শিরোনাম
দেশে প্রথম নারী মার্শাল আর্ট চর্চার পথিকৃৎ তুলির জীবন-কথা
প্রকাশ : ০২ মে ২০২০, ১৮:১৪
দেশে প্রথম নারী মার্শাল আর্ট চর্চার পথিকৃৎ তুলির জীবন-কথা
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

মানুষের জন্য ভালো কাজ করার সুন্দর মন থাকলে যেকোনোভাবেই সেটা করা যেতে পারে। শুধু প্রয়োজন আন্তরিক সদ্বিচ্ছা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ আর ওই কাজের প্রতি অদম্য ভালোবাসা। বেশ, পৃথিবীর আর কোনো শক্তিই পারবে না তার সে কাজের গতি রোধ করতে।


এমনই একজন আত্মপ্রত্যয়ী নারী শামিমা আখতার তুলি। তিনি বাংলাদেশ নারীদের মধ্যে মার্শাল আর্ট চর্চার পথিকৃৎ। দেশে কারাতে প্রথম ব্ল্যাক বেল্ট অর্জনকারী। নারীদের আত্মরক্ষামূলক কাজের সাথে যুক্ত আছেন দীর্ঘ দিন থেকে। এর জন্য পেয়েছেন অনেকগুলো পুরস্কার। এ পুরস্কার সহজে পাননি। তাকে অনেক কঠিন সংগ্রাম করতে হয়েছে। আজ জানাবো তার সে অর্জনের গল্প।



মার্শাল আর্ট চর্চার পথিকৃৎ শামিমা আখতার তুলি।


তুলির শৈশব কাটে দেশের সুন্দর্যপুরী সিলেটের চা বাগানে। বাবা মোহাম্মদ সেকান্দার (মৃত) সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। মা রওশন আরা বেগম (মৃত) ছিলেন আদর্শ গৃহিনী।


তুলি তখন সবেমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণি পাস করেছেন। সরকারি চাকুরে বাবার পোস্টিং হয় ঢাকায়। সেই সুযোগে তিনি ঢাকায় এসে সিদ্ধেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হন সপ্তম শ্রেণিতে। এর আগে থেকেই তার কারাতে শেখার ভীষণ ইচ্ছে ছিল। সিনেমাতে কারাতের শিক্ষক ও অভিনেতা চীনা মার্শাল আর্ট শিল্পী ব্রুস লিকে দেখে কারাতে শেখার অনুপ্রেরণা পান তুলি।


ঢাকায় আসার পর তার সে ইচ্ছা পূরণের পথটা অনেকটা সহজ হয়ে যায়। ভর্তি হন বাংলাদেশ জুডো কারাতে সেন্টারে। প্রথম ক্লাসের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তুলি বলেন, প্রথম দিন ক্লাসে গিয়ে দেখি ৬০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আমি একাই মেয়ে। বাকিরা সব ছেলে। কিছুটা সংকোচ নিয়ে ক্লাস শুরু করলেও সবাই এতো আন্তরিক ছিল যে অল্পদিনের মধ্যেই সবার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরে ১৯৮৯ সালে আমি সোতকান কারাতে ‘ব্লাকবেল্ট’ লাভ করি। ওই সময়ে বাংলাদেশ জুডো কারাতে ফেডারেশনের জাপানিস শিক্ষক মিসো ইশিদার তত্ত্ববধানে জাপান থেকে এই ব্লাকবেল্ট লাভ করি।


সিদ্ধেশ্বরী স্কুল অ্যান্ড কলেজে থেকে এসএসসি এবং বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন তুলি। ওই সময়ে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল ও ভিকারুন্নেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীদের নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য সচেতনতা গড়ে তুলতে কারাতের বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতেন। এভাবে তার হাত ধরে বাংলাদেশের মেয়েদের মনের ভেতরে কারাতের চর্চাটা প্রথম ‍শুরু হয়।


তুলি বলেন, আমি একজন মেয়ে হিসেবে একাকী পথ চলতে গিয়ে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি অন্য কোনো মেয়েকে যেনো ওই অবস্থায় পড়তে না হয়, তাই স্কুল-কলেজের মেয়েদের নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য তাদের কারাতে শেখার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে নানান কার্যক্রম চালু করেছি।


