
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের জন্য ৭ দফা দাবি জানিয়ে দীর্ঘ এক দশক পর প্রকাশ্য ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামি ছাত্রশিবির। এতে দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার (১৯ মে) বেলা সাড়ে ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকসু ভবনের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে শহিদ মিনার অতিক্রম করে জিরো পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা ‘শিবিরের অপর নাম, আদর্শের সংগ্রাম, 'মাথার উপর ছাতা দে, 'নয় আবাসন ভাতা দে', ‘আমার তোমার অধিকার, চাকসু চাকসু’, ‘জনে জনে খবর দে, সেশন জটের কবর দে’, জুলাইয়ের প্রশাসন, দাও শতভাগ আবাসন’, ‘চবি শিবিরের কয় দফা, সাত দফা সাত দফা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শাখা ছাত্রশিবিরের শাখা সেক্রেটারি মোহাম্মদ আলী বলেন, বর্তমান প্রশাসন জুলাই আন্দোলনে আমাদের শহীদ হৃদয় তরুয়া শহীদ ফরহাদের রক্তের উপর দায়িত্ব নেয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমূল পরিবর্তন হবে কিন্তু আমরা কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করিনি। চবি শিবিরের সাত দফা শুধু আমাদের নয়, এগুলো প্রতিটি চবিয়ানদের প্রাণের দাবি। এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের দাবী আদায় করে ফিরব।
চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি, ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম হোসেন রনি বলেন, প্রশাসনে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা আই ওয়াশ ছাড়া শিক্ষার্থীদের মূল ও ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করতে পারেননি। তারা ফেসবুকের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পরিবর্তনের কথা বললেও এ প্রতিষ্ঠানের মধ্যমনী আমাদের শিক্ষার্থীদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তনে তাদের কোনো ভূমিকা নাই।
সভাপতি মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নানাবিধ সমস্যা ও বৈষম্যের শিকার। আবাসন সংকট, সেশনজট, নিরাপদ পর্যাপ্ত যাতায়াতের অভাব, অকার্যকর চাকসু, পাঠ্যগ্রহণের আধুনিকতার অভাব, অবকাঠামোগত দুর্বলতা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ২০২৪ সালের ২৪ই সেপ্টেম্বর ২৪ দফা দাবি জানিয়েছিলাম। দীর্ঘ আন্দোলনের পর কিছু দফা বাস্তবায়িত হলেও অধিকাংশ দাবি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি । এভাবে চললে ছাত্রসমাজ আর চুপ থাকতে পারে না। তাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার ও সুষ্ঠু শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সাত দফা দাবি জানাচ্ছি।
এ সময় তিনি চবি ছাত্রশিবিরের সাত দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো- শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং আবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অনাবাসিক সকল শিক্ষার্থীকে আবাসন ভাতা প্রদান করতে হবে। সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে অনতিবিলম্বে সেশনজট নিরসন এবং শিক্ষার আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত ও নিরাপদ যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অনতিবিলম্বে চাকসু নির্বাচন দিতে হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে টিএসসি স্থাপন, সেন্ট্রাল অডিটোরিয়াম নির্মাণ, কেন্দ্রীয় মসজিদ পুনর্নির্মাণ এবং আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থাপনাসমূহ সংস্কার করতে হবে।
এছাড়া জুলাই বিপ্লব ও ফ্যাসিবাদী শাসনামলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত শিক্ষার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কার এবং জড়িত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলে অবৈধ নিয়োগের সাথে জড়িত সকলের বিচার এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরিচ্যুত করতে হবে।
এর আগে, ২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ২৪ই সেপ্টেম্বর ২৪ দফা দাবি জানিয়েছিল শাখা ছাত্রশিবির।
বিবার্তা/মহসিন/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]