শিরোনাম
সৌন্দর্যের আধুনিক চিকিৎসায় মানবতার অগ্রদূত হতে চান ডা. ইরিন
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২১, ১৭:৪৬
সৌন্দর্যের আধুনিক চিকিৎসায় মানবতার অগ্রদূত হতে চান ডা. ইরিন
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

ছোটবেলায় পাইলট হয়ে আকাশে ওড়ার ইচ্ছে হতো তার। অন্যদিকে নানা ছিলেন ডাক্তার। বাসার চেম্বারে রোগীরা আসতেন। নানা তাদের বিনামূল্যে সেবা দিতেন। এসব দেখতে দেখতে কেটে যায় স্কুলের জীবন। সময়ের পালা বদলে মানুষের সেবা করার পোকাটা তার মাথায় ঢুকে যায়। তখন থেকেই তার সার্জারি নিয়ে পড়ার ইচ্ছে হয়। উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পরে সিদ্ধান্ত নেন ডাক্তারই হবেন। হলেন ডাক্তার। তবে ত্বক বিশেষজ্ঞ বা ডার্মাটোলজিস্ট। সুস্থ ত্বক এবং সৌন্দর্যের আধুনিক চিকিৎসার স্পর্শ দিতে চান প্রতিটি সাধারণ নাগরিককে। তাই মানবতার আদর্শ মাদার তেরেসার সেবার জীবনাদর্শ নিয়েই মানুষের সেবা করছেন এই ত্বক বিশেষজ্ঞ।


বলছিলাম রিজুভা কসমেসিউটিক্যালের ফাউন্ডার এবং প্রধান নির্বাহী পরিচালক ডা. তাওহীদা রহমান ইরিনের কথা। তিনি একজন সফল ডার্মাটোলজিস্ট এবং ওয়েলনেস কনসালটেন্ট। শিওরসেল মেডিকেল বিডি লিমিটেডে রিজেনারেটিভ অ্যাস্থেটিক কনসালটেন্ট হিসেবে মানুষের শরীরের ত্বকের সমস্যার সমাধানের কাজ করেন। ডা. ইরিনের এই ত্বক বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠার পেছনে রয়েছে আরো অনেক গল্প। সে গল্পই বিবার্তার পাঠকদের জানাচ্ছেনউজ্জ্বল এ গমেজ।



ডা. তাওহীদা রহমান ইরিনের জন্ম গাইবান্ধা জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গাইবান্ধায় নানা বাসায় কাটে তার শৈশব, কৈশোরের দিনগুলো। বাবা ও মা দুজনেই পেশায় ছিলেন শিক্ষক। তিন বোনের মধ্যে ডা. ইরিন সবার ছোট।


ঢাকা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন ডা. ইরিন। এবার তার লক্ষ্য মেডিকেলে উচ্চশিক্ষা লাভ। স্বপ্ন বাস্তবায়নে এবং জানার ও শেখার নেশায় পাড়ি জমান থাইল্যান্ডে। এরপর তিনি ডার্মাটোলজি ও ডার্মাটো সার্জারি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য থাইল্যান্ডে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে মেডিকেল বিজ্ঞানে ভর্তি হন। সময় বয়ে চলে। দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে পড়ালেখা করেন এবং সফলতার সঙ্গে কৃতকার্য হন। অর্জন করেন ডার্মাটোলজি এবং ডার্মাটো সার্জারি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি।


প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চশিক্ষা নেয়ার পর এবার বাস্তবে তা প্রয়োগ করার পালা। কোথায় যাওয়া যায়। শেষে আফ্রিকায় যান তরুণ এই ডার্মাটোলজিস্ট। সেখানে পেশাগত জীবন শুরু হয় তার। তিনি নাইজেরিয়া সরকারের একমাত্র সনদপত্রধারী নারী চিকিৎসক যিনি ১০ বছর যাবৎ এই পদে ছিলেন। ডা. ইরিন বলেন, দেশের পড়াশোনা শেষ করে উচ্চশিক্ষার জন্য আফ্রিকায় যাই। সেখানে গিয়ে দেখি প্রচুর স্কিন রিলেটেড সমস্যা। রোগী যারাই আসেন ত্বকের সমস্যা নিয়ে আসেন। যেহেতু সার্জারিতে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব হচ্ছে না আবার ওখানকার বেশিরভাগ মানুষ ত্বকের সমস্যায় ভুগছে, এটা দেখেই এই সেক্টরে পড়াশুনা করার অনুপ্রেরণা জাগে।