শরীর চর্চা করছেন তুলি।


১৯৯১ সালে ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনার স্বপ্ন নিয়ে আত্মপ্রত্যয়ী এই নারী ভর্তি হন রাজধানীর সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৫ সালে ঢাবি থেকে স্নাতক ও মাস্টার্স পাস করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতেও পড়াশোনার পাশাপাশি একইভাবে বিভিন্ন স্কুল-কলেজে মেয়েদের মাঝে আত্মরক্ষার শিক্ষা কারাতের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যান।


ইংরেজি সাহিত্যে প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চতর ডিগ্রি নিলেও তার পিছু ছাড়েনি কারাতের ব্যায়াম ও শারীরিক কসরতের চর্চাটা। ২০০১ সাল। তুলির মাথায় আসে দেশের নারীদের সুস্বাস্থ্য ও শরীরচর্চার জন্য একটা ফিটনেস সেন্টার চালু করার ভাবনা। তখন ঢাকার শহরে জিম কনসেপ্টটাই ছিল না। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রশিক্ষকের অধীনে মেয়েরা ব্যায়াম করবে এ ধরনের কোনো ধারণাই ছিল না। কিন্তু তার মনে ছিল আত্মবিশ্বাস। জানতেন নারীদের সুস্থ থাকার জন্য এটা খুব প্রয়োজনীয় এবং যুগের চাহিদায় পরে এ ধারণা বাংলাদেশে অবশ্যই আসবে। তখন এটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে যাবে। মনের ইচ্ছা আর নিজের উপরে আত্মবিশ্বাসের জোরে চালু করেন ‘কমব্যাট জিম’ নামের শরীরচর্চার জন্য একটা ফিটনেস সেন্টার।


তুলির ছয় ভাই-বোনের মধ্যে সবাই উচ্চশিক্ষিত এবং নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তবে ভাই-বোনদের মধ্যে তুলি ছিলেন বরাবরই একটু ব্যতিক্রম। ‘কমব্যাট জিম’ চালুর বিষয়ে ভাই-বোনেরা কেউ কেউ তাকে সাপোর্ট করলেও বাকিরা বিষয়টাকে ভালোভাবে নেননি। কেননা কনসেপ্টটার বিষয়ে অনেকের স্পষ্ট ধারণাই ছিল না। নানান ভুল ধারণা কাজ করছিল সবার মনে। বলতে গেলে অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে একাই সিদ্ধান্ত নেন তুলি।


শিক্ষার্থীদের কারাতের ব্যায়াম ও শারীরিক কসরৎ শেখানোর মধ্য দিয়েই শুরু করেন ফিটনেস কেন্দ্রটির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। কিছু দিন যাওয়ার পর দেখা গেছে যেসব নারীরা তুলির কাছে শারীরিক ব্যায়ামের জন্য আন্তরিক ও আগ্রহী হয়ে সাহায্যের জন্য আসছেন তাদের ভেতর আত্মরক্ষার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল স্বাস্থ্যবিষয়ক সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা। বেশির ভাগিই ছিল যারা অতিরিক্ত ওজনে ভুগছেন। এর জন্য তাদের বিভিন্ন শারীরিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। অনেক মায়েরা তাদের এমন মেয়েদের নিয়ে আসছিলেন যারা অতিরিক্ত ওজনের কারণে তাদের বিয়ে পর্যন্ত হচ্ছিল না। এমনকি কেউ আছেন বিবাহিত কিন্তু ওজনের কারণে সন্তান ধারণে সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তারকে দেখানোর পর তাদের ওজন কমানোর কথা বলেছেন। গর্ভাবস্থার আগে এবং পরে সমস্যা, অপুষ্টি, স্ট্রেস সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা, দাম্পত্য জীবন, বয়স ইত্যাদি।


এতে তিনি বুঝতে পারেন যে নারীদের কেবল মারামারি, আত্মরক্ষার জন্য কাজ করলেই যথেষ্ট না। এর বাইরেও তাদের আত্মরক্ষা করতে হচ্ছে রোগ-বালাই, সামাজিকতা ও শারীরিক বিভিন্ন বিষয় থেকে। এসব বিষয়ে কাজ করতে প্রয়োজন উচ্চতর শিক্ষা আর প্রশিক্ষণ। শুধু কারাতের শিক্ষা দিয়ে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না।


