শিরোনাম
এক জামদানিপ্রেমীর স্বপ্নযাত্রা
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২১, ১৮:০০
এক জামদানিপ্রেমীর স্বপ্নযাত্রা
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

‘‘ছোটবেলা থেকেই আমার জামদানি শাড়ির প্রতি একটা আলাদা আকর্ষণ কাজ করতো। যখন আমার মা জামদানি শাড়ি পরতো, তখন আমার শিশু মনে দোলা দিতো। সময়ের স্রোতে মাঝে কেটে গেলো লম্বা একটা সময়। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে এসে জামদানির প্রতি ভালোবাসা এবং আগ্রহ থেকেই সময় পেলেই বিভিন্ন তাঁতিপল্লিতে ঘুরতে যেতাম। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই এভাবে টানা সাত বছর জামদানি নিয়ে জানার চেষ্টা করেছি। সময়ের পালা বদলে উদ্যোক্তা জীবনে এসে সে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে মূল ফোকাস করি জামদানিকে। আর তার ফলও পেয়েছি। আজ আমি সফল উদ্যোক্তা।’’


এভাবেই নিজের উদ্যোক্তা জীবনের কথা বলছিলেন দেশীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্য জামদানি শাড়ি নিয়ে অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘কাকলী’স অ্যাট্যায়ার’র স্বত্বাধিকারী কাকলী তালুকদার।


তিনি জামদানি শাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি আইটি নিয়ে অনলাইনে লেখাপড়া করার জনপ্রিয় গ্রুপ ডিজিটাল স্কিলস ফর বাংলাদেশ (ডিএসবি)-এর মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেসাথে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য নিয়মিত লেখালেখি করছেন।


উদ্যোক্তা জীবনের নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা। তার সব পণ্যের মধ্যে দেশের ঐতিহ্যবাহী জামদানির পণ্যই অন্যতম। তার এই সফলতার পেছনে রয়েছে আরো অনেক গল্প।


কাকলী তালুকদারের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নরসিংদী জেলায়। বাবা-মায়ের চতুর্থ সন্তান তিনি। নরসিংদীর নারায়ণ পুর সরাফত উল্লাহ উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। পরে ঢাকার লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক ও ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে ২০১০ সালে ফিন্যান্স ম্যানেজমেন্টের উপরে বিবিএ সম্পন্ন করেন। এরপর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি)-তে ২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত এডেক্সেল ট্রেইনার হিসেবে ই-কমার্স এবং ফিন্যান্স বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।


শিক্ষকতা পেশা নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটছিল কাকলীর। জীবন চলছিল আপন গতিতে। সময়ের সাথে জীবনের মেলবন্ধন করতে বিয়ে করেন। নতুন জীবন। পরিবেশ, পরিস্থিতি, দায়িত্ব সব মিলে এমবিএটা অর্ধেক করার পর আর সম্পন্ন করা হলো না তার। একটা সময় শিক্ষকতার চাকরিটাও ছাড়তে হয় তাকে।



কাকলীর ভাষ্য, বিয়ের পরে সাংসারিক দায়িত্বের কারণে শিক্ষকতা পেশাটা ছেড়ে দেই। স্বামী, সংসার নিয়েই কাটতো ব্যস্ত সময়গুলো। সংসারের কাজ করে যেনো দিন শেষ হতে চাইতো না। দুটি বছর অনেকটা হতাশায় কাটে। এরপর ভাবতে থাকি ঘরে বসে কী করে আয় করা যায়। তখন মাথায় আসে অনলাইনে দেশীয় কয়েকটা শাড়ি নিয়ে বিজনেস শুরু করলে কেমন হয়। নিশ্চয় মন্দ হবে না।