আফ্রিকায় দীর্ঘদিন কাজের অভিজ্ঞতার পর নিজেকে আরো দক্ষ করার তাগিদ অনুভব করেন তিনি। শেখার নেশায় এবার গেলেন অস্ট্রেলিয়ায়। সেখান থেকে রিজেনারেটিভ মেডিসিনের ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন অদম্য এই ত্বক বিশেষজ্ঞ।



বিদেশ থেকে ডাক্তারি পড়ালেখা এবং ট্রেনিং নিয়ে ২০১৪ সালে দেশে ফেরেন ডা. ইরিন। এসেই দেশের বিভিন্ন ত্বকের সৌন্দর্যের সচেতনতামূলক প্রোগ্রামগুলোতে অংশগ্রহণ করা শুরু করেন। ত্বক বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে মেয়েদের নিয়ে যেসব বিউটি কনটেস্টগুলো করা হয় সেগুলোতে অংশগ্রহণ করেন ডা. ইরিন। কীভাবে হয়, কী কী করতে হয়, এসব বিষয়ে অভিজ্ঞতা করেছেন। দেশে ফিরে যখন দেখলেন আমদের এখানে এ সেক্টরে বিউটি কনটেস্ট বিষয়টাতে দুর্বলতা রয়েছে। তখন এ সেক্টরটিকে ডেভেলপ করার জন্য মেয়েদের বিভিন্ন রকম গ্লুমিং সেশনের মাধ্যমে তাদের ট্রেনিং দেয়ার পরিকল্পনা করেন উদ্যমী ত্বক বিশেষজ্ঞ। এই বিউটি কনটেস্টে অংশগ্রহণ করার জন্য একজন মেয়েকে যে তার শারীরিক-মানসিক সুন্দর্য, সামাজিক স্বাস্থ্য প্রয়োজন হয় সেটাকে গড়ে তুলতে যে মেন্টরিং করা, সেশন দেয়া, সেবা দেয়া, যত্ন নেয়া সে কাজ করেন তিনি।


মেয়েদের বিউটি নিয়ে দেশে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘বিউটি গ্লুমিং’ ক্যাম্পেইনে ত্বক বিশেষজ্ঞ এবং মেন্টর হিসেবে কাজ করেন। ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মেয়েদের সৌন্দর্য, স্বাস্থ্য সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে ক্যাম্পেইনটা করা হয়। ওই প্রোগ্রামটা সচেতন মহলে ব্যাপক প্রভাব পড়ে। এরপরে মিডিয়াতে কাজ শুরু করেন। বিভিন্ন রকম বিউটি ক্যাম্পেইন, মেকাপ ফেস্টিবল, মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম করেন। সাথে প্রিন্ট মিডিয়াতে এসব বিষয়ে লেখালেখি করতে থাকেন। একসাথে তিনটা সেক্টরে সম্পৃক্ত হয়ে যান। টিভির প্রোগ্রামে, লেখালেখি ও বিউটি ক্যাম্পেইনে। তিনটা সেক্টরের কাজ নিয়ে যাত্রা শুরু হয় তার মানুষের সেবার।


২০১৯ সালে এসব সৌন্দর্য সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন দেখার পরে আন্তর্জাতিক ‘সু’ কোম্পানি বাটা ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে স্কুলের বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা সু’র আন্তর্জাতিক ক্যাম্পেইন ‘বি ফার্স্ট’-এর জন্য ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হওয়ার অফার পান। এর মধ্য দিয়ে দেশে প্রথম ত্বক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে বাটার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।


বাংলাদেশে প্রথম বিভিন্ন ধরনের বিউটি ক্যাম্পেইন এবং ত্বকের সৌন্দর্য ও সুস্বাস্থ্য ধরে রাখার বিষয়ে ব্যাপক কাজ করেছেন, দেশে তৈরি করেছেন আধুনিকায়নে নতুন ধারা ডা. ইরিন। উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে রোগীদের বিভিন্ন রোগের দ্রুত সমাধান দিয়ে থাকেন। অভিনয় শিল্পী ও সংগীতশিল্পীদের ত্বক ও চুলের চিকিৎসা সেবা দিয়ে তাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। ডা. ইরিন রিজেনারেটিভ মেডিসিনের মাধ্যমে স্টেম সেল এবং পিএ পিআরপি থেরাপি প্রক্রিয়ায় বয়স ধরে রাখা, ত্বক ও চুলের যত্নের এক অভিনব চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। তিনিই বাংলাদেশে প্রথম ইন্ট্রাভেনাস নিউট্রিশনাল থেরাপি নিয়ে আসেন চিকিৎসা ব্যবস্থায়।


