
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও ভবন সংকট চরমে পৌঁছেছে। ফলে সেখানে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়লেও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও অবকাঠামো না থাকায় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের সীমাহীন ভোগান্তি, অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ও হতাশা দিন দিন বাড়ছে।
১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০২২ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এখনও ১৯ শয্যার ভবনে প্রশাসনিক ওয়ার্ড, আউটডোর, ইনডোর, শিশু, পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ড গাদাগাদি করে চলছে। পুরোনো ৩১ শয্যার ভবন ভেঙে নতুন অবকাঠামোর নির্মাণকাজ অর্থের অভাবে মাঝপথে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে উন্নত ও দ্রুত চিকিৎসাসেবা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, এখানে চিকিৎসকের ৪২টি পদের মধ্যে ৩৩টি শূন্য। কাগজে-কলমে ৯ জন চিকিৎসক থাকলেও দু’জনকে অন্য হাসপাতালে সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে, একজন ডেন্টাল সার্জন ও একজন ইউনানি চিকিৎসক আছেন। কার্যত মাত্র পাঁচজন চিকিৎসক দিয়েই চার লাখের বেশি মানুষের চিকিৎসাসেবা চলছে। অনুমোদিত ২৭৫টি পদের মধ্যে বর্তমানে ১৩৩টি পদ শূন্য রয়েছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও সেবিকারা জানান, সীমিত জনবল নিয়ে প্রতিদিন ৪০০-এর বেশি বহির্বিভাগের রোগী এবং গড়ে ৭০-৮০ জন ভর্তি রোগীকে সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ১১টি পদের একটিও পূরণ হয়নি। মেডিকেল অফিসারের ১৪টি পদের বিপরীতে মাত্র তিনজন কর্মরত আছেন।
রোগীদের অভিযোগ , সকালে লাইন ধরে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও ডাক্তার পাওয়া যায় না। অনেক সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট দেরিতে আসায়চিকিৎসা পেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। বাধ্য হয়েই তারা বেসরকারি ক্লিনিক ও শহরের বড় হাসপাতালে ছুটছেন।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. নাদিরুজ্জামান আকাশ বলেন, অপ্রতুল চিকিৎসক দিয়েই ভর্তি রোগীদের শাপাশি বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগ সামলাতে হচ্ছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডাজনিত রোগীর চাপও বাড়ে। সংকটের কারণে আমরা হিমশিম খাচ্ছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, গত দুই মাসে তিনবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিকিৎসক চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও প্রয়োজনীয় পদায়ন হয়নি।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা.আ.স.মো. মাহবুবুল আলম বলেন, চিকিৎসক সংকট নিরসনে আমরা নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। নতুন চিকিৎসক নিয়োগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যার পুরোপুরি সমাধান সম্ভব নয়।
৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হলেও মোরেলগঞ্জে বর্তমানে কার্যত ১৯ শয্যার ভবন এবং হাতে গোনা কয়েকজন চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসাসেবা চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত রোগী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। দ্রুত চিকিৎসক পদায়ন এবং ভবন নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হলে এ অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা আরও ভেঙে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বিবার্তা/রাজু/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]