 
        
 অঅ-অ+
অঅ-অ+
                    সুবিধাবঞ্চিত ভিয়া ফায়োরিতার ধুলোমাখা রাস্তায় একটি শিশু কাঁদছে—না, সে কাঁদছে না, সে হাসছে! একটি ছেঁড়া বল নিয়ে সে ছুটছে স্বপ্নের পিছনে। সেই শিশুটির নাম ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। আজ তার ৬৫তম জন্মদিন।
১৬ বছর বয়সে ম্যারাডোনার মহাকাব্যিক ইতিহাস রচনার শুরুটা হয়েছিল। অল্প বয়সেই জাতীয় দলে ডাক পড়ে তার। ১৯৭৯ সাল, জাপানের মাটিতে যুব বিশ্বকাপ। ১৯ বছরের ম্যারাডোনা নেতৃত্ব দেন আর্জেন্টিনাকে। তার কাধে করে আর্জেন্টিনা যুব বিশ্বকাপ জিতে। যেখানে গোল্ডেন বলের খেতাবও উঠেছিল ম্যারাডোনার কাঁধে। দেশ বুঝে যায়, এসেছে ফুটবলের নয়া তারকা, স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। ছোট্ট দৈহিক গড়ন, কিন্তু হৃদয়ে আগুন- যা জ্বালিয়ে দিয়েছে বিশ্ব!
আর্জেন্টিনার জার্সিতে প্রথমবার ১৯৮২ কাপ বিশ্বকাপ খেলতে নামেন ম্যারাডোনা। তবে সেবার ব্রাজিলের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখে শেষ হয় তার আসর। কিন্তু ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপ? ওহ, সেটা ছিল মহাকাব্য! ইংল্যান্ড-আর্জেন্টিনা কোয়ার্টার ফাইনাল। ৫১তম মিনিট। বল উড়ে গেলো। ম্যারাডোনা লাফালেন। হাত উঠলো। গোল! রেফারি হুইসল বাজালেন। বিশ্ব চিৎকার করলো-‘হ্যান্ড অফ গড!’ ডিয়েগো পরে বলেছিলেন, ‘এটা ছিলো ঈশ্বরের হাত। আমার নয়।’
চার মিনিট পর? ৫৫তম মিনিট। বল তার পায়ে। ১০ জনকে কাটিয়ে ৬০ মিটার দৌড় সোলো রান। গোলরক্ষককে ফাঁকি। গোল! যা পুরো বিশ্বকে হতবাক করে। বিবিসি কমেন্টেটর চিৎকার করলেন- ‘এটা ফুটবল নয়—এটা কবিতা! এটা শিল্প!’ সেই গোল বিশ্বকাপের ইতিহাসে ‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’। আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ তার নেতৃত্বে! ফুটবল জাদুকর পেছনে ফিরে তাকাননি আর।
একে একে গড়েছেন নয়া বিস্ময়। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন ফুটবল বিশ্বে। নিজ দেশ ছাড়িয়ে ইতালির নাপোলির ত্রাণকর্তা হয়ে যান। জুভেন্টাস, এসি মিলানের জায়ান্টদের ভিড়ে নয়া সম্রাট! মাত্র সাত বছরে লিগ, ইউরোপিয়ান কাপ- নাপোলির ত্রাণকর্তা। শহরের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য সহায়তা, উদ্যোগ। নাপোলসের মানুষের নিঃশ্বাসে, ভালোবাসায় চিরকাল বেঁচে থাকবেন এল ডিয়াগো!
তবে ফুটবল এই জাদুকরের জীবনে সমালোচিত কাণ্ডও ছিল অনেক। ১৯৯০ বিশ্বকাপ ফাইনালে তুললেন আর্জেন্টিনাকে, কিন্তু ডোপ টেস্ট পজিটিভ। ১৫ মাস নিষেধাজ্ঞা। ১৯৯১ নেপলসে ড্রাগসহ ধরা, ১৯৯৪ বিশ্বকাপ থেকে বহিষ্কার। এরপর ম্যারাডোনাকে আর স্বাভাবিক ছন্দে দেখা যায়নি।
২০ বছরের আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ক্যারিয়ারে ৩৪৬টি গোল করেছেন আর্জেন্টাইন এ মহাতারকা। ২০০৮ সালে মেসিদের কোচ ছিলেন তিনি। তার অধীনে অনেক চড়াই-উতরাই শেষে ২০১০ বিশ্বকাপে টিকিট কাটে আকাশি-নীল শিবির। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির কাছে ৪ গোল হজম করে বিদায় নেয় মেসিরা। তবু আর্জেন্টিনার আলোর দিশারি! যা পরবর্তীতে এগিয়ে নিয়ে যাচ্চছেন লিওনেল মেসি।
২০২০ সাল, বুয়েন্স আইরেসের হাসপাতালে আইসোলেশনে থেকে ৬০তম জন্মদিন পালন করেন ফুটবলের এই ঈশ্বর। কেউ ভাবেনি, ২৫ নভেম্বর হৃদরোগে চলে যাবেন না-ফেরার দেশে। দুই বছর পর মেসি তার পথে হাঁটেন, ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন! ফুটবল বিধাতার নির্মম পরিহাস, কিংবদন্তি বেঁচে থেকে শিষ্যদের মহাকাব্য দেখতে পাননি।
আজ ৬৫তম জন্মদিনে ম্যারাডোনা জীবন্ত! তার বলে স্বপ্ন ছোঁয়া, তার লড়াইয়ে অনুপ্রেরণা। ফুটবলের জাদুকর, চির অমর- বিশ্ব তোমাকে ভুলবে না কখনো!
বিবার্তা/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]