ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই লাপাত্তা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) রেজিস্ট্রার দপ্তরের সেকশন অফিসার মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদ। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় হত্যা মামলা আসামি হয়েও অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও রেজাউল ইসলাম মাজেদ গত ১৬ জুলাইয়ের পর আর অফিস করেননি। বিনা অনুমতিতে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থেকেছেন। এমনকি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখেননি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ রয়েছে।
অনুপস্থিত থাকার জবাব চেয়ে গত ২৩ অক্টোবর নোটিশ দেওয়া হয়। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও মাজেদ জবাব দেননি। পরবর্তীতে গত ০৩ নভেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। সেটারও কোনো জবাব না পায়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সরকারি চাকরি বিধিমালা বলছে, বিনা অনুমতিতে ৬০ দিন বা তদূর্ধ্ব সময় কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকলে ওই কর্মচারী পলায়ন বলে গণ্য হবেন। এছাড়া পলায়নের দায়ে দোষী হলে তাঁকে তিরস্কার থেকে শুরু করে বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা বরখাস্ত করতে পারেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
এমতাবস্থায় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত ২৭ নভেম্বর তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার।
কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে আছেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান, সদস্য হিসেবে আছেন ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আহসান উল্যাহ এবং সদস্য সচিব হিসেবে আছেন অর্থ ও হিসাব দপ্তরের উপ-পরিচালক এস. এম. মাহমুদুল হক।
এ নিয়ে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ড. সৈয়দুর রহমান বলেন, ‘গতকাল তদন্ত কমিটি সম্পর্কে জানতে পেয়েছি। ইতিমধ্যে সদস্য সচিবকে দায়িত্ব দিয়েছি অভিযুক্তের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য। সম্ভাব্য আগামী রবিবার কমিটির সবাই মিলে মিটিং করব।’
এছাড়াও, ২০১৭ সালের ২৮ মে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদ। কমিটির পাওয়ার আগে ও পরে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগঠনের কাজে হস্তক্ষেপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষকদের কটূক্তি, টেন্ডারবাজি, উপাচার্যের গাড়ি রোধসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
সেই সাথে ২০১৬ সালে কাজী নজরুল ইসলাম হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহর হত্যার মামলায় এজাহারেও রয়েছে তার নাম। গত ৫ আগস্টের পর সর্বশেষ গত ১৩ আগস্ট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেখা যায় তাকে। তবে এয়ারপোর্ট পুলিশের তৎপরতায় তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে পারেননি বলে জানা গেছে। কিন্তু বর্তমানে তার অবস্থান সম্পর্কে কোন তথ্য জানা যায়নি।
এই ব্যাপারে মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদের ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মুজদার বলেন, ‘এর আগে তাকে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও কর্মস্থলে যোগদান না দেওয়ায় তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার পরও কোন জবাব না আসায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিবার্তা/প্রসেনজিত/এনএইচ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]