শিরোনাম
মা, তোমাকে খুব মনে পড়ে
শহীদ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২০, ১৪:৪৪
মা, তোমাকে খুব মনে পড়ে
মুহাম্মদ সামাদ
প্রিন্ট অ-অ+

আমাদের তীর্থভূমি টুঙ্গিপাড়ার আদুরে কন্যা তুমি।
কাশফুলে শাপলায় বকুলের গন্ধে রূপসী ঘুঘুর গানে
কান্তিমান মুজিবের ভালোবাসার বৈভবে
তোমার সংসারযাত্রা অবুঝ শৈশবে।
তোমার ভালোবাসায় মুজিব এগিয়ে গেছে অভীষ্ট গন্তব্যে;
সেই থেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির সহযাত্রী হয়ে
জীবনের পথে পথে প্রিয় বাংলার সবুজের সমারোহে
বৃক্ষে ঘাসে ইতিহাসে কত শত ফুল তুমি ফুটিয়েছো।
মা, তোমাকে খুব মনে পড়ে...


আটপৌরে তোমার তাঁতের শাড়ি, কালো পশমি চাদর;
পাকঘরের তৈজসপত্র, বসার বেতের মোড়া;
তোমার সুগন্ধী জর্দা, জাফরানি পাতি-
কারুকাজখঁচিত পানের রেকাবি; শুভের কাজলদানি;
ঘনচুলে জবা কুসুম তেলের সুরভিত ঘ্রাণ;
আর ধীর স্থির নিরাভরণ তোমার প্রশান্ত মুখমণ্ডলে
কী রাজসিক সারল্য মাগো


দীর্ঘ সংগ্রামে খুলে গেছে তোমার কণ্ঠের চন্দ্রহার
তিলে তিলে জমানো সঞ্চয় আর সমূদয় স্বর্ণালংকার;
প্রিয় মুজিবের নিঃসঙ্গ বন্দি জীবনের যাতনার সহমর্মী হয়ে
জেলগেটে পৌঁছে দেয়া তোমার খাতার পর খাতা
বাঙালির অনুপম মহাকাব্য হয়ে ইতিহাসের নতুন পাতা
ভরিয়ে তুলেছে লাল নীল সাদা ও গোলাপী ফুলের সম্ভারে;
আজ পৃথিবীর সব রাষ্ট্রচিন্তাবিদ উদ্বেলিত চিত্তে খুঁজে ফেরে
হীরা মণি মুক্তোর মতোন মুজিবের রাষ্ট্রদর্শন।


সুদূর শৈশবে, মা-বাবা হারিয়ে কাউকে আর হারাতে চাও নি তুমি;
তাই, অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে কী আনন্দের সংসার
তুমি সাজিয়েছিলে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরে!
মাটির মায়ায় বেঁধেছিলে সারা বাংলার সকল সন্তানেরে;
বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে-কারাগার থেকে পাঠানো নির্দেশ
লক্ষ্মীমন্ত তোমার হাতের স্পর্শে শহরে বন্দরে নদীতে প্রান্তরে
ফসলের মাঠে মাঠে মানুষের প্রাণে প্রাণে গিয়েছে ছড়িয়ে।
৭ই মার্চের দুপুরে মাগো, কী-যে মহামন্ত্র তুমি তুলে দিলে
বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবের কানে
রেসকোর্সের উত্তাল জনসমুদ্রে পৃথিবী কাঁপানো ভাষণে
স্বাধীনতাপ্রিয় জনতার অগ্নিঝরা মুক্তির শ্লোগানে
নিরস্ত্র বাঙালি জাতি মুহূর্তে সশস্ত্র হলো
সে আগুন ছড়িয়ে গেলো সবখানে।



মুক্তিযুদ্ধের সময় মৃত্যুর মুখোমুখি কী দুঃসহ বন্দি জীবন তোমার!
আশৈশব সুখে-দুঃখে আগলে রাখা মুজিব ফাঁসির দণ্ড নিয়ে
হাজার মাইল দূরে খুনিদের অন্ধকার কারাগারে;
বীরপুত্র কামাল-জামাল যুদ্ধের রক্তাক্ত রণাঙ্গনে;
গুলি আর বোমার প্রচন্ড শব্দে তোমার রাসেল
ছোট্ট দুটি হাতে গভীর মায়ায় তুলো গুঁজে দেয়
হাসিনার সদ্যপ্রসূতপুত্র জয়ের কানে;
নিটোল কিশোরীকন্যা রেহানার নীরব কান্নায়
জোনাকির আলো নিভে যায় করুণ সন্ধ্যায়;


সারারাত সেজদায় তোমার অশ্রুর আলোকরশ্মিতে উদ্ভাসিত হয়
দূর কারাগারে বন্দি মুজিবের অবিচল মুখ আর বাঙালির জয়!
তারপর, রক্তে ঘামে ও সম্ভ্রমে ভিজে প্রিয় স্বাধীনতা আসে
তারপর, কোটি জনতার অশ্রুতে, ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে
লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে সে মহামানব ফিরে আসে;
প্রিয় মাতৃভূমি মুক্তির আনন্দে নবজীবনের উল্লাসে ভাসে।
মা, হঠাৎ এ কেমন কৃষ্ণপক্ষ নেমে আসে তোমার আকাশে!
পঁচাত্তরে নৃশংস আগস্টের অসহায় অন্ধকারে
ঘাতকের বুলেটের নির্দয় আঘাতে প্রাণপ্রিয় পুত্র
কামাল, জামাল আর অবুঝ রাসেল সোনাকে হারিয়ে
প্রিয়তম মুজিবের লুটিয়ে পড়ার নির্মম করুণ দৃশ্য দেখে
অঝোর কান্নায় তুমি দুহাত তুলেছো আকাশের দিকে;
মাগো, শোকে পাথর হয়েও বাংলার ঘরে ঘরে
অগণিত সন্তানের শুভকামনায় অসীম প্রজ্ঞায়
দেশমাতৃকার তরে তোমার দুইকন্যাকে উৎসর্গ করে
পবিত্র অঞ্জলি ভরে জীবনের অন্তিম প্রার্থনা শেষে
প্রভাতপূর্বের ম্লান জোছনায় ভেসে ভেসে
তুমি চলে গেছো পরম শান্তির দেশে।


বীরকন্যা শেখ হাসিনা জাতির পিতার স্বপ্নে ও সাহসে বলীয়ান হয়ে
তোমার দৃঢ়তা ধৈর্য প্রজ্ঞা আর ভালোবাসা বুকে নিয়ে
মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর নিরন্তর সংগ্রামে চলেছে এগিয়ে;
মা, তোমার স্নেহময় আঁচলের ছায়ায় পত্র-পল্লবে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশ
আজ ধনে-মানে-ধানে ফুলে-ফলেভরা পৃথিবীর এক নতুন বিস্ময়।


মাগো, তোমার কথাই বারবার মনে পড়ে... মনে পড়ে...


বিবার্তা/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com