
বরেণ্য এই রাজনীতিবিদ সম্প্রতি বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মুখোমুখি হয়েছেন। আলাপে তিনি দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতির নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তা’র নিজস্ব প্রতিবেদক মোহাম্মদ ইলিয়াস।
বিবার্তা: ভারত যে বার্তা দিয়েছে এর বাস্তবতা কতটুকু, আমেরিকা কতটা গুরুত্ব দেবে?
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: আমি মনে করি ভারত আমাদের একটি বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী দেশ। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশের সকল ক্ষেত্রে শান্তি বজায় থাকবে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভারত আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে বিরাট ভুল করেছে। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন কাজ করা ভারতের উচিত হবে না। ইদানিং লক্ষ্য করছি ভারত আমেরিকা একসাথে মিলে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ অবলম্বন করেছে।
বিবার্তা: সরকার পতনের আন্দোলন কর্মসূচি কতটা সফল হবে?
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: বর্তমানে আওয়ামী লীগ জোট ছাড়া প্রায় ৪০টি দল সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ এবং সকলের অংশগ্রহণের নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক গঠনের লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অন্যদিকে সরকার বলছে সংবিধানের কোন পরিবর্তন আনা যাবে না। সংবিধান কোরআন নয়, যে এটি পরিবর্তন করা যাবে না। দেশের এবং মানুষের জন্য যেকোনো সময় সংবিধান পরিবর্তন করা যাবে। তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ ১৯৯১ সালের নির্বাচন। ১৯৯০-৯১ সালের নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জামায়াতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণ। অনুরূপ ২০০৯ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছিল। সুতরাং এখানে অযৌক্তিক অজুহাত দিয়ে দেশের জনগণকে বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া উচিত হবে না।
বিবার্তা: দেশের চলমান পরিস্থিতি উত্তরণের পথ কি?
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: সরকারের একগুঁয়েমি মনোভাবের কারণে সমগ্র দেশের রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে এবং সামাজিক ব্যবস্থাপনায় জটিল আকার ধারণ করেছে। আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হুদাইবিয়ার সন্ধির মাধ্যমে সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে শিক্ষা দিয়েছেন যে, সমস্যা যতই জটিল এবং কঠিন হোক না কেন, শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে যদি আন্তরিকতা, সদিচ্ছা এবং দেশের মানুষের জন্য ভালোবাসা থাকে তাহলে যে কোন সমস্যার সমাধান কারো কাছে কোন কঠিন বিষয় নয়। তবে তার পূর্ব শর্ত হলো আমাদের সবাইকে একগুঁয়েমি মনোভাব পরিহার করতে হবে।
বিবার্তা: আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় না আসে বিএনপি আসবে কি?
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: আপনি একটি সুন্দর প্রশ্নের অবতারণা করেছেন। এই বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অনাস্থার উপর নির্ভরশীল। আমি মনে করি উৎসবমুখর পরিবেশে সকল প্রকার ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে জনগণকে ভোটদানের সুযোগ দিতে হবে।
বিবার্তা: তৃতীয় শক্তির উত্থানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আলোচনা হচ্ছে। এবিষয় আপনার মন্তব্য কী?
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: আগামীতে কি হবে না হবে এই ধরনের ভবিষ্যৎবাণী করার কোন সুযোগ নেই।
বিবার্তা: বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপকে কিভাবে দেখছেন?
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: আক্ষরিক অর্থে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ স্বাধীন কিন্তু বাস্তবিক অর্থে আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। যেমন ভারতের পূর্বাঞ্চল প্রদেশে মালামাল নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সাহায্য প্রয়োজন। বাংলাদেশের সাহায্য ব্যতিরেকে ভারতের পূর্ব অঞ্চলের অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় পড়ে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শুধু বড় দেশ বলে সমস্যা হবে না এটা সঠিক নয়।
বিবার্তা: ইসির দেওয়ার সময় অনুযায়ী নির্বাচন হবে কি? যদি না হয় তাহলে সংবিধান নিয়ে সংকট সৃষ্টি হবে কি?
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নির্বাচন লীগ। জনগণের স্বার্থে সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচন করার অধিকার তাদের নেই, এটি সরকারের আজ্ঞাবহ সংগঠন। আগামীতে নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়ন করতে হবে। স্বাধীনভাবে সুষ্ঠু অবাধ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে বিনা-বাধায় নির্বাচন করার মত সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ব্যতীত বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন কমিশন একটি দন্তহীন বাঘ। প্রকৃত অর্থে নির্বাচনের জন্য তাদেরকে ডিসি, এসপি, টিএনও এবং ওসির ওপর নির্ভর করতে হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যতীত পৃথিবীর কোন দেশেই নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে না। কারণ ওই সমস্ত দেশের নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে।
বিবার্তা: দেশের চলমান পরিস্থিতিতে যা ঘটছে- মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, ভোট দেওয়ার অধিকার নেই এই পরিস্থিতির জন্য আপনারা যুদ্ধ করেছিলেন কি?
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, জনগণকে প্রস্তুত করেছিলেন। প্রায় ১৬ বছর জেল খেটেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের সাথে বলতে হয় ১৯৭৪ সালে মাত্র এক মিনিটের মধ্যে গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল গঠন করেন। বর্তমানে অলিখিতভাবে বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা বাংলাদেশের তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করছে। পৃথিবী যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, মানুষ যে স্বাধীনচেতা তা বুঝতে চেষ্টাও করে না।
বিবার্তা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কর্নেল (অব.) অলি আহমদ: আপনাকে এবং বিবার্তাকেও ধন্যবাদ।
বিবার্তা/রোমেল/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]