
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছর ১০০ তম সিন্ডিকেট সভায় সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও কার্যত বন্ধ হয়নি ছাত্রসংগঠনগুলোর রাজনৈতিক কার্যক্রম। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে ক্যাম্পাসে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রদলের ব্যানারে শহিদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। গত ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং গত ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
এছাড়া গত ২৩ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী ও কর্মচারীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ এবং ১১ ডিসেম্বর গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার জন্য উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি পেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। এছাড়া আবাসিক হলগুলোতেও রাজনৈতিক পরিচয়ে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বেড়েছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।
এবিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ জানান, 'এখানে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে একটি অবৈধ প্রশাসন (আওয়ামী পন্থি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈন)। যে প্রশাসনকে আমরা মানি না এবং অব্যাহতি নিতে বাধ্য করেছে শিক্ষার্থীরা। তাদের সিদ্ধান্তকে ছাত্রদল কোনোভাবেই মেনে নিবে না। তাছাড়া বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো মুক্তচর্চার জায়গায় কাউকে রাজনীতি চর্চা না করতে দেওয়াও একটা বৈষম্য। আমি এটা কখনোই সমর্থন করি না।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইউসুফ ইসলাহী বলেন, 'ক্যাম্পাসে যেটা প্রয়োজন, সকলের দরকার, আমরা সেটাই করেছি। আমার কাছে অনেকগুলো অনুরোধ এসেছে পরে আমরা শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। তাছাড়া গুচ্ছের বিষয়ে শিক্ষার্থী থেকে সবার কাছে মনে হয়েছে গুচ্ছ থেকে বের হওয়া প্রয়োজন, সেজন্য আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি। প্রয়োজনের স্বার্থেই আমরা দলীয় ব্যানার ব্যবহার করেছি।'
এবিষয়ে শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, ক্যাম্পাসে যেহেতু রাজনীতি নিষিদ্ধ, তাই কোন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনই যেন প্রকাশ্যে তাদের রাজনীতি কার্যক্রম পরিচালনা না করতে পারে সেজন্য প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে। এভাবে সিন্ডিকেটে একটা বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার পরেও দলীয় রাজনীতি চর্চা খুবই দুঃখজনক।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ২০২১-২২ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানায়, 'রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও ক্যাম্পাসে ছাত্রদল এবং শিবির কীভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রশাসনকে অবশ্যই এটার জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। এসব দলীয় রাজনীতি আমরা আর চাই না। প্রয়োজনে ছাত্রসংসদ গঠন করা হোক।'
মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পাবেল রানা বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে স্মারক আকারে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল যে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। কিন্তু দুটি দল এখন ক্যাম্পাসে ওপেন রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি আরো বলেন, তাদের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে প্রশাসন হতে তাদের পারমিশন দেয়া হয়েছে! কুবি প্রশাসনকে এই বিষয়টা অবশ্যই ক্লিয়ার করতে হবে। ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ হওয়া নিয়ে আর আন্দোলন করতে চাই না। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন, তারা এসবের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেন।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে সকলপ্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ। তারপরেও যদি কোনো দল ক্যাম্পাসে রাজনীতি করে তাহলে সেটা প্রক্টরিয়াল বডি দেখবে।'
প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম বলেন, 'এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। আমরা চেষ্টা করছি। আর ছাত্রসংসদের বিষয়ে প্রশাসনের ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে।'
এবিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বলেন, 'এবিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের আসলে ফোর্স (কোন বিশেষ বাহিনী) প্রয়োজন। এছাড়া প্রতিহত করার কোন উপায় দেখছি না।'
বিবার্তা/প্রসেনজিত/জেএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]