অর্ধশতাধিক বিসিএস পরীক্ষার্থীর টাকা নিয়ে উধাও মেহেদী!
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৯:৪৭
অর্ধশতাধিক বিসিএস পরীক্ষার্থীর টাকা নিয়ে উধাও মেহেদী!
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

স্পেশাল ক্লাসের নামে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিসিএস কনফিডেন্সের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে।


দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ও ত্রিশাল বাজারে বিসিএস কনফিডেন্সের শাখা পরিচালনা করে আসছে মেহেদী হাসান। এবার স্পেশাল ক্লাসের কথা বলে পঞ্চাসের অধিক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে। সম্পূর্ণ কোর্স না করিয়ে কোচিং বন্ধ করে দিয়েছেন মেহেদী হাসান।


বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লিমা আক্তার বিবার্তাকে জানান, গত জুন মাসে বিসিএস কনফিডেন্স জাককানইবি শাখায় ভর্তি হই স্পেশাল ব্যাচে। আমি এগারো হাজার দুইশ টাকা দিয়ে ভর্তি হই। প্রথমদিকে দু-একমাস ভালোই ছিল। কিন্তু তারপরে হঠাৎ করে কোরবানি ঈদের পরে দেখি তাদের সার্ভিস খুবই খারাপ। ক্লাস হয় তো হয় না। নভেম্বরের এক তারিখ থেকে কোচিং পুরোদমে বন্ধ হয়ে যায়। যে শিটগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলোও পুরাতন। আমাদের স্পেশাল ব্যাচের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ছিল। সে গ্রুপ থেকেও আমাদের বের করে দিছে। তিনি আমাদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না।


স্থানীয় সরকার ও নগর উন্নয়ন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেহানা চৈতি বিবার্তাকে বলেন, আমি দশ হাজার দুইশ টাকা দিয়ে ভর্তি হইছি। ভর্তি হওয়ার সময় তিনি (মেহেদী হাসান) বলেছিল এক্সট্রা ক্লাস, এক্সট্রা পরীক্ষা, স্পেশাল অনেক কিছুই আছে৷ কিন্তু নরমাল ক্লাসও আমরা পাই নাই। আমি প্রথমে অর্ধেক টাকা দিছিলাম। কিন্তু পরে বাকী অর্ধেক টাকার জন্যও চাপ দিতে থাকে। টাকা না দিলে ভর্তি আইডি অফ করে দেওয়ার কথা বলে প্রেশার দেয়। সেজন্য বাধ্য হয়ে পুরো টাকা দিতে হয়। কিন্তু পরে আর কোনো সার্ভিস দেয় নাই।


অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম হোসেন বিবার্তাকে বলেন, সেপ্টেম্বরের ৫ তারিখ বিসিএস কনফিডেন্স ত্রিশাল শাখায় ৪৭তম বিসিএস প্রস্তুতি ফুল কোর্সে সাত হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হই। এক মাসের ভেতর শিট প্রদান ও ক্লাস নেওয়ার কথা বললেও কোনো শিট দেওয়া হয়নি এবং নিয়মিত ক্লাস নেয়নি তারা। উপরন্তু নিম্নমানের টিচার দিয়ে ক্লাস নিয়েছে। হঠাৎ নভেম্বরে বন্ধ করে দেওয়া হয় সকল ক্লাস। পরিচালক মেহেদী ভাই বলেন, বাকি টাকা ব্যাক দিবে। কিন্তু পরবর্তীতে সে গ্রুপ থেকে আমাদের রিমুভ করে দেয়। অনেকের কাছ থেকে তারা দশ থেকে বারো হাজার টাকাও নিয়েছে। ছয়-সাত মাস ক্লাস করানোর কথা থাকলেও আড়াই মাস ক্লাস করিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কোচিংয়ের ম্যানেজার সজল ভাইও এবিষয়ে কোনো দায় নেয়নি। মেহেদি ভাই যদি দ্রুত এর কোনো সমাধান না করে- তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে মামলা করব।'


পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তুমেল তঞ্চঁঙ্গ্যা বিবার্তাকে জানান, মেহেদী ভাই আমার পরিচিত হওয়ার সুবাদে এখানে এগারো হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হই। আমাদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার আশ্বাস দেওয়া হয়। টিচারদের সার্ভিস অত্যন্ত বাজে ছিল। ওনাদের বিসিএস কনফিডেন্স গ্রুপ থেকে আমাদের রিমুভ করে দিয়েছে। মেহেদী ভাইয়ের কাছ থেকে আমরা প্রতারিত হয়েছি।


তবে এই বিষয়ে মেহেদী হাসানের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


এবিষয়ে বিসিএস কনফিডেন্সের প্রধান শাখায় জানতে চাইলে বিসিএস কনফিডেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক লায়ন তাছলিমা গিয়াস বিবার্তাকে জানান, আমরা এবিষয়ে অবগত এবং অভিযোগ পেয়েছি। তাকে গত জানুয়ারিতে বিসিএস কনফিডেন্স থেকে অফিসিয়ালি বাদ দেওয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও তিনি তার কোচিং কার্যক্রম এতোদিন ধরে চলমান রেখেছেন। আমরা দ্রুত এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।


বিবার্তা/বাপ্পি/রোমেল/জেএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com