শিরোনাম
ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বেপরোয়া অজ্ঞান পার্টি
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২১, ১৮:১৮
ঈদকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বেপরোয়া অজ্ঞান পার্টি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ঈদ উল আযহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বেড়ে গেছে অজ্ঞান পার্টির বেপরোয়া দৌরাত্ম্য। এদের খপ্পরে পড়ে প্রতিদিনই সর্বস্ব হারাচ্ছেন অনেকে। গত ৪৮ ঘন্টায় তাদের খপ্পরে তিনজন পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছেন। শুধু তাই নয় তাদরে মধ্যে একজন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। বাকিরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন।


জানা গেছে, গত শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর গুলিস্তান আসার পথে বাসে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়ালেন তারজুল ইসলাম নামে এক মুদি ব্যবসায়ী। পরে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়।


তারজুল ইসলামের ভাগনা আবুল কাশেম বলেন, আমার মামা আর আমি একসঙ্গে ব্যবসা করি। আমরা চকবাজার থেকে পণ্য কেনার জন্য ঢাকায় আসি। মামা ধামরাইয়ের বাথুলি থেকে শুভযাত্রা বাসে উঠেন। এরপর আমি শ্রীরামপুর থেকে একই বাসে উঠি। মামা সামনের সিটে বসেন আর আমি পেছনের সিটে বসি। কখন যে মামা অজ্ঞান হয়ে পড়েন আমি খেয়াল করিনি। দেখে মনে হয়েছে তিনি বাসে ঘুমাচ্ছেন। বাস ঢাকায় আসার পর তাকে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলেও সাড়া দেননি তিনি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। তবে মামার কাছে কী পরিমাণ টাকা ছিল সেটা জানতে পারিনি।


ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া বলেন, অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে অচেতন অবস্থায় এক মুদি ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আনা হয়। পরে তাকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক।


শুধু মুদি ব্যবসায়ী তারজুল ইসলামই নয়, অজ্ঞাত পার্টির খপ্পরে পড়েছে আরো অনেকেই। তাদের মধ্যে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বেসরকারি একটি ক্লিনিকের ফিজিওথেরাপিস্ট সুশান্ত মজুমদার অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে গুরুতর অসুস্থ। তিনি এখন রাজধানীর বেসরকারি একটি ক্লিনিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) চিকিৎসাধীন।


সুশান্তের ভাই সজল মজুমদার বলেন, তার ভাই পুরান ঢাকার একটি ক্লিনিকের ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে কর্মরত। গত শনিবার রাতে হাসপাতালে দায়িত্ব শেষে তিনি যখন সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বাসায় ফিরছিলেন, তখন এ ঘটনা ঘটে। যাত্রীবেশে অজ্ঞান পার্টির সদস্য তার ভাইয়ের মুঠোফোনসহ অন্য জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে তাকে বেসরকারি একটি ক্লিনিকের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার ভাইয়ের এখনো জ্ঞান ফেরেনি।


দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার এসআই আবদুল কুদ্দুস বিবার্তাকে বলেন, যাত্রীবেশে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা সুশান্ত মজুমদারকে অচেতন করে তার মালপত্র লুট করে নেয়। এ ঘটনায় আরিফ নামের একজনকে আটক করা হয়েছে। পুরো ঘটনা উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে।


একই রাতে যাত্রাবাড়ী দয়াগঞ্জে মো. লিয়াকত (৫৫) নামে এক ব্যক্তি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েছেন। তিনি একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। পরে রাত সারে ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার পাকস্থলি ওয়াশ করানো হয়। এর আগে দয়াগঞ্জ শহীদ ফারুক রোড থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। নারায়ণগঞ্জের নাসির গ্রুপ অপ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির সুইং মেকানিক্যাল ইনচার্জ হিসেবে চাকরি করেন তিনি।


লিয়াকতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান প্রতিষ্ঠানটির কোয়ালিটি ইনচার্জ আফতাব উদ্দিন জানান, লিয়াকত থাকেন তারাবো এলাকায়। কোম্পানির সেলাই মেশিন কেনার জন্য সকাল ১১ টার দিকে ঢাকার আসেন। এরপর খবর পাওয়া যায় দয়াগঞ্জ শহীদ ফারুক রোডে অচেতন হয়ে পড়ে রয়েছেন তিনি। উদ্ধার করে তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে স্টোমাক ওয়াশ করানোর পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিটফোর্ড হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে।


তিনি আরো জানান, লিয়াকতের সঙ্গে মেশিনপত্র কেনার জন্য বেশ কিছু টাকা ছিল। সেগুলো তার কাছে আর পাওয়া যায়নি।


ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. বাচ্চু মিয়া জানান, রাতে অচেতন অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে সহকর্মীরা। পরে চিকিৎসকের পরামর্শের তাকে স্টোমাক ওয়াশ করানো হয়।


তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বিবার্তাকে বলেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সফল অভিযান হয়েছে। এতে ওইসব চক্রের বেশ কয়েকজন চিহ্নিত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারেও অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।


জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বিবার্তাকে বলেন, প্রতিবছরই ঈদ আসার আগে এ ধরনের অপরাধ বেড়ে যায়। এগুলো মৌসুমী অপরাধ। এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খালা বাহিনীর সক্ষমতা ও মানুষের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি করলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে জানান তিনি।


বিবার্তা/খলিল/ইমরান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com