রাজধানীতে ডিসকাউন্টে বিমানের টিকিট বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলেন- লিটন মিয়া (৩৭), বেল্লাল হোসেন (৪৭) এবং রিয়াজ শেখ (৩৫)। এ সময় প্রতারণায় ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, চেকবইসহ ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, গ্রেফতারকৃতরা ফেসবুকে মূল্য ছাড়ের মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করে আসছিল।

১৫ মার্চ, শুক্রবার দুপুরে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান হারুন অর রশীদ।

তিনি জানান, গত কয়েক মাসে এই চক্র প্রায় চার লক্ষ মানুষের সাথে এই প্রতারণা করেছে।

ডিবি প্রধান জানান, চতুর্থ শ্রেণি পাস আসামি লিটন ২০১২ সালে কুয়েতে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় নিজে প্রতারণার শিকার হন। এরপর প্রতিশোধের চিন্তা থেকেই এই কাজে জড়িয়ে পড়ে। পরে ফেসবুকে সানফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল নামে পেজ খুলে ১৫% ডিসকাউন্টে টিকিট বিক্রির পোস্ট দিয়ে বিভিন্ন বুস্টিং এজেন্সি দিয়ে পোস্ট বুস্ট করিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে বিদেশে কর্মরত শ্রমজীবী লোকজনকে আকৃষ্ট করে ফেসবুকে দেয়া ফোন নাম্বারের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগের পর তাদের থেকে অর্থ আত্মসাৎ করে ব্লক করে দেয়।

পুলিশ আরও জানায়, তাদের আদালতে প্রেরণ করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত অন্যান্য আলামত উদ্ধারের চেষ্টাও অব্যাহত আছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) গুলশান বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক মাসে লিটন চক্র আনুমানিক চার লাখ লোকের সঙ্গে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে প্রতারণার টোপ ফেলেছে। প্রতিমাসে তার আনুমানিক আয় তিন লাখ টাকা।

পুলিশ জানায়, কুয়েত প্রবাসী মজনু মিয়া (৪৫) গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মো. হুমায়ুন কবিরকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে জানান, তিনি মে মাসে বাংলাদেশে ছুটিতে আসবেন। কুয়েত থেকে বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার টিকিটের মূল্য বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে টিকিট কিনতে বলেন। বাংলাদেশে হুমায়ুন কবিরের কোনো পরিচিত ট্রাভেল এজেন্সি না থাকায় অনলাইনে সান ফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের খোঁজ পান। যেখানে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে (কুয়েত-ঢাকা-কুয়েত) টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।

ফেসবুকে দেয়া সানফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালের ফোন নাম্বারে যোগাযোগ করলে অপর প্রান্ত থেকে লিটন মিয়া জানান, তিনি আল-জাজিরা বিমানের টিকিট দিতে পারবেন। এরপর তার কথামতো ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে যাত্রাবাড়ী ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দেখা করতে আসেন হুমায়ুন। এরপর তাৎক্ষণিক হুমায়ুন কবির, মজনু মিয়ার সঙ্গে কথা বলে নগদ পাঁচ হাজার টাকা ও পাসপোর্টের ফটোকপি দেন। বাকি ৪৭ হাজার টাকা লিটনের দেয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে পরিশোধ করেন। টাকা পাওয়ার পর চক্রটি মজনু মিয়ার হোয়াটসঅ্যাপে আল জাজিরা বিমানের টিকিটের কপি পাঠান। পরবর্তীতে যাচাইকালে দেখা যায় টিকিটটি জাল। এরপর লিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে লিটন হোয়াটসঅ্যাপে মজনু মিয়াকে ব্লক করে প্রতারণামূলকভাবে টাকা আত্মসাৎ করেন।

উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম জানান, চতুর্থ শ্রেণি পাস আসামি লিটন মিয়া ২০১২ সালে কুয়েতে ড্রাইভার হিসেবে কর্মরত ছিল। বাংলাদেশে এসে লিটন ভিসার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে একজন লিটনের টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশ চলে গেলে সেই প্রতিশোধ নিতে প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এর পরিপ্রেক্ষিতে লিটন প্রাথমিকভাবে ফেসবুকে সানফ্লাওয়ার ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি পেজ খুলে ১৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে টিকিট বিক্রির কথা বলে পোস্ট দেন। বিভিন্ন বুস্টিং এজেন্সি দ্বারা তার এই পোস্টটাকে বুস্ট করায়। তার চটকদার বিজ্ঞাপনে বিদেশে কর্মরত শ্রমজীবী লোকজন আকৃষ্ট হয়ে ফেসবুকে দেয়া ফোন নম্বরের মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে। তাদের মধ্য থেকে লিটন টার্গেট করে ডিসকাউন্ট প্রাইজে টিকিট বিক্রির টোপ ফেলে।

তিনি আরো জানান, লিটন গ্রাহকদের তার অফিস যাত্রাবাড়ীর সিটি সেন্টারের লিফটের ১১ তলায় বলে জানান এবং গ্রাহকদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর দেখে লোকজন আকৃষ্ট হয়ে ফাঁদে পা দেন। অ্যাকাউন্ট নম্বর খোলার জন্য তার নিজ দুলাভাই বিল্লালকে ব্যবহার করেন। লিটনের অবর্তমানে গ্রাহকদের সঙ্গে রিয়াজ কথা বলতেন। এয়ার টিকিট ক্রেতাদের টাকা পেয়ে তাদের হোয়াটসঅ্যাপে ব্লক করে দিতেন।

তদন্তে জানা যায়, লিটনের নামে ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানায় তিনটি প্রতারণার মামলা ও বরগুনায় একটি নারী নির্যাতনের মামলা রয়েছে। আসামিদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য আলামত উদ্ধারের চেষ্টাও অব্যাহত আছে।

বিবার্তা/লিমন