শিরোনাম
‘দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করতেও আমি প্রস্তুত’
প্রকাশ : ১৯ নভেম্বর ২০১৯, ২১:০১
‘দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করতেও আমি প্রস্তুত’
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

‘আমি যুবলীগকে প্রথম থেকেই নিজের প্রাণের সংগঠন মনে করি। ১৯৮৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আমি শুধু যুবলীগের সাথেই যুক্ত আছি। ফলে সারা দেশের সকল যুবলীগ কর্মীদের সাথে আমার খুব ভাল যোগাযোগ রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী আমাকে দলের দুঃসময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছেন যার প্রতিটি আমি নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে পালন করেছি। তৃণমূলের একজন কর্মী থেকেই আজকে আমার এই জায়গায় আসা।তাই তৃণমূল কর্মীদের ত্যাগ ও কষ্ট আমার চেয়ে ভাল কেউ উপলব্ধি করতে পারবে না।তাই আমি ত্যাগী বঞ্চিত যুবলীগ কর্মীদেরই সবচেয়ে বেশি মূল্যায়ন করব। যুবলীগের জন্য বা দলের জন্য আমি আমার সর্বোচ্চ ত্যাগ করতেও প্রস্তুত আছি এবং অতীতেও তা করেছি।তবে সব কিছুই আমি আমার নেত্রীর উপর ছেড়ে দিয়েছি।তিনি আমাকে যেভাবে যে পদে ভাল মনে করবেন তা আমি মাথা পেতে নেব।’


নিজেকে নিজের মূল্যায়ন করা সম্পর্কে বিবার্তা প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন যুবলীগ নেতা মোঃ ফারুক হোসেন।


২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম জাতীয় সম্মেলনে চেয়ারম্যান পদের জন্য আলোচনায় থাকা দলের দুঃসময়ের কর্মী মোঃ ফারুক হোসেন বিবার্তার সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তার রাজনৈতিক জীবন ও যুবলীগ নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তার দীর্ঘ আলাপের বিশেষ অংশটুকু বিবার্তার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।



যুব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন যুবলীগ্ নেতা ফারুক হোসেন


বিবার্তা: রাজনীতিতে হাতেখড়ি কবে এবং কিভাবে?


ফারুক হোসেন: আমরা পারিবারিক ভাবেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত।স্কুল জীবন পার করার পরেই ইয়াছিন কলেজ ফরিদপুরে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করি এবং ১৯৮০ সালে কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও ১৯৮১ তে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হই। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৬ পর্যন্ত টানা ৪ বছর এরশাদ শাসনামলে আমি ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। তখন সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংগঠিত ইউনিট ছিল আমাদের ফরিদপুর।১৯৮৩ সালে আমি জেলে থাকা অবস্থায় নেত্রী আমাকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচন করেন।জেলে থাকা অবস্থায় ১৯৮৬ সালে নেত্রীর নির্দেশেই আমি যুবলীগ জেলা শাখার সাধারণে সম্পাদক নির্বাচিত হই।টানা ১১ বছর আমি যুবলীগকে এমনভাবে সংগঠিত করেছিলাম যে এখনো সেটা রোল মডেল। ১৯৯৫ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত জেলা যুবলীগের সভাপতি ও তার পরের বছর কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য নির্বাচিত হই।এছাড়া ২০০০ থেকে ২০০৩ দলের দুঃসময়ে আমি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলাম।২০১২ তে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার নির্বাচিত হই।


বিবার্তা: রাজনীতির একাল সেকাল নিয়ে আপনার মতামত কি?


ফারুক হোসেন: আমরা যখন রাজনীতি করতাম তখন কোনো টাকা পয়সার কারবার ছিল না।আমাদের যে কয়জন নেতাকর্মী ছিল তারাই জন প্রতি চাঁদা উঠিয়ে মিছিল মিটিং করতাম।আর নেতা বললে যে কোনো সময় আমরা দলের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত থাকতাম।রাজনীতির সেই সুদিন ফিরিয়ে আনতে হলে সেইসব দিনে যারা ত্যাগী কর্মী ছিল তাদের মূল্যায়ন করতে হবে।পারিবারিক ভাবে যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারন করেন ও নিজেকে সেই হিসেবে গড়ে তুলতে পারে, তাদেরকেই দলে স্বাগত জানাতে হবে।



আদালত পাড়ায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মিছিল করছেন ফারুক হোসেন


বিবার্তা: আপানার রাজনীতির মূল দর্শন কি?


