শিরোনাম
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে?
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩, ১০:২০
ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে?
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই পদের নাম ঘোষণা করা হয় গত বছরের ২০ ডিসেম্বর। এরপর পেরিয়ে গেছে সাড়ে ৬ মাস- তবে এখন অবধি ঘোষণা করা হয়নি শিক্ষা, শান্তি, প্রগতির পতাকাবাহী এই সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ফলে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছেন, কবে হবে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি? এই বিষয়ে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বলছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ চলমান রয়েছে। খুব শীঘ্রই কমিটি ঘোষণা করা হবে।


তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, গত বছরের ৬ ডিসেম্বর রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সম্মেলন উদ্বোধন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি। সম্মেলনের ১৪ দিন পর মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর রাতে সাদ্দাম হোসেনকে সভাপতি ও শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে সাধারণ সম্পাদক করে সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শীর্ষ এই নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি।



ওইদিন কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার শীর্ষ নেতৃত্বের নামও ঘোষণা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন মাজহারুল কবির শয়ন, আর সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে রিয়াজ মাহমুদকে, সাধারণ সম্পাদক সাগর আহমেদ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সভাপতির পদে এসেছেন রাজীবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সজল কুণ্ডকে।



নিয়ম অনুযায়ী, ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা সংগঠনটির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সংগঠনটির সাংগঠনিক অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর নির্দেশনায় সংগঠনটির দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী নেতারা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।


ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ও (গ) ধারায় বলা আছে, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মেয়াদ দুই বছর। সেই হিসাবে কেন্দ্রীয় কমিটি ইতোমধ্যে ৪ ভাগের একভাগ অর্থাৎ ৬ মাসের অধিক সময় পার করেছে। ফলে এই কমিটিতে আসতে আগ্রহী পদ প্রত্যাশীরা বলছেন, সংগঠনকে গতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ করার কোন বিকল্প নেই। এই কাজটিকে অতিদ্রুত করার দাবি তাদের।


এদিকে ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটগুলোর মেয়াদ রাখা হয়েছে এক বছর। সেই হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় গঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার কমিটি নির্ধারিত সময়ের অর্ধেক পার করেছে। ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ এই ইউনিটগুলো থেকে অনেকের আবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়ার রীতি রয়েছে। ফলে কেন্দ্রীয় কমিটি না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এই শাখাগুলোর কমিটি করাও সম্ভব হচ্ছে না।


ছাত্রলীগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের প্রস্তুতি গুছিয়ে আনা হয়েছে। তাছাড়া এরই মধ্যে খসড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিও প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলেই কমিটি ঘোষণা করা হবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করার পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিও ঘোষণা করা হবে।


এদিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এবার নতুন করে আটটি সম্পাদকীয় পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। গত ১১ এপ্রিল, মঙ্গলবার ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।


বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী নতুন করে সংযুক্ত পদগুলো হলো- অটিজম বিষয়ক সম্পাদক, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক, মাদরাসা শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, কারিগরি শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, ছাত্রী ও নারী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বিষয়ক সম্পাদক, উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক। তবে নতুন পদ যুক্ত হলেও কমিটির আকার পরিবর্তন হবে না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কমিটির আকার ৩০১ সদস্য বিশিষ্টই থাকবে।


ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ প্রত্যাশীরা বলছেন, দিনের পর দিন সংগঠনের প্রতিটা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি। পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছি মধুর ক্যান্টিন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। কিন্তু ৬ মাসের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো ছাত্রলীগের কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়নি। ফলে আমরা পদ প্রত্যাশীরাও কোথাও নিজের পরিচয় দিতে পারছি না। কাজেই অবিলম্বে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা উচিত।


পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নেতৃত্ব প্রত্যাশার বিষয়ে তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভিশন ২০৪১, ডেল্টা প্লান ২১০০ এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়ন করতে সক্ষম, প্রগতিশীল, অসম্প্রায়িক ও সাংগাঠনিকভাবে দক্ষ যেই নেতৃত্ব আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বৈশ্বিক মানের কর্মদক্ষ করে তোলার ব্যাপারে কাজ করতে পারবে, এমন নেতৃত্ব বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ আসা সময়ের চাহিদা।


তারা আরও বলেন, যারা নীতি এবং নেত্রীর প্রশ্নে আপসহীন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন, উদার গণতান্ত্রিক দেশের উপযোগী ছাত্রসমাজ গড়ার সংগ্রামে দক্ষ, সৃজনশীল, সংস্কৃতিবান মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াকু, এমন নেতৃত্ব আমরা প্রত্যাশা করি।


পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে গঠন করা হবে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বিবার্তাকে বলেন, এই বিষয়ে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। খুব শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।


চলতি মাসের মধ্যে এই কমিটি গঠন করা হবে কিনা জানতে তিনি বলেন, হ্যাঁ-অবশ্যই। অল্প কিছু দিনের মধ্যে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে।


কমিটিতে কাদের মূল্যায়ন করা হবে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, যাদের দক্ষতা রয়েছে, অভিজ্ঞতা রয়েছে, যাদের ধারাবাহিকভাবে সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততা রয়েছে, এমন লোকদের আমরা মূল্যায়ন করব। আমরা চেষ্টা করছি তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে মনেপ্রাণে ধারণ করছে, লালন করছে এবং স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করতে সক্ষম, একইসাথে সাংস্কৃতিক ভাবে উজ্জ্বল তাদেরকে মূল্যায়ন করতে। আর সেই লক্ষ্যে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিতর্কিত কিংবা অনুপ্রবেশকারী কাউকে ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে না।


এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানকে বিবার্তার পক্ষ থেকে বিগত ৩ দিন ধারাবাহিকভাবে ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি সংবাদের বিষয়বস্তু লিখে তার মুঠোফোন নাম্বারে বারবার ক্ষুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।


তবে কবে নাগাদ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে জানতে চাইলে সংগঠনটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বিবার্তাকে বলেন, এটা প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। ছাত্রলীগ একটি বিরাট সংগঠন। আমাদের দেশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব কিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে ছাত্রলীগের সভাপতি-সেক্রেটারি কমিটি গঠন করছেন। কমিটির খসড়া হয়তো শেষ হয়ে গেছে। এরপর তারা এটা প্রকাশ করবে। এটা নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।


বিবার্তা/রাসেল/রোমেল/এসবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com