‘গাড়ি চলে না চলে না, চলে না-রে গাড়ি চলে না’, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম, গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু-মুসলমান, মিলিয়া বাউলা গান, ঘাঁটু গান গাইতাম’ কিংবা ‘কোন মেস্তরী নাও বানাইলো কেমন দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ুর পঙ্খী নাও।’ এমন অসংখ্য জনপ্রিয় লোকগানের স্রষ্টা বাউল শাহ আব্দুল করিমের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর)।
১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই বাউল সম্রাট। তার বাবা ইব্রাহিম আলী ও মা নাইওরজান। দারিদ্র ও জীবন সংগ্রামের মাঝে বড় হওয়া বাউল শাহ আব্দুল করিমের সংগীত সাধনার শুরু ছোট বেলা থেকেই। তখন থেকেই একতারা ছিলো তার নিত্যসঙ্গী। জীবন কেটেছে সাদাসিধেভাবে।
কমর উদ্দিন, সাধক রসিদ উদ্দিন, শাহ ইব্রাহিম মোস্তান বকসের কাছ থেকে নেনে বাউল ও আধ্যাত্মিক গানের তালিম। বাউল আব্দুল করিম সশরীরে থাকলেও তার গান ও সুরধারা কোটি তরুণসহ সব স্তরের মানুষের মন ছুঁয়ে যায়।
শাহ আব্দুল করিম বাংলার লোকজ সংগীতের ধারাকে আত্মস্থ করেছেন অনায়াসে। ভাটি অঞ্চলের সুখ-দুঃখ তুলে এনেছেন গানে। নারী-পুরুষের মনের কথা ছোট-ছোট বাক্যে প্রকাশ করেছেন আকর্ষণীয় সুরে। ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলে সব অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।
বাউল শাহ আব্দুল করিম জীবিকা নির্বাহ করেছেন কৃষি কাজ করে। কিন্তু কোনো অভাবই তাকে গান থেকে বিরত রাখতে পারেনি। অসংখ্য গণজাগরণের গানের রচয়িতা বাউল শাহ আব্দুল করিম অত্যন্ত সহজ সরল জীবন যাপন করতেন। গানে-গানে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি লড়াই করেছেন ধর্মান্ধদের বিরুদ্ধে। এজন্য মৌলবাদীদের দ্বারা নানা লাঞ্ছনারও শিকার হয়েছিলেন তিনি।
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, কাগমারী সম্মেলন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মানুষকে প্রেরণা যোগায় শাহ আব্দুল করিমের গান। গানের জন্য মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহচর্যও পেয়েছেন তিনি।
শাহ আব্দুল করিম লিখেছেন ও সুর দিয়েছেন ১৬০০ এরও বেশি গান। সাতটি বইয়ে গ্রন্থিত আছে এসব গান। বাংলা একাডেমির উদ্যোগে তার ১০টি গান ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে।
মৃত্যুর কয়েকবছর আগে বেশ কয়েকজন শিল্পী বাউল শাহ আব্দুল করিমের গানগুলো গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলে তিনি দেশব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন। পেয়েছেন একুশে পদক। শাকুর মজিদ তাকে নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘ভাটির পুরুষ’ নামে একটি প্রামাণ্য চিত্র। এখনো সুবচন নাট্য সংসদ করিমকে নিয়ে শাকুর মজিদের লেখা মহাজনের নাও নাটকের প্রদর্শনী করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
২০১৭ শাহ আব্দুল করিমের জীবনভিত্তিক প্রথম উপন্যাস লিখেন সাইমন জাকারিয়া। নাম ‘কুলহারা কলঙ্কিনী’। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গানের মধ্যে দিয়ে তাকে খুঁজতে প্রতিদিন ভক্ত ও স্বজনরা গানের আসর বসান। গানের মধ্যে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে চান ভক্ত অনুরাগীরা।
কিংবদন্তীতুল্য এই শিল্পী ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ৯৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
বিবার্তা/অনামিকা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]