‘বিদেশি বিবৃতিদাতাদের বাংলাদেশের প্রাণশক্তি অনুধাবনের আহ্বান’
প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১৮:১১
‘বিদেশি বিবৃতিদাতাদের বাংলাদেশের প্রাণশক্তি অনুধাবনের আহ্বান’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিদেশি বিবৃতিদাতাদের বাংলাদেশের প্রাণশক্তি ও পরিবর্তনের ধারা অনুধাবন করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন নোবেল বিজয়ীকে নিয়ে অতিসম্প্রতি বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের কেউ কেউ বিবৃতি দিচ্ছেন। উক্ত ব্যক্তির প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মুনাফা ও সুবিধা গ্রহণের প্রভৃতি অগ্রাধিকার পেয়েছে। কিন্তু মানবকল্যাণ সম্পাদিত হয়নি। বিশ্বপুঁজিবাদী ব্যবস্থার সঙ্গে তা লেজুড়বৃত্তি ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধপ্রসূত মৌলিক ভাবনার সঙ্গে তার দূরত্ব অনেক বেশি।’


৩১ আগস্ট, বৃহস্পতিবার কক্সবাজার জেলার টেকনাফের হ্নীলাস্থ মঈন উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ আয়োজিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।


দেশের প্রথিতযশা এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের শোষণহীন সমাজের কথা বলা হয়েছিল। সেই ধারাই বাংলাদেশের মূলধারা, যা বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তৎসময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক সুবিধাবাদী দেশ বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হতে দিয়ে বরং তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করে। আজও একই শক্তির নানারূপ বিবৃতি আমরা দেখতে পাই। কেননা বর্তমানে বাংলাদেশে বেদে, হিজড়া, গৃহহীন ও সুবিধা বঞ্চিতসহ সকলের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হচ্ছে। গৃহহীনদের দেয়া হচ্ছে পাকা ভবন।’


‘অন্যদিকে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূস এবং তার প্রতিষ্ঠান দীর্ঘকাল জুড়ে শ্রম শোষণের মধ্যদিয়ে অর্থনৈতিক মুনাফাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। যা আজও উল্লিখিত পরাশক্তির পছন্দের। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও নিজস্ব আদলে গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক সমন্বয়ে বাংলাদেশের প্রাণশক্তি গঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সেই কল্যাণধর্মী সমাজ প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এটিই বাংলাদেশের মূল প্রাণশক্তি, নতুন অর্থনৈতিক উত্তরণের সোপান। বিবৃতিদাতাদের বক্তব্যে সেই উত্তরণে বিঘ্ন ঘটানোর স্পষ্ট আভাস রয়েছে। বাংলাদেশর মানুষ মুনাফাভিত্তিক ঋণ প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করেছে। আর প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ প্রকৃত মুক্তির দর্শনকে গ্রহণ করেছে ও স্বাগত জানিয়েছে।’


অতিসম্প্রতি বিবৃতিদাতাদের অবস্থানকে প্রত্যাখ্যান করে উপাচার্য বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ নতুন শক্তিতে বলীয়ান। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আদর্শভিত্তিক সমাজ গঠনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। এক্ষেত্রে কোনো রূপ বৈদেশিক চাপ বা বল প্রয়োগের ধারা কাঙ্ক্ষিত নয়।’ তাদের স্ব স্ব দেশের লাগামহীন পুঁজিবাদী ব্যবস্থাপনায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ এবং নতুন নতুন যুদ্ধাবস্থা নিরসনে মনোযোগী হয়ে কাজ করার পরামর্শ দেন তিনি। বলেন, ‘বিশ্বে অস্ত্র ও মাদকের যে লাগামহীন ব্যবস্থা রয়েছে বাংলাদেশ চেতনাগতভাবে তার বিরুদ্ধে। আমরা লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দেই। অবাঞ্ছিত যুদ্ধের সঙ্গে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করি না।’ বাংলাদেশের এই প্রাণশক্তিকে আঘাত করা কোনো রূপ গ্রহণযোগ্য হবে না বলেও উপাচার্য দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেন।


জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এগোচ্ছে। সেক্ষেত্রে ওইসব প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিরা মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু চর্চা, স্বাধীনতা দিবস, মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারে গমন থেকে বিরত থাকছে। দেশমাতৃকার জন্য শহিদদের স্মরণে নানা কার্যক্রম থেকে নিজেদের দূরে রেখে শুধুমাত্র বিশ্ব পরিমণ্ডলে বাণিজ্যিক সুবিধা সম্প্রসারণের একটি ঘরানা তৈরি করেছে। এই ঘরানার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মানবমুক্তির সামগ্রিক পন্থা নয়। বরং তা প্রকৃত অর্থেই পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মুনাফাভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’


সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন, মঙ্গা দূরীকরণসহ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যে-সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো বঙ্গবন্ধুর শোষিতের গণতন্ত্রের দ্বিতীয় বিপ্লবের বাস্তব প্রতিফলন। তাঁর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের বেদে, হিজড়া, জেলে, বিধবা, বয়স্ক নাগরিকসহ সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য যে আর্থিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছেন তা মূলত মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করছে।’


শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর অনন্য অবদান উল্লেখ করে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘বিশ্বে শোষিতের গণতন্ত্র দর্শন প্রতিষ্ঠার মহাপুরুষ ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনিই প্রথম বলেছেন বিশ্ব আজ দু’ভাগে বিভক্ত- শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বে নতুন অর্থনৈতিক ধারা সৃষ্টির লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন। যেটি ছিল বাংলাদেশকে পৃথিবীর বুকে রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠার একটি নতুন মাইলফলক।’


মঈন উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজের সভাপতি নৃবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদের সভাপতিত্বে ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ. ন. ম. তৌহিদুল মাশেক তৌহিদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এইচ এম ইউনুছ আলী, ফখর উদ্দিন আহামদসহ কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীবৃন্দ।


বিবার্তা/রাসেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com