প্রচারে প্রসার। ধীরে ধীরে মানুষের কাছে পরিচিতি বাড়তে থাকে। বিশেষ করে বিউটি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মেয়েদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেন। অন্যদিকে, মিডিয়ার বৌদলতে বাড়তে থাকে রোগীর সংখ্যা।


ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের মেয়ে এবং করপোরেট লেভেলে মেয়েদের সাথে সুন্দর্য সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করার সময় তিনি যেটা উপলব্দি করেন যে, মেয়েদের মধ্যে সৌন্দর্য চর্চার জন্য যেসব প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করতে হয় সে বিষয়ে তাদের ধারণা কম। পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তারা বুঝতে পারেন না কোন প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করবেন, কীভাবে করবেন। এই না বোঝার কারণে অনেক সময় তারা ভুল প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন। এরপরে ত্বকের নানান সমস্যা দেখা দেয়। তখন মেয়েদের এসব সমস্যার সমাধানের জন্য কি করা যায় ভাবতে থাকেন। পরে অনেক ভেবেচিন্তে, বিদেশের অভিজ্ঞাতার আলোকে সিদ্ধান্ত নেন রিজুভা কসমেসিউটিক্যাল চালু করার। যার উদ্দেশ্যই মেয়েদের সৌন্দর্য চর্চার মাধ্যমে ত্বকের নানান সমস্যার সমাধান করা।


পরিকল্পনা অনুসারে রিজুভা কসমেসিউটিক্যালের যাত্রা শুরু করেন ডা. ইরিন। আসলে রিজুভা হলো ইরিনের একটি স্বপ্ন। যার মধ্য দিয়ে শুধু মানুষের কাছে ত্বক সৌন্দর্যের প্রোডাক্ট পৌঁছানো না, যেখানে একসাথে থাকবে বিশ্বাস, নির্ভরতা ও সৌন্দর্য। সেসাথে মানুষের কাছে একটা মেসেজ পৌঁছে দেয়া যে, নিজের স্বাস্থ্যের ও সৌন্দর্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হবে। আজীবন সৌন্দর্য ধরে রাখতে হবে।



রিজুভা কসমেসিউটিক্যালসের মধ্যে রয়েছে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু অত্যাধুনিক প্রোডাক্ট। এগুলোর মধ্যে অন্যতম রিজুভা সান স্লিল্ক মাস্ক, রিজুভা সান স্লিল্ক সেরাম ও স্লিপিং মাস্ক। রিজুভা সান স্লিল্ক রোদে পোড়ার হাত থেকে ত্বককে সুরক্ষা করে। প্রাথমিক মেকাপে সাহায্য করে। ত্বককে মশ্চারাইজ করে এবং হেলদি রাখে। স্লিপিং মাস্ক। এটি রাতের বেলায় ত্বককে নরম, কোমল এবং মসৃণ করতে সাহায্য করে। আর রিজুভা সান স্লিল্ক সেরাম। ত্বককে মশ্চারাইজ ও উজ্জ্বল করে।


ডা. ইরিন প্রোডাক্টগুলি বিদেশ থেকে এনে গবেষণা করে দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের উপযোগী করে নিজের ব্র্যান্ড হিসেবে নাম দিয়েছেন রিজুভা কসমেসিউটিক্যালস। প্রত্যেকটা প্রোডাক্টের গুণগতমান পরীক্ষা করে দেখে তারপর কাস্টমারদের কাছে বিক্রি করা হয়। ত্বকের সুন্দর্য বৃদ্ধির এই প্রোডাক্টগুলি এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় ফার্মেসিতে পাওয়া যাচ্ছে। রিজুভা কসমেসিউটিক্যালসের নিজস্ব অনলাইন প্লাটফর্মও রয়েছে। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে অর্ডার করলে সেটি কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয়।