ফারুক হোসেন: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আমার নেত্রী শেখ হাসিনা আমার রাজনীতির দর্শন ও আদর্শ। আমার নেত্রী আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে লোভ লালসার উর্ধ্বে উঠে নিজেকে সাধারণ মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে হয় এবং তাদের জন্য কাজ করতে হয়।


বিবার্তা: আপনি শীর্ষ পদ পেলে কর্মীদের মূল্যায়ন কিভাবে করবেন?


ফারুক হোসেন: তৃণমূল হচ্ছে দলের প্রাণ।আমি দায়িত্ব পেলে সর্বপ্রথম তৃণমূলের ত্যাগী কর্মীদের মূল্যায়ন করব।আর সংগঠনের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত যত অনুপ্রবেশকারী আছে তাদের দল থেকে বিতারিত করব।বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মীদের শুধু মূল্যায়ন করা হবে।


বিবার্তা: সাধারণ মানুষের জন্য আপনার করনীয় কি আছে বলে মনে করেন?


ফারুক হোসেন: দেখুন আমি প্রটোকল রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না, আমি মানুষের সাথে থেকেই অসাধারণ কাজ করতে চাই। আমাকে যদি নেত্রী যুবলীগের দায়িত্ব দেন তাহলে আমি এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যে যুবলীগের কোনো কর্মী দ্বারা সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি হবে না।আমি নিজেকে সব সময় সধারণ মানুষেরই একজন মনে করি।আমি এবং আমার নেতাকর্মীরা সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করব।



নিজ অফিসে যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেন


বিবার্তা: যুবলীগের নতুন কমিটির সামনে আপনি কি কি চ্যালেঞ্জ দেখতে পাচ্ছেন এবং আপনি কিভাবে তা মোকাবেলা করবেন?


ফারুক হোসেন: সংগঠনের নতুন কমিটির সামনে খুব কঠিন চ্যালেঞ্জ, কারণ যে লক্ষ্য নিয়ে যুবলীগ পথচলা শুরু করেছিল সেই লক্ষ্য আর ঠিক নেই।আমার সর্বপ্রথম চ্যালেঞ্জ হবে যুবলীগের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা ও কর্মীদের মাঝে সেই আদর্শ জাগিয়ে তোলা।যুবলীগকে একদম নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে।নেতৃত্ব যেই আসুক তাদের উচিত হবে যুবলীগের সকল ইউনিটের কমিটি ঢেলে সাজিয়ে তা নেত্রীর কাছে জমা দেয়া।


বিবার্তা: সম্মেলন থেকে আপনি কি ধরনের নেতৃত্ব আশা করেন?


ফারুক হোসেন: আওয়ামী লীগের রাজনীতি আসলে ধাপে ধাপে শুরু হয়।ছাত্রলীগ যদি হাতে খড়ি হয় তবে যুবলীগে এসে তা মজবুত হয় ও আওয়ামী লীগে এসে তা পূর্ণতা পায়।আমার মতে সাবেক ত্যাগী ছাত্রলীগ কর্মীরাই যুবলীগের পদের সবচেয়ে বেশি দাবিদার। তবে যে কোনো ব্যাপারে মাননীয় নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নেত্রী যাকে যে পদে যোগ্য মনে করেন সেটাই সকল নেতাকর্মীরা মাথা পেতে নিবে।



নেতাকর্মীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেন


বিবার্তা: ভবিষ্যতে ছাত্রলীগ বা যুবলীগ কর্মীদের জন্য আপনার কি উপদেশ থাকবে?


ফারুক হোসেন: ছাত্রলীগ ও যুবলীগ উভয়ই আমার খুব আপন। তবে সাম্প্রতিক কালে তারা মূল ধারা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে। বেঁচে থাকার জন্য টাকা পয়সার দরকার আছে তবে সেটা অবশ্যই দলের নাম পদবী বিক্রি করে নয়।আমার একটাই উপদেশ থাকবে, যা কিছুই কর না কেন তাতে যেন দল বা সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ না হয়।



নিজ অফিসে বিবার্তা প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় যুবলীগ নেতা ফারুক হোসেন


বিবার্তা: আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ।


ফারুক হোসেন: আপনাকে ও আপনার পত্রিকার সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।


বিবার্তা/আদনান/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com