বর্তমানে বাজারে যে সেন্ট বা পারফিউম পাওয়া যায় তাতে সাধারণত আঙ্গুর বা খেজুরের রস থেকে প্রস্তুত কৃত এ্যালকোহল থাকে না। বরং বিভিন্ন শস্যদানা, গাছ-পালার খাল, পেটোল ইত্যাদি জিনিস থেকে প্রস্তুতকৃত এলকোহল মিশানো হয়, যা নাপাক নয়। সুতরাং তা ব্যবহার করা ও তা ব্যবহার করে নামাজ আদায় করা জায়েজ হবে। সূত্র: তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম : ৩/৬০৮, বুহুস : ১/৩৪১।
অ্যালকোহলযুক্ত যেসব সুগন্ধি বা পারফিউম পাওয়া যায়, তা ব্যবহার না করাই উত্তম ও শ্রেয়। অ্যালকোহলযুক্ত সুগন্ধি ব্যবহার করা জায়েজ আছে কি না, তা জানার জন্য আগে মদ বা অ্যালকোহলের বিধান জানা জরুরি। হযরত ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর মতে, মদ বা অ্যালকোহল হলো, যা আঙ্গুরের কাচা রস থেকে তৈরি হয়। এটি যখন ভালোভাবে সিদ্ধ করা হয়, তখন তা মদ হয়।
মোটকথা যে মদ বা অ্যালকোহলের উপাদান আঙ্গুর সেটাই কেবল মদ। এটি নাপাক। এর ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার অল্প বা বেশি, নেশা হোক বা না হোক সবই হারাম। এ ব্যাপারে সবাই একমত।
আরেকটি হলো, এমন মদ, যার উপাদান- খেজুর বা কিসমিস। এটিও হারাম, নাপাক। অল্প হোক বেশি হোক পান করা হারাম। তবে এর নিষিদ্ধতা প্রথমটার মতো অকাট্য নয়।
তাই এ ধরনের মদ্যপায়ীর ওপর ইসলামি হদ (শাস্তি) কার্যকর হয় না। এই কারণে তা বৈধ উদ্দেশ্যে বিক্রয় জায়েজ। যেমন মেডিসিনের ব্যবহারের জন্য এ ধরনের অ্যালকোহলের ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। তৃতীয় ধরনের অ্যালকোহল হলো, যার উপাদান উপরোক্ত বস্তু ছাড়া অন্য কিছু। যেমন গম, যব বা অন্য কোনো শষ্য, মধু ইত্যাদি।
এসব অ্যালকোহলের বিধান হলো, নেশা উদ্রেক করে না-এ পরিমাণ ব্যবহার করা বৈধ। নেশা উদ্রেক করা পরিমাণ ব্যবহার করা বৈধ নয়। এটি ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আবু ইউসুফ রহ.-এর অভিমত।
এ বিষয়ে মুফতি তাকি উসমানি লিখেছেন, 'বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। রাসায়নিক বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। বহু শিল্প কারখানা অ্যালকোহলের ব্যবহার করা ছাড়া চলা সম্ভব নয়। এককথায় বর্তমান সময়ে বহু মানুষ এর সঙ্গে জড়িত। এবং এর প্রচণ্ড প্রয়োজনয়ীতা রয়েছে। এখন আমাদের দেখার বিষয়, যদি এসব অ্যালকোহল আঙ্গুরের কাচা রস থেকে তৈরি না হয়, তবে তা বৈধ কাজে ব্যবহার করা ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর মতে বৈধ।
‘ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা’ (খ.১,পৃ.৫৪৪, প্রকাশকাল ১৯৫০খৃ.)-এ- বর্তমান বিশ্বে অ্যালকোহল কিসের থেকে তৈরি, তার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। সে তালিকায় আছে, মধু, শষ্য, যব, আনারসের রস, গন্ধক ও সালফেট অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান। তবে তাতে কোথাও আঙ্গুর বা খেজুরের কথা নেই।
সারকথা, ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর মতানুযায়ী বাজারে প্রচলিত অ্যালকোহল যদি খেজুর ও আঙ্গুর থেকে প্রস্তুত না হয়, তবে তা বৈধ কাজের উদ্দেশ্যে ব্যবহার বৈধ। নেশার উদ্রেক হয় না, এ পরিমাণ ব্যবহার করা যাবে।
আর এটিই স্বাভাবিক সত্য যে বর্তমানে বেশির ভাগ অ্যালকোহল আঙ্গুর ও খেজুর থেকে তৈরি হয় না। সুতরাং এসব বৈধ উদ্দেশ্যে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। তদ্রুপ ওষুধ তৈরিতে বা চিকিৎসায়ও ব্যবহার করা যাবে। অন্যান্য কাজেও ব্যবহার করা যাবে।' (দেখুন তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/৩৪৮,৩/৩৩৭; ফিকহুল বুয়ূ ১/২৯৮)
যদি কোনো অ্যালকোহলের ব্যাপারে প্রমাণিত হয় যে তা আঙ্গুর ও খেজুর থেকে তৈরি, তাহলে তা ব্যবহার করা যাবে না।
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]