প্রোডাক্টের মূল্য সম্পর্কে ডা. ইরিনের ভাষ্য, দেখুন মানুষের ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির এই প্রোডাক্টগুলি আন্তর্জাতিক গুণগতমানসম্পন্ন। দেশের বাইরে থেকে আনার ফলে একটু মূল্যটা বেশিই হয়ে থাকে। তবুও মানুষের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী রাখার চেষ্টা করি। বিদেশ থেকে কিনে আনতে যে খরচটা হয় সেটাই নিয়ে থাকি। যতটা সম্ভব সুলভ মূল্যে দিয়ে থাকি। আমি চাই মানুষ প্রোডাক্টগুলি ব্যবহার করে উপকৃত হোক। সৌন্দর্য সচেতন হোক। ত্বকের যত্নে সবাই উৎসাহিত হোক।


ডা. ইরিন মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক প্রোগ্রামের পাশাপাশি বিভিন্ন সোশ্যাল ক্লাবের সাথে জড়িত আছেন। যেমন- ইয়থ বাংলা কালচারাল ফোরামের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সৌন্দর্য চর্চার অনলাইন প্লাটফর্ম সাজগোজডটকমের উপদেষ্টা হিসেবেও আছেন। এসব সেবামূলক সোশ্যাল ক্লাবের মাধ্যমে সেবা দিয়ে থাকেন। নিজেরও সেবামূলক একটা ফান্ড আছে। রিজুভা কসমেসিউটিক্যালসের প্রোডাক্টগুলো বিক্রির একটা অংশ এই ফান্ডে চলে যায়। সেখান থেকে সুবিধা বঞ্চিত, অসহায় শিশু এবং ক্যান্সার আক্রান্ত নারীদের সাধ্য মতো আর্থিকভাবে সাহায্য করা হয়।


ডা. ইরিন বলেন, রিজুভার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো মানুষের মধ্যে বিশ্বাস ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানো। ভবিষ্যতে আমার ইচ্ছে আছে সারাদেশের মানুষের কাছে প্রোডাক্টগুলো আরো সুলভ মূল্যে পৌঁছে দেয়ার। আর সেই টাকা দিয়ে রিজুভা ফাউন্ডেশন তৈরি করার। যেখান থেকে গরিব, অসহায় নারী এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে চাই।


মানুষের সেবার ব্রত নিয়ে প্রতিদিন একটু একটু করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন ডা. ইরিন। এভাবে জীবনের প্রাপ্তির ঝুলিটাও বাড়ছে। মানুষের কল্যাণে কাজ করে পেয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের অফুরান ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং দোয়া। ডা. ইরিন বলেন, যখন একজন রোগী সুস্থ হয়ে ফোনে কল করে আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেন, আপা আমি এখন পুরো সুস্থ। আপনার প্রোডাক্টগুলি খুব ভাল। আপনার চিকিৎসা পদ্ধতি খুব ভাল। সেশনগুলো অনেক ভাল ছিল। তখন এক অজানা ভালোলাগায় মনটা ভরে যায়। এছাড়াও মানুষের জন্য কাজ করে গত ১ সেপ্টেম্বর ত্বক বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেস্ট ওয়েলনেস কনসালট্যান্ট ক্যাটাগরিতে ‘অনলাইন রিয়েল হিরোজ অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ পুরস্কার পান তিনি।


ডা. ইরিন আজ যা হয়েছেন সব কিছুর জন্য ‍কৃতজ্ঞতা জানাতে চান তার পরিবারকে। তার এ পর্যন্ত আসার পেছনে পরিবার, স্বামী ও সন্তানের ভূমিকা অনেক বেশি বলে জানান তিনি। পরিবার তার এই সেবামূলক কাজের অনুপ্রেণা, মানসিক শক্তির উৎস। সেই সাথে ধন্যবাদ জানাতে চান তার বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রিয়জন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের, যাদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং উৎসাহে অনেক কঠিন সময়ে কাজগুলো সহজভাবে করতে পেরেছেন। আর বিশ্ব মানবতার আদর্শ ও বিশ্বমাতা মাদার তেরেসা হলেন তার মডেল। বিশ্বমাতার আদর্শ অনুসারে এগিয়ে যেতে চান তিনি।