কর্মোদ্যমী কাকলী জীবনকে নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করেন। ঐতিহ্যবাহী দেশীয় কয়েকটি শাড়ি নিয়ে কাজ করতে মা ও প্রিয়তম স্বামীর সাথে আলাপ করলে তারা আরো দ্বিগুণ উৎসাহ দেন। তার ভাবনায় যোগ হয় নতুন পালক। দুজনের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় ২০১৯ সালের ১৩ জুনে মাত্র ৩০ হাজার টাকা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় তার ফেসবুকভিত্তিক উদ্যোগ ‘কাকলী’স অ্যাট্যায়ার’র (Kakoly's Attire)।


কাকলী বলেন, শুরুতে বিজনেসে তেমন সাড়া না পেলেও মায়ের উৎসাহ ছিল বরাবরই একটু বেশি। মা বলতেন, তোমার শাড়ি বিক্রি না হলেও আমি কিনে নেবো। তবুও ‍তুমি হাল ছেড়ো না। সেই থেকে নিজের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।


উদ্যোগের শুরুতে কাকলীকে কেউ চিনতেন না। ফেসবুকে শাড়ি বিক্রির উদ্দেশে ‘কাকলী’স অ্যাট্যায়ার’নামে একটা বিজনেস পেজ এবং গ্রুপও খুলেন। স্বপ্নের উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে তিনি বিভিন্ন পেজ, গ্রুপে ঘোরাঘুরি করতেন এবং দেখতেন। পেজগুলো একের পর এক সেলস পোস্ট দিয়ে যাচ্ছে আর লাইভ শেয়ার করছে। কাস্টমার এবং সেলারের মাঝে সুসম্পর্ক গড়ে উঠছে না। জানাশোনা হচ্ছে না। তখন তিনি সে পেজগুলোকে এড়িয়ে যেতেন। কোনটা অথেন্টিক পেজ বা কারা পণ্য সম্পর্কে ভালো বুঝেন কিছুই জানতে পারতেন না। সে কারণেই তিনি ব্যতিক্রম কিছু খুঁজতে লাগলেন। যেখানে কাস্টমার এবং সেলারের মাঝে সুসম্পর্ক থাকবে এবং পণ্য সম্পর্কে জানতে পারবে।


এভাবে ফেসবুকে দিনরাত সময় দিতে থাকেন অধ্যবসায়ী এই উদ্যোক্তা। দিনটা ছিল ২০১৯ সালের ২৪ আগস্ট। ফেসবুকে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ খুঁজে পান দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জনপ্রিয় ফেসবুক প্লাটফর্ম উই গ্রুপের। কৌতূহল নিয়ে গ্রুপে জয়েনও করেন।


আত্মপ্রত্যয়ী এই উদ্যোক্তা বলেন, আমি যখন উই গ্রুপে জয়েন করি, তখন দেখতাম ই-ক্যাবের সাবেক ও প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যার দেশীয় পণ্যের প্রচার বৃদ্ধির জন্য সবাইকে দেশীয় পণ্য নিয়ে লেখালেখি করার জন্য উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন আমি উই গ্রুপের পাশাপাশি অনলাইনে ইংরেজি শেখার জনপ্রিয় প্লাটফর্ম সার্চ ইংলিশ গ্রুপে নিয়মিত ছিলাম। ওই গ্রুপে একদিন জামদানি নিয়ে একটা পোস্ট দেখি। পড়ে ভাল লাগায় আমি লম্বা কমেন্টস করি। তখন স্যার ওই কমেন্টের রিপ্লাইয়ে আমাকে এটা পোস্ট আকারে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। আমি কমেন্টসটা পোস্ট করি। সেটি অনেক বেশি রিচ হয়। তখন স্যার ওই পোস্টের কমেন্টে আমাকে বলেন, আপু এখন থেকে আপনি জামদানি নিয়ে নিয়মিত লিখবেন। এরপর উই গ্রুপে টানা ৪০ দিন জামদানি নিয়ে পোস্ট দেই। আমার এই কঠোর পরিশ্রম ও একনিষ্ঠতায় স্যার জামদানি ওয়েব ঘোষণা করেন। যেটি পরে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্য দিয়ে আমি সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠি।