পাইপের উপর দিয়ে শারিরীক কসরৎ দেখাচ্ছেন কারাতে প্রথম ব্ল্যাক বেল্ট অর্জনকারী তুলি।


২০০৭ সাল। নারীদের শরীরচর্চা বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে তিনি যান ভারতে। ভারতের 'ঘোষে'জ ইয়োগা যোগ কলেজ' থেকে ইয়োগা ব্যায়ামের উপরে ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন। তখন থেকেই ইয়োগা ব্যায়ামের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবাধ পদচারণা। ২০০৮ সালে আমেরিকার ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পোর্টস সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে ব্যায়ামের উপর সার্টিফাইয়েড ফিটনেস ট্রেইনার (সিএফটি) কোর্স সম্পন্ন করেন।ধীরে ধীরে ‘পিলাটিজ’ ব্যায়ামের উপরে প্রথমে মালয়েশিয়া ও পরে ইন্দোনেশিয়া থেকে ট্রেনিং করেন। থাইল্যান্ড থেকে প্রেগনেন্ট অ্যান্ড পোস্টপার্টাম ট্রেইনার হিসেবে কোর্সগুলো করেন।


ইয়োগা, যোগ ব্যায়ামের বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিলেও তুলির পছন্দের কাজের ক্ষেত্র ছিল সেলফ ডিফেন্স বা আত্মরক্ষা। ইতোমধ্যেই সারাবিশ্বে এসব সিস্টেমে অনেকগুলো নতুন নতুন আত্মরক্ষা কৌশল এসে গিয়েছিল। এগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ইস্রায়েলি সেলফ ডিফেন্স সিস্টেম যেটি ‘ক্রাভ মাগা’ নামে পরিচিত। এটি বর্তমানে সারাবিশ্বে সবচেয়ে বেশি পরিচিত এবং বিভিন্ন হলিউডের মুভিতে যে ধরনের ফাইটিং স্টাইলগুলো দেখা যায়। এই সেগমেন্ট প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সিডনি অস্ট্রেলিয়া থেকে ‘ক্রাভ মাগা’ মার্শাল আর্টের উপরে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তুলি।


ফিটনেস ট্রেনিং সেন্টারে নারীদের প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে তুলি দেখেন এমন অনেক নারী আছেন যাদের মধ্যে এনার্জি আছে এবং তারা তাদের শরীরের পরিবর্তন আনতে পারেন। কিন্তু একটা জায়গায় তাদের বাধা রয়েছে। তাদের কেউ ন্যায্য অধিকার, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত, কেউ হতাশায় ভুগছে। এসব সমস্যাগুলো থেকে উঠে আসার মতো তাদের মানসিক শক্তিও নেই।


তখন তুলি বুঝতে পারেন তাদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য কিছু করতে হবে। এসব সমস্যা সমাধানে তার আরো জ্ঞান অর্জন জরুরি হয়ে উঠে। তখন তিনি আমেরিকার ‘স্পেন্সার ইনস্টিটিউট’ থেকে ‘স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট’ এবং ‘হলিসটিক লাইফ কোচ’ কোর্স সম্পন্ন করেন। এরপর সম্প্রতি মাইন্ড ভ্যালি থেকে পার্সোনাল মাস্টারির উপরে সার্টিফাইড কোর্স সম্পন্ন করেন।


যেকোনো ব্যায়ামের সাথে খাবারে রয়েছে একটা বিশেষ ভূমিকা। এ বিষয়ে তুলির ভাষ্য, আপনি ব্যায়াম করছেন কিন্তু খাবার-দাবারের নিয়ম-কানুন মানছেন না। আপনার বয়স, পরিশ্রম অনুসারে কখন কতটুকু খাবার খেতে হবে সেটা জানেন না। তাহলে ব্যায়ামের সুফলটা পুরোপুরি পাবেন না। ব্যায়াম করার সময় একজন কিশোরী যতটুকু খাবেন, সেটা একজন বয়স্ক কিন্তু সেটা খাবেন না। এসব খুঁটিনাটি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। এ বিষয়গুলো প্রথমে নিজে ভাল করে জানতে ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের স্টোনব্রিজ অ্যাসোসিয়েটেড কলেজ থেকে ‘ডায়েট অ্যান্ড নিউট্রিশন এডভাইজার’ সার্টিফিকেশন ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করি।


