বাধার মুখেও রাজপথে বিএনপি
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৩, ২০:০৪
বাধার মুখেও রাজপথে বিএনপি
মো. ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির চলমান আন্দোলন-কর্মসূচিতে বাধা, হামলা, মামলা নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের পরও ক্ষ্যান্ত নয় দলটি। এর মধ্যেও নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজপথে সক্রিয় রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপি। সাম্প্রতি কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় কখনো ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের আবার কখনো পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। এসব সংঘর্ষের পরপরই মামলা এবং গ্রেফতার শুরু হয়েছে। এতে করে উদ্বিগ্ন দলটির হাইকমান্ড।


বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ফের একতরফা নির্বাচন করতেই পুরনো কৌশলে এগোচ্ছে। নির্বাচনী মাঠ থেকে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দিতে সরকার ভয়াবহ মহাপরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে। তারা অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য মরণ কামড় দিয়েছে। যতই দিন যাচ্ছে, সরকারের হিংস্রতা ততটাই প্রকট হচ্ছে। গায়েবি মামলা, গ্রেফতার-নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়েছে সরকার। তাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিএনপিসহ বিরোধী দল ও মতকে নিশ্চিহ্ন করা। সরকার মামলা হামলা গ্রেফতারের মাধ্যমে চলমান আন্দোলন দমিয়ে রাখতে চায়, কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন চলছে। এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। মামলা হামলা যতই করা হবে, আন্দোলনের তীব্রতা ততই বৃদ্ধি পাবে।



বিএনপির কেন্দ্রীয় দফতর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ১৯ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত কেন্দ্র ঘোষিত জনসমাবেশকে ঘিরে সারাদেশে ১৫৭টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৭১০ জনের অধিক নেতাকর্মী। এছাড়া আসামি করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার ৭৫০ এর অধিক নেতাকর্মীকে।


জানা গেছে, ২৩ মে রাজধানীতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। পদযাত্রা কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীর সাইন্সল্যাব এলাকায় দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ওইদিন বিকেল ৩টার দিকে রাজধানী ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ মোড় থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। তারপর আবাহনী মাঠ, ঝিগাতলা, সীমান্ত স্কেয়ার হয়ে বিকেল ৪টার দিকে ধানমন্ডি ল্যাবএইডের কাছে শেষ হওয়ার পরপরই সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ধানমন্ডি থানা বিএনপির সভাপতি শেখ রবিউল আলম রবিসহ অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে এবং শতাধিক আহত হয়েছেন বলে দাবি বিএনপির। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় নিউ মার্কেট ও ধানমন্ডি থানায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। এ মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ ৪৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পরিচয় আরও চার থেকে পাঁচশ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।


এরপর গত ২৬ মে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দেশের ৯ বিভাগের ১৮ জেলা ও মহানগরে জনসমাবেশ করছে বিএনপি। এদিন রাজধানীর দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের জিনজিরায় ঢাকা জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত জনসমাবেশ চলাকালে হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। এতে ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীসহ অন্তত ৩০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। একই দিনে খাগড়াছড়িতে সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার পথে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে।



এর আগে গত ১৯ মে খুলনায় বিএনপির সমাবেশে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত ২০ মে পটুয়াখালীতে দলটির জনসমাবেশে হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি দুই পর্বের জনসভা কর্মসূচি করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এর পরপরই মামলা শুরু হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।


জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বিবার্তাকে বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করে জেলে ঢোকানো হচ্ছে সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য। বিএনপি যাতে নির্বাচন করতে না পারে সেজন্যই হঠাৎ করে মামলা ও ধরপাকড় বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ তাদের পায়ের তলায় মাটি নেই। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের আমাদের আন্দোলন চলছে এবং চলবে।


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বিবার্তাকে বলেন, সরকার সকল ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছে। দিনে দিনে এতটাই ব্যর্থতার মধ্যে পৌঁছে গেছে যে- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি, সরকারের সাথে বিভিন্ন দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। সবকিছু মিলিয়ে সরকার এতটাই অস্থির- তারা মনে করছে আর ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন ওরা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাকে হয়ত ক্ষমতায় চায় না।


তিনি আরও বলেন, এই অস্থিরতার মধ্যে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও আমান উল্লাহ আমানের রায় বহাল রাখা হয়েছে। একই মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে খালাস দেওয়া হয়েছে। সারাদেশে বিভিন্ন জেলায় এবং ঢাকা মহানগরীর নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। আমার কাছে মনে হয়েছে সরকার এতটাই নার্ভাস যে তারা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। এজন্যই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, হামলা ও গ্রেফতার শুরু হয়েছে। এভাবে শেষ রক্ষা হবে না। অতীতে কোন স্বৈরশাসক মামলা হামলা করে টিকে থাকতে পারেনি। মামলা হামলা যতই করা হবে আন্দোলনের তীব্রতা ততই বৃদ্ধি পাবে। মামলা হামলায় চলমান আন্দোলন বাধাগ্রস্ত হবে না। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।


জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বিবার্তাকে বলেন, মামলা হামলা গ্রেফতার উপেক্ষা করেই আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। সরকার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য মরণ কামড় দিয়েছে। গ্রেফতারের মাধ্যমে আমাদের চলমান আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আমাদের আন্দোলন চলছে। এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।


বিবার্তা/ইলিয়াস/রোমেল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com