্যক্তিগত কারণে আপনার কি ঋণের প্রয়োজন? বিশ্বব্যাংক নিয়ে এল দ্রুত, সাশ্রয়ী ও নিরাপদ লোন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটাতে আমাদের আপ্রাণ প্রচেষ্টা।’


‘জিনি এ’ নামের আরেকটি ফেসবুক পেজেও একই ধরনের বিজ্ঞাপন দেখা যায়।


ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব পেজের ‘সাইন আপ’ বা ‘অ্যাপ্লাই’ বাটনে ক্লিক করলেই একটি অ্যাপ ডাউনলোড করার নির্দেশনা দেয়া হয়। অনলাইনে একটা ফরম পূরণ করার পর আগ্রহী ঋণগ্রহীতাকে দেয়া হয় একটি হোয়াটসঅ্যাপ লিঙ্ক। ওই লিঙ্কে ক্লিক করলেই চলে যায় একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের চ্যাট বক্সে।


এই চ্যাট বক্সে প্রবেশ করার পর ভুক্তভোগীদের নিবন্ধন ফি, প্রসেসিং চার্জ এবং সরকারি করের মতো নানা ছুতায় ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়। বিকাশের মাধ্যমে এই অর্থপ্রদান সম্পন্ন করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঋণ অনুমোদনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।


ডব্লিউবি সার্ভিসেস নামের পেজটির ফাঁদে পড়ে গাজীপুরের পোশাক শ্রমিক আলমগীর হোসেন খুইয়েছেন সাড়ে ৭ হাজার টাকা।


গল্প ভিন্ন হলেও টাকা হাতিয়ে নেয়ার কৌশল ছিল প্রায় একই। তার ক্ষেত্রেও ব্যাবহার করা হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর। রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৫ হাজার ও ট্রান্সফার ফি বাবদ আড়াই হাজার টাকা বিকাশে নেওয়ার পর তার কাছে আরও টাকা চাইলে সন্দেহ হয় আলমগীরের। পরে তিনি তার দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে ব্লক করা হয় তাকে।


আলমগীর বলেন, বিশ্বব্যাংকের নাম ও লোগো দেখে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। তাই টাকা পাঠাতে দ্বিধাবোধ করিনি। যে বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠিয়েছিলাম, সেই নম্বরে কল দিয়ে দেখি নম্বর বন্ধ। বুঝতে পারি, আমি প্রতারণার শিকার হয়েছি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি আমার মতো অনেকেই এসব পেজের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।


এ ধরনের প্রতারণামূলক সব পেজ অবশ্য বিশ্বব্যাংকের নাম ও লোগো ব্যবহার করে না। এ রকম অন্তত ১৫টি পেজের সন্ধান পাওয়া গেছে যারা এভাবে সহজ শর্তে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়ার লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এ রকম কয়েকটি পেজ হচ্ছে: ফিউচার লেন্ডিং, বোরো বক্স, বোরো বক্স ০০২, গ্রো ট্রাস্ট, বেস্ট কার্ডস ইন বাংলাদেশ, মানি লায়ন, সিআইবিএম লোন অব বাংলাদেশ, বিগ ভুয়া এএ, জেফরি রস, জিনি এ, ম্লাদিলিকোভা২, ডব্লিউবি বিডি সার্ভিসেস এবং এএসডি।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঋণ দেয়ার আড়ালে মুনাফা করার মধ্যেই এই প্রতারকরা তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখে না। অ্যাপের মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের মোবাইল ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায় এবং তাদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ছবি ও তথ্য বের করে ব্ল্যাকমেইল করে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মেসবাউল হক বলেন, অনলাইনে ঋণ দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়নি। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া বা আর্থিক লেনদেন করার আগে ওই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনুমোদিত কি না, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করে নেওয়ার জন্য গ্রাহকদের অনুরোধ জানান তিনি।


তিনি বলেন, যেকোনো অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনই ঝুঁকিপূর্ণ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কেউ কোনো ধরনের প্রতারণা বা অনিয়ম করলে তা তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি উইং কাজ করে। এসব বিষয় তাদের অবগত করলে তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com