জাবি’র বার্ষিক বাজেট নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩, ১৭:০২
জাবি’র বার্ষিক বাজেট নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা
জাবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আগামীকাল শনিবার বিকাল ৩টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ৪০তম সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য ২৯৪ কোটি ১৬ লাখ টাকার মূল বাজেট উত্থাপিত হবে। তিন দশক ধরে জাকসু নির্বাচন না হওয়ায় সিনেটে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে নেই কোন নির্বাচিত প্রতিনিধি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বছরের বাজেট কেমন হওয়া উচিত তাই তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত তুলে ধরছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা।


মেডিকেল সেবায় বাজেট বাড়াতে হবে



জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান লিটন বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটের অর্থ শিক্ষাখাতে বেশি বরাদ্দ দেয়া উচিত। গবেষণার ক্ষেত্রে বাজেটের পরিমাণ বেশি থাকলে অনেকেই গবেষণা করতে আগ্রহী হবে। তাহলে হয়ত ভবিষ্যতে আমরা জাবির নাম বিশ্ব র‌্যাংকিং এ দেখতে পাবো। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় বিশ হাজার লোকের বসবাস। কিন্তু এতগুলো মানুষের জন্য কেবল একটি মাত্র মেডিকেল সেন্টার রয়েছে যার অবস্থা করুণ। এখানে প্রশাসনের নজর দেয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাতায়াত ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহন সেক্টরে আরো ৪-৫ টি গাড়ি বাড়ানো উচিত। আমাদের হলগুলোর অবস্থা ভালো নয়। এগুলোকে বসবাস উপযোগী করে তুলতে হবে। আমরা জানি খেলাধুলা মানুষের মনকে ভালো রাখে। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য বিনোদের ব্যবস্থা রাখা উচিত। হলের কমনরুম গুলোয় পর্যাপ্ত খেলার সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে। এদিকে প্রশাসনের নজর দেয়া উচিত।


গবেষণা খাতে বাজেট ৫ শতাংশ হওয়া উচিত



বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করতে প্রয়োজন পরিকল্পিত বাজেট প্রণয়ন। বাজেট ই বিনির্মাণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বছরের রূপরেখা। দেশকে স্মার্ট করতে হলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কাজ গবেষণা করা। তাই গবেষণা খাতে বরাদ্দ যত বাড়বে শিক্ষার্থীরা তত বেশি নিজেদেকে গড়ে তুলতে পারবে। বাজেটের বরাদ্দের প্রায় ৮০ শতাংশ চলে যায় অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেছনে। অপরদিকে গবেষণা ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের পেছনে বরাদ্দ নেই বললেই চলে। গবেষণা খাতে বাজেট ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। দেশের প্রান্তিক অঞ্চল থেকে আর্থিকভাবে অসচ্ছল অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন পড়াশোনা করতে। শিক্ষার্থী কল্যাণ কেন্দ্র থাকলেও ঐসকল শিক্ষার্থীদের কোনো সহায়তা প্রদান করা হয় না। শিক্ষার্থীদের সুস্যাস্থ্য নিশ্চিতে মেডিক্যালের আধুনিকায়ন জরুরি।এছাড়াও হলের ক্যান্টিনে ভর্তুকি দেয়া আবশ্যক। দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর জন্য যে বাজেট পাশ হয় তার সঠিক ব্যবহার ও তার স্বচ্ছলতার উপর বাজেটের সফলতা নির্ণয় করে। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি রুখতে না পারলে বাজেট কয়েক গুণ বাড়ালেও তা আদতে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো কল্যায় বয়ে আনবে না।


বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বলতে মানানসই কোন সংখ্যা নয়



সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক বৈশিষ্ট্য যদি হয় সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে জ্ঞান চর্চার সাথে থাকা, তাহলে এর বাজেটের ব্যাপারটিও স্থির কোনো বিষয় নয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বলতে এমন একটি মানানসই সংখ্যা দাবি করি যা দিয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন খাত এবং যৌথভাবে শিক্ষক- শিক্ষার্থীদের গবেষণা খাতের স্বাভাবিক চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার গুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, এমন বাজেটকে বাজেট বলার কোনো অবকাশ থাকে না। শিক্ষার্থীদের অমানবিক অবস্থায় রেখে গালগল্পে ঠাসা বাজেট শেষ পর্যন্ত প্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই হঢে উঠেনা। শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ভয়ংকর দেউলিয়াত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা এই প্রতিকূলতার ভিতর দিয়েও মানসম্মত বাজেটের দাবি নিশ্চই করবো। কেননা এটা শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার রক্ষার অপরিহার্য ব্যাপার। এরসাথে গড়িমসি করার কোনো সুযোগ নেই।


বাড়াতে হবে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ



দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী শান্ত জাবালি বলেন, গত বছরের তুলনায় এই বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রায় ১৫ কোটি বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। এই বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় যদি গবেষণা খাতে ব্যয় করা হয় তাহলে কিছুটা স্বস্তির সংবাদ পাওয়া যাবে। শিক্ষার্থীদের জীবনমান উন্নয়ন, পড়াশোনার পরিবেশ, ডাইনিং এর খাবারের মান উন্নয়ন, চিকিৎসা কেন্দ্রের সুব্যবস্থা, চিকিৎসার পরিধি বিস্তৃত করার পেছনে গতানুগতিক বাজেটের আকার খুবই সংকীর্ণ থাকে। একজন শিক্ষার্থীর ভালো গবেষক হওয়া কিংবা গুণগত পড়াশোনার উন্নয়নের জন্য এই সকল নির্ণায়ক প্রাইমারি বেস হিসেবে কাজ করে। শিক্ষার্থী যদি এই সকল উপাদান নিয়ে সংঙ্কোচহীন থাকে, তাহলে সে পড়াশোনার প্রতি পূর্ণ আত্মনিয়োগ করতে পারে। তাই আমি মনে করি বর্তমান বাজেটের বরাদ্দ শিক্ষাখাতে আরো বাড়ানো উচিত।


বিবার্তা/আয়েশা/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com