
দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)। ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি স্নাতক, স্নাতকোত্তরসহ নানা পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষা দান করে আসছে। অথচ প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পরেও একটি বারও আয়োজিত হয়নি ঐতিহ্যবাহী সমাবর্তন। ফলে দীর্ঘ বছর ধরে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন জীবনের এক অন্যতম গর্বময় মুহূর্তের স্বাদ থেকে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাওয়া সত্ত্বেও সমাবর্তনের অভাবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা অপূর্ণতা, ক্ষোভ আর আক্ষেপ স্পষ্ট। বিশেষ করে যারা এখন দেশে-বিদেশে কর্মরত, তাদের অনেকেই জানান, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতির শেষ অনুষঙ্গটি—সমাবর্তনের ছবি, ক্যাপ-গাউন, এবং সহপাঠীদের সঙ্গে শেষবারের মতো মিলন—সবই তাদের জীবনে অনুপস্থিত।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া গত বছর সমাবর্তনের প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে আমন্ত্রণ জানান। রাষ্ট্রপতি সেই সমাবর্তনে থাকার আগ্রহও প্রকাশ করেন। কিন্তু এরপর আর কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সমাবর্তন না হওয়ায় মূল সনদ না পেয়ে সাময়িক সনদ নিয়েই কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হচ্ছে তাদের। এতে চাকরি বা বিদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নানা রকম জটিলতার মুখে পড়তে হচ্ছে অনেককে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা নিয়মিতই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিষয় নিয়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করছেন। তাদের মতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতা ও পরিকল্পনাহীনতার কারণেই এতদিনেও সমাবর্তনের আয়োজন সম্ভব হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মুহাম্মদ খাজা আহমেদ বলেন, স্নাতক সম্পন্ন করেছি কয়েক বছর আগে, কিন্তু এখনো সমাবর্তন হয়নি, এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে সমাবর্তন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের পরিশ্রম ও স্বপ্ন পূরণের প্রতীক। এই সমাবর্তনের অনুপস্থিতি আমাদের মধ্যে এক ধরনের অপূর্ণতা তৈরি করেছে। তাছাড়া, মূল সনদ না পাওয়ায় অনেক সময় চাকরি বা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হয়, যেখানে প্রোভিশনাল সনদ যথেষ্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আমার আন্তরিক অনুরোধ, অনতিবিলম্বে সমাবর্তন আয়োজনের জন্য একটি সুস্পষ্ট সময়সীমা ও পরিকল্পনা ঘোষণা করা হোক। প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে একটি গৌরবোজ্জ্বল সমাবর্তন আয়োজন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।"
লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মিল্লাত হোসেন বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য স্মৃতিকে সযত্নে ধরে রাখতে কাঙ্ক্ষিত একটি মুহূর্ত হলো সমাবর্তন। এটা শুধু সনদপ্রাপ্তির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নয়। বরং কালো গাউন, চারকোনা টুপি গর্ব আর অনুপ্রেরণার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষাজীবনে সমাবর্তনের অভিপ্রায় থেকে পুনরায় মিলিত হোক প্রাণে প্রাণে।"
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে নবনিযুক্ত উপাচার্য বরাবর শিক্ষার্থীদের পেশ করা ৮২টি দাবির মধ্যে চলতি বছরেই সমাবর্তন আয়োজনের দাবিও জানানো হয়৷
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলম বলেন, "চার বছর পড়াশোনার শেষে সকল শিক্ষার্থীরই সমাবর্তনের আশা থাকে। আমি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিব।
বিশ্লেষকদের মতে, সমাবর্তন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য স্বীকৃতির একটি প্রতীক। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘ সমাবর্তনহীনতা ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীদেরও মানসিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
প্রাক্তন, বর্তমান শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা দ্রুত একটি সমাবর্তনের তারিখ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের বিশ্বাস, এ গৌরবময় আয়োজনের মাধ্যমে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বলতে পারবেন—"হ্যাঁ, আমিও সমাবর্তনে অংশ নিয়েছি!"
বিবার্তা/মৃত্যুঞ্জয়/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]