
রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে তিস্তা নদী। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তাপাড় শো শো শব্দে কাঁপিয়ে চলেছে নদীর তীব্র স্রোত। এর ফলে লালমনিরহাট জেলার পাঁচটি উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিস্তা ব্যারাজ রক্ষার্থে ফ্লাড বাইপাস ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ইতিমধ্যে মাইকিং করে রেড এলার্ট জারি করেছে। নিরাপদ স্থানে ছুটছে লোকজন। ফ্লাড বাইপাসে পানি প্রবেশ করেছে।
রবিবার (৫ অক্টোবর) রাত ১১ টায় তিস্তার পানি ডালিয়াস্থ তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে আরও বৃদ্ধি বিপৎসীমার (৫২.১৫) ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে রাত ৯ টায় বিপৎসীমার ২৭ রাত আটটায় বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার, সন্ধ্যা ৬টায় ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে বেলা ৩টায় বিপৎসীমার এক সেন্টেমিটার নিচে ছিল।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, ভারী বৃষ্টি উজানের পাহাড়ি ঢলে নদীর পানি এখনও হু হু করে বাড়ছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজে ৪৪টি স্লুইচগেট দিয়ে মিনিটে ৪ লাখ কিউসিক পানি অপসারণ হয়ে ভাটির দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এরপরেও সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এখন তিস্তা ব্যারেজের রক্ষা কবজ বলে পরিচিত ফ্লাডবাইপাস সড়কের উপর দিয়ে নদীর পানির বয়ে যাচ্ছে। ফ্লাডবাইপাস অটো ভেঙ্গে গেলে তিস্তা ব্যারেজের ওপর পানির চাপ কমবে বলে তিনি উল্লেখ করেন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কর্মকর্তাও কর্মচারীরা ফ্লাডবাইপাস ও কালীগঞ্জ জিরো পয়েন্টে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে অবস্থান নিয়ে ভাঙ্গন রক্ষার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ রক্ষার্থে ফ্লাড বাইপাস ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এটি ভেঙে গেলে তিস্তা নদীর পানি হাতীবান্ধা শহরে প্রবেশ করতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউর হক জিয়া জানান, তার ইউনিয়নে ইতিমধ্যে হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “পানির তীব্র চাপে মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।”
হাতীবান্ধার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম মিঞা জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তা তীরের বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করছে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, তিস্তা তীরের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বন্যার পরিস্থিতির খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি।”
তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পানিবন্দী মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে। ফসল, রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি এই অঞ্চলের জনজীবনকে মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করছে। প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করলেও, পানির তীব্র চাপ এবং ফ্লাড বাইপাসের ঝুঁকি এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। শুধু এলাকাবাসী নয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা সড়ক ও ডানতীর প্রধান বাঁধ রক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তবে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বেড়েই চলেছে।
বিবার্তা/হাসানুজ্জামান/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]