
ইলিশের ভরা মৌসুমেও বঙ্গোপসাগর থেকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে কক্সবাজারের জেলেদের। জালে মাছ না ওঠায় উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে হাহাকার চলছে, অনেকের ঘরে এক বেলা খাবারও জুটছে না বলে অভিযোগ তাদের।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঘন ঘন নিম্নচাপ, অনাবৃষ্টি এবং গভীর সমুদ্রে দেশি-বিদেশি ট্রলারের নির্বিচার মাছ শিকারকে এই সংকটের জন্য দায়ী করছেন জেলে ও সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর ৬ নম্বর জেটিঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর তীরে সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে রাখা হয়েছে কয়েকশ মাছ ধরার ট্রলার। সাগরে মাছ না থাকায় জেলেরা অলস সময় কাটাচ্ছেন।
ট্রলারে বসে থাকা জেলে সেলিম বলেন, ‘এখন ইলিশের ভরা মৌসুম, কিন্তু সাগরের কোথাও মাছের দেখা নেই। তিন মাসে ১০ বার সাগরে গিয়ে সামান্য মাছ নিয়ে ফিরেছি। প্রতি ট্রিপে ৪ লাখ টাকা খরচের বিনিময়ে আয় হয় ১ লাখ টাকা। দেনার দায়ে ঘরেও ফিরতে পারি না।’
তার দাবি, ইলিশ সংকটের কারণে উপকূলের প্রায় ৭০ শতাংশ জেলে পরিবারে এখন এক বেলা খাবারও জোটে না।
আরেক জেলে মো. দিদার বলেন, ‘আড়াই বছর আগেও এক ট্রিপে ২৫ লাখ টাকার ইলিশ পেয়েছিলাম। এখন তিন লাখ টাকার মাছও পাওয়া যায় না। এত ইলিশ হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেল বুঝছি না।’
তবে এর মধ্যেই গত শনিবার নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটে গভীর সমুদ্র থেকে ফেরা কয়েকটি ট্রলারে বড় আকারের ইলিশ দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, সংখ্যায় খুব কম আসা এসব ইলিশ প্রতি কেজি ২২০০-২৩০০ টাকায় কিনে ঢাকার বাজারে পাঠানো হয়, যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকায়।
১৪ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরা জেলে কামাল বলেন, ‘সাগরে এত ঘন ঘন নিম্নচাপ আগে কখনো দেখিনি। এই সেপ্টেম্বরে দুইবার, আর আগস্টে ছয়বার লঘুচাপ হয়েছে, কিন্তু বৃষ্টি নেই। এ কারণে ইলিশ উপকূলে আসছে না।’
গবেষকরাও বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের ধরন বদলানো এবং ঘন ঘন নিম্নচাপ ইলিশের গতিপথে প্রভাব ফেলছে। এর সঙ্গে গভীর সমুদ্রে ট্রলিং জাহাজের অনিয়ন্ত্রিত মাছ শিকার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে বলে মনে করছেন ট্রলার মালিকরা।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘জেলায় পাঁচ হাজারের বেশি ট্রলারের প্রায় সোয়া এক লাখ জেলে টানা ছয়-সাত মাস ধরে মারাত্মক সংকটে আছে। সাগর কেন ইলিশশূন্য হয়ে পড়ছে, তা অনুসন্ধানে দ্রুত গবেষণা প্রয়োজন।’
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ইলিশ আহরণ প্রতি বছরই উদ্বেগজনক হারে কমছে।
কেন্দ্রের হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৩,৯৭৫ মেট্রিক টন এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২,৫৫৬ মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) মিলে মাত্র ২৬৭ মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া গেছে।
মৎস্য অবতরণকেন্দ্রের মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানী বলেন, ‘ইলিশ আহরণ কমে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আয়ও কমে যাচ্ছে।’
জেলা মৎস্য বিভাগ জানায়, গত বছর জেলায় ৩৯,৩১৪ মেট্রিক টন ইলিশ আহরণ হয়েছিল। চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা ৪৫ হাজার মেট্রিক টন ধরা হলেও তা পূরণ হওয়া নিয়ে গভীর সংশয় তৈরি হয়েছে।
বিবার্তা/ফরহাদ/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]