মানুষের সেবাই এখন তার ধ্যান-জ্ঞান। পেশা-নেশা সবই মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে ঘিরে। তাই এসব নিয়েই নিয়মিত অনলাইনে শো করা, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে ভিডিও বানানো তার নিত্যদিনের কাজ। তার রক্তে মিশে গেছে মানুষের সেবা। আর এসব শোগুলোর প্রোডিউচার এবং ডিরেক্টর ডা. ইরিন নিজে। এবিষয়ে তার ভাষ্য, রিজুভা কসমেসিউটিক্যালের একটা অনলাইন পেজ আছে। এটাতে মিউজিক শো, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে নিয়মিত শো করি। এগুলোর প্রোডিউচার এবং ডিরেক্টর আমি। এসব নিয়েই অবসর কাটে আমার।


কাজের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইরিনের ডাক পড়ে। ফ্রান্স, ইটালি, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াতে সেমিনারে অংশ নিয়েছেন। নিয়মিতই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেমিনারে আমন্ত্রণ পান। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল, জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, স্বনামধন্য ম্যাগাজিনে নিয়মিত স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে লিখে ও স্বাস্থ্য বিষয়ক টক শোতে অংশগ্রহণ করে ইতোমধ্যে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তার বাচনভঙ্গি ও লেখনি শক্তি দিয়ে উৎসাহিত এবং অনুপ্রাণিত করেছেন সকল শ্রেণীর, প্রজন্মের পাঠক এবং দর্শকদের।


নিজের বিভিন্নধারার কাজ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডা. ইরিন বলেন, আমাদের দেশের অনেক উইনার, অংশগ্রহণকারী এবং মডেলদের গ্রুমিং করেছি এবং সেই সাথে অংশগ্রহণ করেছি। জাজ ও মেন্টর হিসেবে মিসেস ইন্ডিয়া গ্ল্যামারাস, মিস ইউনিভার্স বাংলাদেশ, মিসেস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ, মিসেস ইউনিভার্স বাংলাদেশ, মিস পাতায়া, থাইল্যান্ড। তাদেরকে গ্রুমিং করার পর যারা উইনার হয় তারা তো একটা এচিভমেন্ট নিয়ে আসেই আর যারা পার্টিসিপেন্ট থাকে তারাও বেশ কনফিডেন্ট থাকে।


নানান গুণে গুণান্বিতা ডা. ইরিন। একাধারে মানবসেবী, লেখক, গবেষক, প্রোগ্রাম প্রোডিওচার এবং ডিরেক্টর। চলতি বছরে তিনি কোভিড ১৯ মহামারি নিয়ে সিডিসি এবং সেফটি নেট আয়োজিত তথ্যচিত্র ‘করোনাকাল’-এর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি অনলাইনে বিনোদন এবং লাইফস্টাইল নিয়ে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানের প্রযোজক ও নির্দেশক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তথ্যচিত্রগুলো প্রযোজনা করেছে ফ্ল্যাগ গার্ল, সিডিসি ও সেফটিনেটস।


সারা জীবন মানুষের সেবায় ও কল্যাণে কাজ করে যেতে চান স্বপ্নবাজ এই ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. ইরিন। ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে তার ভাষ্য, আমার সব স্বপ্ন রিজুভা ফাউন্ডেশনকে ঘিরে। ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটা এমন কিছু করতে চাই যেটা মানুষের সেবায় ও কল্যাণে ব্যবহা করা যাবে। আমাদের যারা বৃদ্ধ মা-বাবা আছেন, যাদের সন্তানরা অনেক দূরে থাকেন, তাদের জন্য এমন কিছু করবো, যাতে তাদের একটা নিজের বাড়ি থাকে। যে বাড়ির নাম হবে ‘বাবার বাড়ি’, ‘মার বাড়ি’। জীবনের শেষ দিনগুলি যেন তাদের আনন্দময় ও সুখময় হয়ে উঠে। হাসি-আনন্দে কেটে যায় তাদের বাকি দিনগুলি। তারা যেন বুঝতে না পারেন যে, আমার সন্তান দূরে আছেন বা আমরা নিঃসন্তান। সন্তানের কোনরকম যাতে অভাববোধ না করতে পারেন, সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করবো। তাদের স্বাস্থ্যসেবা দেয়ার জন্য ডাক্তার, নার্স থাকবে। মুভি দেখার জন্য থাকবে থিয়েটার জোন। ঘুরে বেড়ানো জন্য থাকবে পার্ক। এই স্বপ্ন পূরণে রিজুভা আমাকে সাহায্য করবে বলে আমার বিশ্বাস। সেসাথে সকলের দোয়া চাই।


বিবার্তা/গমেজ/শাহিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com