জবই বিলে পরিযায়ী পাখিদের মেলায়
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:০১
জবই বিলে পরিযায়ী পাখিদের মেলায়
পর্যটন ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

নওগাঁ শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে সাপাহার উপজেলার শিরন্টি, আইহাই ও পাতাড়ী ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী জবই বিল।


এক দশকের বেশি সময় ধরে সাইবেরিয়া অঞ্চলসহ বিশ্বের শীতপ্রধান নানা দেশ থেকে এই বিলে পাখি আসা শুরু করে। ইতিমধ্যে বিলটিকে পাখিদের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।


শীত ও বসন্তে সকাল-সন্ধ্যা পাখিদের কলকাকলিতে মুখর থাকে বিলের চারপাশ। পাখির কিচিরমিচির শব্দে ঘুম ভাঙে বিলের আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের। পাখি দেখতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।


এখানে, আকাশে ঝাঁকে ঝাঁকে শামুকখোল, পানকৌড়িসহ নাম না–জানা পরিযায়ী পাখির ওড়াউড়ি। নিচে জবই বিল। পানিতে টুপটাপ ডুব দিচ্ছে কত শত পাখি। বিলের চারপাশে ফসলের মাঠ ও গ্রাম। শর্ষে, গমসহ ফসলের খেত ও গ্রামের গাছে গাছে পাখিরা ওড়াউড়ি করছে।


বিলের আশপাশের বাসিন্দারা জানান, প্রতিবছর শীতের সময় বিলে পাখিদের বিচরণ বেড়ে যায়। নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা বাড়তে শুরু করে। তবে এবার নভেম্বরের ১৪-১৫ তারিখ থেকে বিলে পাখি আসা শুরু করে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির বিচরণ থাকে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি পাখির বিচরণ দেখা যায়।


সোমবার বিকেলে জবই বিলে গিয়ে প্রথম দেখায় বিলটিকে হাঁসের খামার মনে হয়। কাছে যেতেই ভুল ভাঙে। মানুষের উপস্থিতি টের পেয়েই উড়াল দেয় পাখিগুলো। স্থানীয় লোকজন এসব পাখিকে বালিহাঁস, সরালি ও পাতি সরালি বলে ডাকেন। পরিযায়ী পাখি ছাড়াও বিলে শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নিহাঁস ও বকের দেখা মিলল।


দর্শনার্থীদের কেউ সাপাহার উপজেলা সদর থেকে জবই বিলে যেতে চাইলে ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। উপজেলার শিরন্টি ইউনিয়ন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তঘেঁষা। বিলের উত্তর অংশে ভারত সীমান্ত। বর্ষায় জবই বিলের আয়তন প্রায় ২ হাজার হেক্টর হয়। শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৮০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে পানি থাকে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বিলে খাসজমির পরিমাণ ৪০৩ হেক্টর। মূলত ডুমরইল, বোরা মির্জাপুর, মাইল, ভুতকুড়ি ও কালিন্দার বিলের সমন্বয়ে জবই বিল।


দেড় দশক আগে ‘জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও সমাজকল্যাণ’ নামে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের তরুণেরা। কেউ যাতে পাখি শিকার করতে না পারেন, সেদিকে নজর রাখেন সংস্থাটির সদস্যরা। প্রতিবছর সংস্থাটির পক্ষ থেকে জবই বিলে পাখি জরিপ করা হয়। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, গত বছর জবই বিলে দেশি ও পরিযায়ী মিলে ৩২ ধরনের ৬ হাজার ৬৯২টি পাখির আগমন ঘটেছিল। এবার জানুয়ারি থেকে এপ্রিল ও ১ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট পাখি এসেছে ১১ হাজার ২৩০টি। ৩২ ধরনের পাখির মধ্যে পাতি সরালি, লাল ঝুঁটি-ভূতি হাঁস, শামুকখোল ও পানকৌড়ি পাখির সংখ্যাই বেশি।


জবই বিল জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সংস্থার সভাপতি সোহানুর রহমান বলেন, গতবারের চেয়ে এবার বিলে পাখির বিচরণ বেশি। বিলে ছোট মাছ বেশি থাকায় পাখিরা খাবার পাচ্ছে বেশি। এ ছাড়া জবই বিলের পূর্ব পাশে খালের দুই ধারে তাঁদের সংস্থার পক্ষ থেকে গাছ লাগানো হয়েছে। এতে পাখিরা গাছে অবস্থান নিতে পারছে। এ জন্য পাখি বেশি মনে হচ্ছে। তবে বিলে বেশি বেশি মাছ আহরণ, অনিয়ন্ত্রিত ইঞ্জিনচালিত নৌকার চলাচলসহ নানা কারণে বিলের জীববৈচিত্র্য হুমকিতে পড়ছে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com