সকলের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় শুধু লিখতে থাকি। স্যার আমাকে বিভিন্নভাবে গঠনমূলক পরামর্শ দিতে শুরু করেন। আমি সে অনুসারে লিখেছি। ওই সময় ঐতিহ্যবাহী মনিপুরী, টাঙ্গাইলের তাঁতের, নারায়ণগঞ্জের হাতে বোনা জামদানি শাড়ি নিয়ে কাজ করতাম। পরবর্তীতে স্যার আমাকে বলেন, আপু এতোগুলো ব্র্যান্ডের শাড়ি নিয়ে কাজ না করে, শুধু একটি ব্র্যান্ডের প্রতি ফোকাস করলে সেটিতে সফলতা আসবে দ্রুত। সে ধারণা থেকে শুধুমাত্র জামদানি নিয়ে কাজ করা শুরু। সে যে পথচলা শুরু আর পেছনে তাকাতে হয়নি।


জামদানি নিয়ে বেশি পরিচিতি পাওয়ার কারণ হিসেবে কাকলী বলেন, এটি সম্ভব হয়েছে শুধুই পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের কারণে। উইয়ের রাজিব স্যারের কাছে শিখেছি কীভাবে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং করতে হয়। সেসাথে ই-কমার্স বিজনেসে পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের গুরুত্ব। খুব ভাল করে বুঝতে পেরেছি মানুষ যাকে চেনে, তাকেই বিশ্বাস করে ও তার কাছেই পণ্য কেনে। অনলাইন ব্যবসায়ে ব্র্যান্ডিংয়ের সাথে এই ব্যক্তিগত পরিচিতর বিষয়টাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। তার সাথে জরুরি হলো একটি কাজের স্কিল বা সে বিষয়ে পারদর্শিতা। এর জন্য প্রতিদিন পড়তে হয়, জানতে হয়। আমি মনে করি, হঠাৎ করে কোনো ধারণা এবং পরিকল্পনা ছাড়া কোনো ব্যবসা শুরু করলে সেখানে সফল হওয়া অনেক কঠিন। আমার নিরন্তর চেষ্টা, অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রম, জানার আগ্রহ এবং স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য আজ এ পর্যায়ে এসেছি।


বর্তমানে 'কাকলি'স অ্যাটিয়্যার' প্লাটফর্মে শুধু জামদানি দিয়ে তৈরি পণ্য বিক্রি করা হয়ে থাকে। জামদানি শাড়ি, পাঞ্জাবি, টু-পিস, থ্রি-পিস। সেসাথে জামদানি নিয়ে তৈরি প্রথম ফিউশন বাচ্চাদের জামদানি গাউন, কুশন কাভার, ব্রাইডাল কটি, বেবি শাড়ি, ওয়ালমেট ইত্যাদি। এছাড়াও জামদানি নিয়ে আরও কী করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।


দেশি জামদানি চেনার বিষয়ে কাকলীর ভাষ্য, জামদানি হলো আমাদের দেশের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য। জামদানির ডিজাইন ফ্যাক্টরির মেশিনে করে নিলে সেটাকে ঢাকাই জামদানি বলা যায় না। আর সেখানে জামদানির বিশষত্বও থাকে না। দেশি জামদানিগুলো কার্পাস জাতীয় তুলোকে সুতো বানিয়ে তাও বিশেষ প্রক্রিয়ায় রঙ করে রোদে শুকিয়ে তবেই তাঁতে ফেলা হয়। ঢাকাই জামদানি পাবেন কটন, হাফসিল্ক ও রেশম সুতোয় বোনা। হাতে বোনা জামদানির চকচকে রঙ থাকে না। আসল জামদানির রঙগুলো চাকচিক্যহীন তবে চোখ জুড়িয়ে যায়। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান জামদানি র সুতা হবে নায়লন জাতীয় সুতো।


