
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (চাকসু) গঠনতন্ত্র প্রস্তাবনা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল আদিবাসী ছাত্র সংগঠনগুলো। এতে আদিবাসী বা সংখ্যালঘু জাতিসত্তা বিষয়ক সম্পাদক পদসহ নতুন ৫ পদ অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব দেয় সংগঠনগুলো।
সোমবার (২৬ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের সামনে এ সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বহু ভাষা, ধর্ম ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় পাহাড় ও সমতলের প্রায় ১৫টির অধিক বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে যার সংখ্যা প্রায় সাত শতাধিক। জাতিগোষ্ঠী সমূহের শিক্ষার্থীদের অধিকার, ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ, সংরক্ষণ ও গবেষণায় চাকসু হতে পারে শিক্ষার্থীদের অন্যতম প্লাটফর্ম।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কিংবা পিছিয়ে পড়া অঞ্চল থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রতিনিধিত্বের সুযোগ রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমান অবস্থান ও মর্যাদা নিশ্চিত করবে। যা অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম সৌন্দর্য।
দেশের সেকেন্ড পার্লামেন্ট খ্যাত ছাত্র সংসদ এক্ষেত্রে একটা বড় উদাহরণ হয়ে উঠতে পারে। বর্তমান চাকসু গঠনতন্ত্র নিয়ে কিছু প্রস্তাবনা আমরা তুলে ধরছি।
লিখিত বক্তব্যে তাদের প্রস্তাবিত ৫ দাবি হলো পরিবহন ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক, নারী বিষয়ক সম্পাদক, আদিবাসী বা সংখ্যালঘু জাতিসত্তা বিষয়ক সম্পাদক, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি অথবা জিএস যেকোন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
নারী বিষয়ক সম্পাদকের প্রস্তাবনায় তারা উল্লেখ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে সেলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ, স্বচ্ছতা ও ন্যায্য বিচার নিশ্চিতে কাজ করবে। নারী শিক্ষার্থীদের সাইবার বুলিং কিংবা হেনস্তার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে এবং ব্যাক্তি স্বাধীনতা ও পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করবে। এছাড়াও নারী হল, অনুষদে নারীদের ঋতুস্রাবকালীন, মাতৃত্বকালীন ও স্বাস্থ্যগত জটিলতা নিরসন ও সমঅধিকার নিশ্চিতকরণে কাজ করবে।
আদিবাসী বা সংখ্যালঘু জাতিসত্তা বিষয়ক সম্পাদক প্রস্তাবনায় উল্লেখ করে বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৭'শ অধিক বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। বহু ভাষা, জাতি, ধর্মে ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্যাম্পাস আর দেশে কোথাও নেই। পিছিয়ে পড়া এবং সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের অধিকার সুনিশ্চিতকরণ, ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা, গবেষণা নিশ্চিতকরণে এই সম্পাদক পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠী থেকে নির্বাচিত হবে। রেসিজম, বুলিং প্রতিরোধসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় করবে। এছাড়াও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি যা এদেশের সম্পদ তা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরবে। ৭৩'এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী সিনেটে যে ০৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি থাকবে তাঁর মধ্যে পিছিয়ে পড়া জাতিগোষ্ঠীর এই সম্পাদক প্রতিনিধি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এছাড়া লিখিত বক্তব্যে তারা আরো ২টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন, চাকসুর গঠনতন্ত্রের অনুচ্ছেদ ০২ অনুযায়ী চাকসু'র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয় সকল শিক্ষার্থীর সমান সুযোগ ও অধিকার নিশ্চিত করা, সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণ, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্কের উন্নতি এবং শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে একটি চাপ প্রয়োগকারী সংস্থা এবং রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন নীতির সমালোচনা ও নাগরিক অধিকার চর্চার একটি মুখপাত্র হয়ে উঠা উচিত।
অনুচ্ছেদ ০৭ অনুযায়ী ছাত্র সংসদের সভাপতি ভিসিকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটি'র চেয়ে ভিসির ক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় 'চেক এন্ড ব্যালেন্স' হওয়া উচিত। যেমন: চাকসু নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাতিল কমিটি সদস্যদের 'দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে' নির্ধারণ হওয়া উচিত। এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চাকসু ভেঙে দেওয়ার সর্বময় ক্ষমতা ভিসির হাতে না থেকে নির্বাহী কমিটি'র হাতে থাকা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চবি শাখার সভাপতি রোনাল চাকমা, ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরামের সভাপতি রিন রঙ্গন চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাথোয়হিসং মারমা, বিএমএসসি সাংস্কৃতিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সিংয়ইপ্রু মারমা এবং ওঁরাও জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি পিযুষ টপ্য।
বিবার্তা/মহসিন/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]