সাত বছরের অনুসন্ধান শেষে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১৬ সালে দুদক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সুনির্দিষ্ট’ অভিযোগে ৫ জুন, সোমবার তার বিরুদ্ধে এ মামলা করেন সংস্থাটির উপপরিচালক মো: মশিউর রহমান।
দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রশান্ত কুমার রায় দুদকে স্থাবর অস্থাবর মিলিয়ে এক কোটি ২০ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৬ টাকার হিসাব দুদকে পেশ করে। কিন্তু অনুসন্ধানে তার এই হিসাবের বাইরে আরও এক কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য পেয়েছে দুদক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, সম্পদ অর্জনের বিপরীতে আয়কর নথি অনুযায়ী আসামী ড. প্রশান্ত কুমার রায়ের নামে বেতন ভাতাদি হতে আয়, ব্যাংক সুদ হতে আয়, কৃষি আয়, কর অব্যাহতি ও করমুক্ত আয়সহ সর্বমোট ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৩ হাজার ২৮৭ টাকার বৈধ আয় পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ২০২০-২১ করবর্ষ পর্যন্ত পারিবারিক ব্যয় ২ কোটি ১ লাখ ২৬ হাজার ১৭৮ টাকা বাদ দিয়ে এক কোটি ২৫ লাখ ৪০ হাজার ২৪৭ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
মামলা এজাহারে আরো বলা হয়, প্রশান্ত কুমার রায় ও তার উপর নির্ভরশীলগণের নামীয় সোনালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক ও মেঘনা ব্যাংকের ১২টি শাখায় বিভিন্ন তারিখে ১৩ কোটি ২৪ লাখ ৩ হাজার ৮৫০ টাকা জমা ও ১২ কোটি ৯৮ লাখ ৭২ হাজার ১৮৩ টাকা উত্তোলন করেন। সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে তার ও তার উপর নির্ভরশীলগণের বর্ণিত লেনদেন অস্বাভাবিক ও অসঙ্গতিপূর্ণ।
এজাহারে বলা হয়, ড. প্রশান্ত কুমার রায়ের বোনের ছেলে মনোজ কুমার প্রায় ৩৫ বছর ধরে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ড. প্রশান্ত কুমার রায় ২০০৭ সালে ওই ব্যক্তির নামীয় ভূমির আমমোক্তার নিযুক্ত হয়ে ২০১৮ সালে ১ কোটি ৫৫ টাকা মূল্যের জমি বিক্রি করেন। একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী ব্যক্তির নিকট থেকে আমমোক্তারনামা গ্রহণ ও ভূমি ক্রয় বিক্রয় করার বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি গ্রহণ না করে অপরাধ করেছেন। এছাড়া ওই জমি বিক্রয় বাবদ প্রাপ্ত অর্থ হতে ৫০ লাখ টাকা তিনি তার ভাগ্নে মনোজ কুমারকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে দুদক।
প্রশান্ত কুমার রায় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৬ সালের ২০ মার্চ থেকে ২০১৭ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই সময় সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ থেকে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাৎসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পায় দুদক।
জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকে নিজের সম্পদ বিবরণী দাখিলও করেন সরকারে এই সাবেক সচিব। ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর তাকে চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন সংস্থাটির তৎকালীন উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।
এরপর আরও অনুসন্ধানের পর মামলার সিদ্ধান্তে আসেন তদন্ত কর্মকর্তা।
বিবার্তা/সানজিদা/এসএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]