চকচকে রঙ থাকলেও একটি আঁশ ধরে যদি টান দেন জড়িয়ে যাবে জমাট হয়ে যাবে। আর যদি পোড়ান সেটা জ্বলে যাবে না। প্লাস্টিক পোড়ার মত দলা হয়ে যাবে। অন্যদিকে আসল জামদানি টান দিলে জড়াবে না। পোড়ালে ছাই হয়ে যাবে। ইন্ডিয়ান মেশিনে তৈরি জামদানির উল্টোপিঠ খসখসে হবে। এছাড়াও অনেক বিষয় আছে অনুভবের। হাতে বোনা শাড়িটি যে আরাম দিতে পারে, মেশিনে বোনা শাড়ি তা পারে না।



জামদানির দাম কেমন হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, জামদানি লাখ টাকার হতে পারে। আবার ৩ হাজারও হতে পারে। দাম নির্ভর করে জামদানিতে ব্যবহৃত সুতো, রঙ, ডিজাইন ও বুননের উপর। তবে একটি কথা ঠিক যে, জামদানি একেবারে সস্তায়ও মেলে না। একটি শাড়ি বুনতে তাঁতিদের মিনিমাম তিন দিন থেকে ছয়মাস, কখনো কখনো এক থেকে দুই বছরও লেগে যায়। তবে শুধু উচ্চবিত্ত শ্রেণির নারীরাই আসল জামদানি পরবেন এ বিষয়টিকে আমি বদলে দিতে চেয়েছি। তাঁতির হাতের বোনো জামদানি আমি তুলে দিয়েছি মধ্যবিত্তের হাতেও। আমি ৩০০০-৪০০০ টাকায়ও হাতে বোনা জামদানি বিক্রি করেছি।


কাজ করতে গিয়ে কখনো কোনো প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কাকলীর ভাষ্য, শূন্য থেকে কোন উদ্যোগকে দাঁড় করাতে সবাইকেই নানান ধরনের প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। এটাই নিয়ম। আমিও এ নিয়মের ব্যতিক্রম ছিলাম না। আমাকেও নানান প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তবে কখনো সেসব বিষয়ে আমি নিজের সময় নষ্ট করিনি বা সেসব ভেবে কষ্টও পাইনি। কারণ কোন পথই সরল বা সহজ নয়। কিছু বাঁধা থাকবেই এবং সেগুলো অতিক্রম করেই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আর একজন নারী হিসেবে প্রতিবন্ধকতা থাকবেই। তাই বলে থেমে থাকা যাবে না। যুদ্ধ করছি। সংগ্রাম করছি। এটাই উদ্যোক্তা জীবন।


কাকলীর উদ্যোক্তা জীবনে সফল হওয়ার নেপথ্যে যাদের অবদান সবচেয়ে বেশি তারা হলেন তার মা-বাবা, ভাই ও স্বামী। তিনি বলেন, মায়ের অনুপ্রেরণা, ভাই এবং স্বামীর বিরামহীন আন্তরিক সহযোগিতা আমাকে উদ্যোগের শুরু থেকেই উৎসাহিত করেছে। কিন্তু যার কথা না বললেই নয়, যিনি আমাকে প্রতিনিয়ত প্রতিকূল পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, আমার মেন্টর, তিনি হলেন শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যার। স্যারের প্রতিটি উপদেশ আমাকে একজন সফল উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করেছে। রাজিব স্যারের প্রতিটি পরামর্শ আমি মেনে চলেছি, এরজন্য আজকে সবাই আমাকে এক নামে চেনে। এই তিনজন মানুষের অবদান আমার সফলতার মূলমন্ত্র বলতে পারেন।



ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট রাজিব আহমেদ যখন কোনো ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে দেশি পণ্যের উদ্যোক্তা হিসেবে কাকলীকে রোল মডেল হিসেবে প্রশংসা করেন তখন গর্বে তার মনটা ভয়ে উঠে। ওই অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে কাকলী বলেন, এই তো সেদিন স্যার সবার সামনে আমার বিষয়ে বলেছেন কাকলী আপুকে আমি চিনি ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে। তাকে তখন বলেছিলাম জামদানি নিয়ে যা যা জানেন তা পোস্ট দিয়ে শেয়ার করতে। তখন অনলাইনে দেশি পণ্য ততটা জনপ্রিয় ছিল না। তিনি আমার সাথে এদিকে হাঁটা শুরু করেন। নিয়মিত সময় দেন। এভাবে ধীরে ধীরে তার কথা আমি তুলে ধরা শুরু করি। এক সময় তিনি অন্য অনেক দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের জন্য রোল মডেল হিসেবে দাঁড়িয়ে যান। ফেসবুকে লাইভ না করে, লিংক শেয়ার না করে, সেল পোস্ট না দিয়েও যে বিক্রি করা যায় সেদিকে অন্যতম সেরা উদাহরণ হলেন কাকলি আপু। আশা করি তিনি এক সময় অনেক ভাল করবেন।


নতুন উদ্যোক্তাদের প্রতি কাকলী বলেন, যারা একবারে নতুন এই পেশায় আসতে চান তাদের জন্য আমার পরামর্শ থাকবে, প্রথমে যে পণ্য নিয়ে আপনি কাজ করতে চাইছেন, অন্তত এক বছর সেই পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন। ই-কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করুন, বিশেষ করে কনটেন্ট রাইটিংয়ের প্রতি মনোযোগী হোন। যেহেতু অনলাইনভিত্তিক উদ্যোগ, তাই অবশ্যই টেকনিক্যাল দিকেও বেসিক ধারণা থাকতে হবে। কেননা এখানে প্রতিনিয়তো নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তাই নিজের উদ্যোগকে সিরিয়াসভাবে নিতে হবে।


ফেসবুকে ‘কাকলী’স অ্যাট্যায়ার’ প্লাটফর্মের মাধ্যমে অনলাইন ব্যবসার বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এছাড়া একই নামে একটি গ্রুপ আছে, যেখানে জামদানি নিয়ে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা হয়ে থাকে। একটি ওয়েবসাইট আছে, যেখানে কাস্টমারের রিভিউসহ জামদানি বিষয়ে সব ধরনের তথ্য তুলে ধরা হয়। ফেসবুক পেজ এবং মোবাইল কলের মাধ্যমে সবধরনের অর্ডার নেয়া হয়। সব পণ্য ক্যাশ অন হোম ডেলিভারি দেয়ার চেষ্টা করা হয় এবং বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে কাস্টমার পেমেন্ট করতে পারেন। গত দুই বছরে জামদানি নিয়ে বেশ কয়েকটি ইভেন্ট হয়েছে। তার মধ্যে জামদানি কাস্টমার মিট আপ সবার মাঝে সাড়া ফেলেছে। সেখানে মূল আকর্ষণ ছিল জামদানি ব্রাইডাল শাড়ি।


‘কাকলী’স অ্যাট্যায়ার’ নিয়ে অনেক দূর যেতে চান স্বপ্নবাজ এই উদ্যাক্তা। কাকলী বলেন, আমার ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য ই-কমার্সের মাধ্যমে তাঁতির হাতে তৈরি আসল জামদানিকে দেশের ৬৪ জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। ইতিমধ্যে আমার উদ্যোগের জামদানি সরাদেশহ প্রবাসীদের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পৌঁছে গেছে। জামদানির সাথে আমার নাম উচ্চারিত হয় এটা আমার জন্য একজন বাঙালি হিসেবে গর্বের। কিন্তু আমি সব সময় নিজেকে দেশীয় পণ্যের একজন উদ্যোক্তা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। ভবিষ্যতে জামদানি নিয়ে স্টার্টআপ করার কথাও চিন্তা করছি। জামদানি দিয়ে পোশাকে ফিউশন আনারও পরিকল্পনা আছে।


বিবার্তা/গমেজ/জেএইচ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com