
লিভার সিরোসিস একটি নীরব ঘাতক, যা ধীরে ধীরে শরীরকে ভেতর থেকে ফাঁপা করে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে যেকোনো সময়ই শরীরে হানা দিতে পারে জটিল এ রোগটি।
যকৃতের এ জটিল রোগ মরণব্যাধি ক্যানসারের মতোই। তাই শরীরে এ রোগ বাসা বেঁধেছে কিনা তা নিয়ে সতর্ক থাকা জরুরী। কেননা সাধারণ কিছু লক্ষণই লিভার সিরোসিসের কারণ হতে পারে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্রতি বছর যকৃতের যে সমস্যায় অনেক মানুষ আক্রান্ত হন, তা ‘লিভার সিরোসিস’ নামে পরিচিত। যকৃতের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত এ অসুখের কারণ হয়ে ওঠে, যা ধীরে ধীরে লিভারের কার্যক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়।
যাদের ডায়াবেটিস বা স্থূলতার সমস্যা আছে, তারাও আগে থেকে সতর্ক না হলে এ রোগ থাবা বসাতে পারে। সময়ে ধরা পড়লে যেকোনো রোগের জটিলতা থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘লিভার সিরোসিস’ রোগটি ধরতেই অনেকটা দেরি হয়ে যায়। ফলে সমাধানের পথ থাকে না তখন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বোল্ড স্কাই ও এবিপি লাইভের প্রতিবেদন অনুসারে তাই আসুন জেনে নিই লিভার সিরোসিস শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করলে প্রথমদিকে কী কী লক্ষণ শরীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে-
১। জন্ডিস: জন্ডিস হলে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। লিভার থেকে নিঃসৃত হওয়া পিত্ত বিলিরুবিনের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে জন্ডিস হয়। লিভারে ক্ষত তৈরি হলেও লিভার শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না। তখন এ অসুখ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
২। ওজন হ্রাস: খাওদাওয়া নিয়ন্ত্রণ না করে কিংবা কোনো রকম শরীরচর্চা ছাড়াই ওজন কমে যাচ্ছে? তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিনা কারণে ওজন কমে যাওয়া শরীরের জন্য একেবারেই ভালো নয়। এমন হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। লিভার সিরোসিসের কারণে, আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান শরীরে সঠিকভাবে শোষিত হয় না, যার ফলে রক্তাল্পতা হতে পারে। কমতে পারে ওজনও।
৩। পা ও গোড়ালিতে জ্বালা: পা ও গোড়ালিতে মাঝেইমাঝেই জ্বালাভাব হলে আগে থেকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। শরীরে অ্যালবুমিন প্রোটিনের উৎপাদন কমে গেলে এ রকম সমস্যা হয়। এ প্রোটিন রক্তনালি থেকে অন্যান্য কোষে রক্তের ছড়িয়ে পড়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তে এ প্রোটিন তরলের পরিমাণ কমে গেলে তা রক্তনালিকায় জমা হতে শুরু হয়। গোড়ালিতে বা পায়ের পাতায় হালকা জ্বালা অনুভব হলে আগে থেকে সচেতন তহওয়া প্রয়োজন।
৪। পেট ফাঁপা ও ওপর দিকে ব্যথা: অনেক দিন ধরে লিভারের কোনো সমস্যা থাকলে তলপেটে তরল জমা হয়ে পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেকেই এ পেট ফাঁপার সমস্যায় মাঝেমাঝেই ভুগে থাকেন। সেই সময় পেটও ফুলে থাকে। পেটের ওপর দিকে ব্যথা হয়। কয়েক দিন ধরে পর পর এই রকম সমস্যা দেখা দিলে সতর্ক হন।
৫। কালশিটে: শরীরে ঘন ঘন কালশিটে পড়ে কি? তা হলে আগে থেকে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লিভার ভিটামিন কে- এর সাহায্যে এক ধরনের প্রোটিন উৎপাদন করে যা রক্তক্ষয় বন্ধ করে যে কোনো ক্ষত তাড়াতাড়ি ঠিক করতে সাহায্য করে। লিভার দূষিত রক্তের কোষগুলোকে বাড়তে দেয় না। ফলে লিভার যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে তখনই শরীরে এ ধরনের কালশিটে দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৬। ক্লান্তি, অবসাদ ও অস্থিরতা: যখন লিভার বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে অক্ষম হয়, তখন শরীর অলস হয়ে পড়ে। বিপাকক্রিয়ার গোলযোগ দেখা দেয়। প্রায়ই অনুভব হতে পারে দুর্বল ও অবসাদবোধ। মাথা ঘোরার সাথে বাড়তে পারে অস্থিরতাও। তাই এমন অনুভব প্রায়ই হলে এ সাধারণ লক্ষণেই শরীর জানান দিতে পারে লিভার সিরোসিস রোগটিকে।
৭। মানসিক অবস্থার পরিবর্তন: লিভার সঠিকভাবে কাজ না করলে রক্তপ্রবাহে টক্সিন জমা হয়। যার ফলে মানসিক পরিবর্তন বিভ্রান্তি, স্মৃতিশক্তির সমস্যা দেখা দেয় অনেকেরই। ব্যস্ততা কিংবা কাজের চাপে এমনটা হচ্ছে এই ভেবে এ সাধারণ লক্ষণকেই অবহেলা করতে পারেন। অথচ এ লক্ষণও লিভার সিরোসিসের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
৮। বমিতে রক্ত: এটি একটি গুরুতর লক্ষণ। সিরোসিস লিভারে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত করে। যার ফলে পেটের শিরা ফুলে যায় এবং রক্তপাত হয়। যদি বমিতে রক্ত দেখতে পান, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিভার সিরোসিসের শেষ পর্যায়ে শরীরের অভ্যন্তরে শিরা-উপশিরা, রক্তবাহিকা উন্মুক্ত হয়ে যায়। ফলে শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।
তাই জটিল এ রোগের মরণ থাবা থেকে বাঁচতে সচেতন থাকার কোনো বিকল্প নেই।
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]