দ্রুত খাবার ও গরম কাপড় চান আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা
প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৩৭
দ্রুত খাবার ও গরম কাপড় চান আগুনে ক্ষতিগ্রস্তরা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

‘সারারাত বাচ্চা দুইটা নিয়ে খোলা আকাশের নিচে ছিলাম। মাঝরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শীতে জবুথবু অবস্থায় ছিলাম। গায়ে দেওয়ার মতো একটা কাঁথা বা বিছানাও ছিল না। সকালে রোদ ওঠার পর শরীরটা গরম হয়েছে। কিন্তু বাচ্চা দুইটার সর্দি লেগে গেছে। ওষুধ কিনবো কী করে, পকেটে টাকা নেই। আগুনে বসতঘর পুড়ে ছাই হয়েছে। এখন নতুন করে ঘর কীভাবে বানাবো, তা ভেবে দিশাহারা হয়ে গেছি।’


বুধবার (২৬ নভেম্বর) সকালে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর কড়াইল বস্তির বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন। তিনি পেশায় একজন ভ্যানচালক। পরিবারের চার সদস্য নিয়ে থাকতেন কড়াইল বস্তিতে। কিন্তু মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) লাগা আগুনে তার ঘরসহ প্রায় ১৫০০ ঘর পুড়ে গেছে। দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিটের সদস্যরা। এ আগুনে বস্তির প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।


কড়াইল বস্তির একটি ভাড়া বাসায় সাত বছর ধরে বাস করতেন বনানীর একটি বিপণিবিতানের কর্মী আবুল খায়ের। যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, ঠিক পাশে তার বাসা ছিল। আগুনে তার বাসার কোনো চিহ্ন নেই। ঘরের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।


পুড়ে যাওয়া ঘরের এক কোণে মন খারাপ করে বসে আছেন আবুল খায়ের। সঙ্গে তার স্ত্রী নাসরিন দাঁড়িয়ে আছেন। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না তারা। এক পর্যায়ে আবুল খায়ের বলেন, গতকাল যখন আগুন লাগে, আমি বনানীতে ছিলাম। স্ত্রীও বনানীর একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে। সে কাজ শেষ করে বিকেল চারটায় বাসায় যায়। এর কিছু সময় পর বস্তিতে আগুন লাগে। তখন স্ত্রী মুঠোফোনে কল দিয়ে আমাকে বিষয়টি জানায়। ছুটে গিয়ে দেখি, আমার ঘরেও আগুন জ্বলছে। ঘর থেকে কোনো মালামাল বের করতে পারিনি। আমার সাজানো সংসার এক মুহূর্তে ছাই হয়ে গেল।


এ সময় পাশে থাকা নাসরিন বলেন, আগুন লাগার পর দেখি, বস্তির সবাই চারদিকে দৌড়ঝাঁপ করছে। বাচ্চাগুলো চিৎকার করছে। আগুন নেভাতে কোথাও পানির ব্যবস্থা নেই। এমন দৃশ্য দেখে আমি কী করবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ঘর থেকে আসবাবপত্র বের করে কোথায়, কীভাবে নেবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। কোনো রকমে মোবাইলটা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। পরে স্বামী এলেও আগুনের কারণে ঘরে ঢুকতে পারেনি। চোখের সামনে সব পুড়ে গেল।


কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার প্রায় ৪০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে জানিয়ে নিলুফা আক্তার নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, বস্তিতে কী কারণে আগুন লেগেছে, তা স্পষ্ট নয়। তবে আগুন মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সবাই নিজের জীবন বাঁচাতেই দৌড়ে চলে যান। কিন্তু আগুন নেভাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। আবার আগুন নেভাতে পানির ব্যবস্থাও ছিল না।


তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই অনেকে ফায়ার সার্ভিসের টেলিফোন নম্বরে কল দিয়েছে। কিন্তু তারা প্রায় ৪০ মিনিট পর বস্তিতে এসেছে। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মহাখালী এলাকায় কড়াইলসহ বেশ কয়েকটি বস্তি আছে। অথচ এখানে কোনো ফায়ার স্টেশন নেই।


যদিও গতকাল ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঘটনাস্থলে যেতে দেরি হওয়ার কারণ জানিয়েছে সংস্থাটি। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গতকাল রাতে কড়াইল বস্তিতে গিয়ে বলেছেন, দ্রুত পৌঁছাতে পারলে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেত। কিন্তু সড়কে যানজটের কারণে আমাদের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে ৩৫ মিনিটের বেশি সময় লাগে। এরপর একে একে ইউনিট আসতে আরও সময় লাগে। ফায়ার সার্ভিসের বড় গাড়িগুলো শুরুতে আগুনের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। আমরা এসে দেখি আগুন প্রায় ডেভেলপ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আগুনের স্তর যখন তৃতীয় পর্যায়ে চলে আসে তখন নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় লাগে। আবার এ বস্তিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে একটু সময় লেগেছে, কারণ এখানে আগুন নেভানোর সীমাবদ্ধতা প্রচুর।


কড়াইল বস্তিতে দুই রুমের একটি টিনশেড বাসায় পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে বাস করতেন বিল্লাল হোসেন। আগুনে তার ঘরটিও পুড়ে গেছে। রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বনানী ১১ নম্বর রোডের ফুটপাতে পলিথিন বিছিয়ে ঘুমিয়েছেন। সকালে নিজ বাসায় গিয়ে কোনো কিছুই অবশিষ্ট পাননি।


আলাপকাল বিল্লাল হোসেন বলেন, গতকাল রাতে আগুন লাগার পর ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। রাতের খাবারটা বিকেলেই রান্না করে রাখা হয়েছিল। সে খাবারটাও ছাই হয়ে গেছে। পকেটে টাকা না থাকায় রাতে খাবারও কিনতে পারিনি। তবে মধ্যরাতে বস্তিবাসীর মাঝে খাবার বিতরণ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। তখন তিন প্যাকেট খিচুড়ি পেয়েছি। এগুলোই আমরা পাঁচজনে খেয়ে রাত পার করেছি। এখন কী খাবো তা বুঝে উঠতে পারছি না। রাস্তায় কারও কাছে সাহায্যও চাইতে পারছি না। অথচ পাশেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নগর ভবন। তারা তেমন কোনো সহযোগিতা করছে না।


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com