নারীদের কারাতে প্রশিক্ষণে ব্যস্ত তুলি. . .।


গত ১৯ বছরে প্রায় ১০ হাজারের মতো নারীর সাথে জিম নিয়ে কাজ করেছেন তুলি। যত কাজ করছেন ততই নিজের কাছে মনে হয়েছে জিম নিয়ে তার আরো জ্ঞান অর্জন করতে হবে। তাকে আরো বেশি বেশি শিখতে হবে। গত ৩০ বছরে জিম বিষয়ে যখন যে বিষয়ে শেখার সুযোগ এসেছে তখন তিনি সেটাই আন্তরিকভাবে শিখেছেন এবং সেগুলো শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণে প্রয়োগ করেছেন।


এ প্রসঙ্গে তুলি বলেন, গত বছরে আমার নেতৃত্বে চায়নার শাওলিন মনস্টারি থেকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ টিম উসুর সার্টিফিকেট লাভ করি। শাওলিন টেম্পলে এই বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এটা পাওয়া ভীষণ ভাগ্যের বিষয়। বাংলাদেশ থেকে একজন ছেলে ও মেয়ে এই প্রশিক্ষণ লাভ করেন।


তুলি সবসময় চেয়েছেন তার শারিরীক কসরতের শিক্ষাটা যেন প্রজন্মের পর প্রজন্মের হাত ধরে ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত। তার পরের প্রজন্ম যেন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। সে চাওয়াটা পূরণও হয়েছে। তার স্টুডেন্টরা এখন বাংলাদেশের সাউথ এশিয়ান কারাতের জাতীয় প্রতিযোগীদের কোচ হিসেবে মেন্টরিং করছেন। তাদের মেন্টরিংয়ের ফলে দেশের কারাতের প্রতিযোগিরা পাচ্ছেন গোল্ড মেডেল। এটা কারাতের ক্যারিয়ারে ভীষণ রকম গর্বের বিষয় বলে মনে করেন তুলি।


স্পোর্টের সাথেও রয়েছে তুলির ভীষণ সখ্যতা। কারাতের রেফারি হিসেবে তিনি কাজ করেছেন কোরিয়া ভুষাণ এবং ভারতে।


তুলি এখন রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ও নারী উদ্যোক্তা সংগঠন, বিভিন্ন ধরনের মহিলা সংগঠনের উদ্যমী নারীদের আত্মরক্ষা, শরীরচর্চা, খেলাধুলা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতায় বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম ও সেমিনার পরিচালনা করছেন।


কখনো পুরস্কার পাওয়ার আশায় এসব কাজ করেননি তুলি। মনের আত্মতৃপ্তি ও সমাজের নারীদের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক কাজ করেছেন আর করছেন।


তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আপনি যখন সৎ ও একনিষ্ঠভাবে কোনো ভালো কাজ করে যাবেন, একটা সময় মানুষ সে কাজের মাধ্যমে উপকৃত হবেন আর তখন আপনার মনে একটা আত্মতৃপ্তি আসবে। সেসাথে ওই কাজের স্বীকৃতিও মিলবে।


তুলির অর্জনের ঝুলিতে উঠেছে বেশ কয়েকটি সম্মাননা। এগুলো হলো- ১৯৮৯ সালে তিনি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ জাতীয় কারাতে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে লাভ করেন স্বর্ণপদক। এরপর টানা চার বছর প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। পেয়েছেন চারটি স্বর্ণ পদক। ২০১৯ সালের জেসিআইয়ের দেয়া ‘অনারারি অ্যাওয়ার্ড ফর উইম্যান সেলফ ডিফেন্স’, ‘শের-এ-বাংলা একে ফজলুল হক স্মৃতি পদক-২০১৯’ এবং বাংলাদেশ কারাতে ফাউন্ডেশন কর্তৃক দেয়া ‘আজীবন সম্মাননা ২০১৮’।


