প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের খোলা চিঠি
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৫৩
প্রধান উপদেষ্টাকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের খোলা চিঠি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশব্যাপী অসহিষ্ণুতা, ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক আচরণের বিষয়ে সরকারের নীতিকে ‘অস্পষ্টতা’ উল্লেখ করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।


চিঠির অনুলিপি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টা ও প্রতিরক্ষা উপদেষ্টাকেও দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।


২৮ সেপ্টেম্বর, শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে চিঠি পাঠ করা হয়। চিঠি পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতি আরা নাসরীন।


চিঠিতে বলা হয়, ‘বিভিন্ন গোষ্ঠী, শ্রেণি ও পেশাজীবীর ‘স্বাধীনতা’ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা মধ্যে আপনারা বিশাল এক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে দেশের হাল ধরেছেন। আকাঙ্ক্ষা তীব্রতা ও বিগত বছরগুলোয় ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণের কারণে আপনাদের পথ দুর্গম সেটা আমরা জানি। ‘স্বাধীনতাকামী’ সকলের ধৈর্য প্রয়োজন সে কথাও আমরা মনে রাখি।’


'বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক (ইউটিএন) সম্বন্ধে আপনি ওয়াকিবহাল নাও থাকতে পারেন। গত এক দশক ধরে এ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ লাগাতার নানা অন্যায়, নিপীড়ন ও কর্তৃত্ববাদিতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আসছেন। তবে আমরা বিশেষ কোনো মার্কার সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে ছিলাম না, এখনো নাই; আমরা গণতন্ত্র ও ন্যায্যতার জন্য হাজির আছি। সেই সূত্রেই জুলাই অভ্যুত্থানের উত্তাল সময়ে শিক্ষার্থীদের পাশে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে এই নেটওয়ার্কের শিক্ষকবৃন্দ শিক্ষার্থী-জনতার সুহৃদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।’


চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘অভ্যুত্থানের মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের অসহিষ্ণু, আক্রমণাত্মক ও নৈরাজ্যবাদী জমায়েত আমরা লক্ষ করছি। সেসব জমায়েত থেকে অপছন্দের গোষ্ঠী ও দলের বিরুদ্ধে কেবল হিংসাত্মক কথাবার্তাই বলা হচ্ছে না, ক্ষেত্রবিশেষে সেসব মানুষের ওপর হামলাও চালানো হচ্ছে। তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘবদ্ধ হিংস্রতায় নিহত হয়েছেন তিনজন মানুষ। অপরাধীদের ধরতে গিয়ে একজন সেনা কর্মকর্তা হামলায় নিহত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে ভিন্ন জাতিসত্তার মানুষকে।’


‘রাস্তায় ও পর্যটন অঞ্চলে নারীদের ওপর হামলা, নিগ্রহ এবং চরম হেনস্তা করা হয়েছে। শ্রমিকদের নিগৃহীত করেছেন মালিকপক্ষের লোকজন। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও দপ্তরে ছোট ছোট অজস্র হিংস্রতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। মাজার, মন্দির, শিল্প-স্থাপনা ভাঙচুর থেকে শুরু করে বাউল ও আহমেদিয়াদের ওপরও আক্রমণ হয়েছে। এসব দুর্ঘটনা দীর্ঘদিন সমাজের মধ্যকার নানাবিধ অমীমাংসা ও গণতন্ত্রহীনতার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে আমরা মনে করি। এভাবে চলতে থাকলে নাগরিকদের নিরাপত্তাবোধের অভাব তীব্রতর হবে এবং সংকট উত্তরণে সরকারকে আরও বেগ পেতে হবে।’


চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলেন, ‘বর্তমান সরকারের নির্মোহ ভূমিকা পালন ও আশু পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। কাজেই, অতি উৎসাহী গোষ্ঠীগুলোর অসহিষ্ণুতা প্রশমনে জন্য যারা এসব ঘৃণামূলক বক্তব্য প্রচার করছেন এবং বিভিন্ন পরিচয় ও সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর বা নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করছেন তাদের থামাতে হবে। তা না করে সরকার বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজেরাই যদি এসব হস্তক্ষেপকারীদের সাহস যুগিয়ে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতার ভয় দেখিয়ে কোনো গোষ্ঠীর কথা পালনে বাধ্য করেন, যেমনটা ঘটেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সেখানে চাপে পড়ে প্রশাসন নিরাপত্তা দিতে রাজি হয়নি বলে একটি আলোচনা সভা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে শিক্ষার্থীরা) তাহলে আর এত দামে কেনা জুলাই অভ্যুত্থানের কোনো আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করা হলো?’


চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা আসতে হবে যে তারা আসলে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ কীভাবে নিশ্চিত করবেন এবং অন্তর্ভুক্তি বিষয়ে তাদের অবস্থান তাদের নীতিসমূহের মাধ্যমে কী করে স্পষ্ট করবেন। সহিংস জমায়েতের সংঘবদ্ধ হিংস্রতা থেকে ভিন্ন মত বা সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষায় সরকার কী কী পদক্ষেপ নেবেন তা সুস্পষ্ট করতে হবে।’


এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইদ ফেরদৌস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী।


বক্তারা, ময়মনসিংহের আলোচনা সভায় সামিনা লুৎফার যোগ দিতে না পারা, এনসিটিবিতে পাঠ্য পুস্তক সংশোধন কমিটি থেকে কামরুল হাসান মামুন ও সামিনা লুৎফাকে বাদ দিতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের দাবির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।’ পাশাপাশি দেশে আইনের শাসন থাকলে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি কোনোটাই সমস্যা নয় বলে মনে করেন বক্তারা।


বিবার্তা/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com