নারীদের স্বাস্থ্য সচেতনতার বিষয়টি ঢাকাকেন্দ্রিক না রেখে সারাদেশের নারীদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে উদ্যোগ নেয় বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভি। গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি এনটিভিতে ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছেন। সেসাথে অনুষ্ঠানে দেখাচ্ছেন গ্রামাঞ্চলে নারীরা কীভাবে ঘরে বসে ফিটনেস সেন্টারের গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করে সুস্থ থাকা যায়। ব্যায়ামগুলো নিজে করে দেখান। সাথে মডেল হিসেবে নিয়েছেন নিজের একমাত্র ছেলেকে।


চীনে ছেলের সাথে পুরস্কার হাতে তুলি


দেশে প্রথম শিশুদের জন্য যোগাসনের উপরে তিনটা ডিভিডি বের করেছেন তুলি। এতে শরীর চর্চার বিভিন্ন ধরনের আইটেম দেখানো হয়েছে। যেমন, বল, ব্যান্ড, চেয়ার, স্কিপিং ইত্যাদি ২৪টি পদ্ধতিতে কীভাবে ব্যায়াম করা যায় সে বিষয়ে সুন্দরভাবে দেখানো হয়েছে।


লেখালেখিতেও রয়েছে তুলির অবাধ বিচরণ। দীর্ঘদিন ধরে দেশের বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সাস্থ্যবিষয়ক লেখালেখির সঙ্গে জড়িত। গত তিন বছর ধরে তিনি ইংরেজি নিউজপেপার ডেইলি অবজারভারে প্রতি মাসে স্বাস্থ্যবিষয়ক ফিচার লিখছেন।


তুলি বলেন, আমি চাই পড়ে হোক, দেখে হোক, শুনে বা চর্চা করেই হোক, যে কোনো ভাবেই হোক দেশের মানুষ যেন স্বাস্থ্য সচেতন হয়। মানুষ যেন স্বাস্থ্য সচেতনতার জ্ঞানটা জীবনে কাজে লাগায় এবং একে অন্যকে এ বিষয়ে সচেতন করে তুলে। তাহলেই একদিন আমরা হয়ে উঠতে পারবো আদর্শ সুস্থ জাতি।


দেশের নারীদের নিজের উপর আত্মবিশ্বাস ও শারীরিক সক্ষমতা বাড়াতে এবং নিজেকে আত্মরক্ষা করতে যে পরিমাণ সাহস, যোগ্যতা দরকার তা অর্জনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তুলি। তার স্বপ্ন দেশের প্রতিটি নাগরিক, বিশেষ করে নারীরা ভীষণ রকমভাবে যেন সুস্থ থাকে। যেকোনো রোগ-বালাই প্রতিরোধ এবং প্রতিহত করে তারা যেন সামনের দিকে এগিয়ে যান। নারীরা যদি নিজের আত্মসম্মান নিয়ে নিজের জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা পরিশ্রমের বলে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় তাহলে এক সময় আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের নারীদের কাজ ও সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। আর এই স্বপ্নটা তখনই বাস্তবায়িত হবে যখন তারা নিজের শরীরের ব্যাপারে, সুস্থতার ব্যাপারে সচেতন হবে এবং নিজের হাতে দায়িত্বটা নেয়ার মত মনের মধ্যে তাগিদ অনুভব করবে।


এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তুলির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে এমন ধরনের একটা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার, যেখানে নারীরা তাদের শারীরিক, মানসিক, আত্মিক বিকাশে যেসব বাধা আসে সেসব সমস্যা থেকে উত্তরণের একটা সঠিক গাইডলাইন পেতে পারেন। এটা হবে ওয়ানস্টপ মলের মতো সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেখানে এক ছাদের নিচে থাকবে সবধরনের বিশেজ্ঞ। সেখান থেকে ব্রাঞ্চ ছড়িয়ে পড়বে দেশের ৬৪টা জেলায়। একটা সময় যেটার সুবাতাস পৌঁছে যাবে আন্তর্জাতিক মহলেও। তখন আন্তর্জাতিকভাবেও সবাই জানবে এবং এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক সাথে বাড়িয়ে দেবে সাহায্যের হাত। যদি সৃষ্টিকর্তা তাকে সে সুযোগ ও সামর্থ্য দেন তাহলে ইনশাল্লাহ একদিন তার সে স্বপ্ন পূরণ করবেনই।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/জাহিদ



সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com