
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ন্যায়ভিত্তিক জলবায়ু কার্যক্রম জরুরি বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টি, বন্যা, আরও তীব্র ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীভাঙন এবং লবণাক্ততা– এসব প্রভাব লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে। সবমিলিয়ে এই সংকটে ইতোমধ্যেই কোটি বাংলাদেশিকে চরম ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) ব্রাজিলের রিও দে জানেইরোতে চলমান কপ-৩০ সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষে দেওয়া ভাষণে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের উপ-প্রধান ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ এসব কথা বলেন।
তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য দূরবর্তী কোনো ভবিষ্যৎ নয়, বরং এটি আমাদের জন্য দৈনন্দিন বাস্তবতায় এসে দাঁড়িয়েছে।
নাভিদ শফিউল্লাহ বিবৃতিতে উল্লেখ করেন, অতিরিক্ত তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টি, বন্যা, আরও তীব্র ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদীভাঙন এবং লবণাক্ততা– এসব প্রভাব ‘লক্ষ লক্ষ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করছে, ফসল নষ্ট করছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলোকে প্রান্তসীমায় ঠেলে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী মোট নিঃসরণের মাত্র ০.৫ শতাংশেরও কম অবদান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু খাতে দায়িত্ব, নেতৃত্ব এবং আশার পথ বেছে নিচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় চারটি বড় উদ্যোগ নিয়েছে বলে নাভিদ শফিউল্লাহ জানিয়েছেন। প্রথমত, জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এনডিসি ৩.০ উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বর্তমানে ২০ শতাংশ, যা ২০৩৫ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশে উন্নীত হবে– বর্তমানের তুলনায় চার গুণ বৃদ্ধি।
দ্বিতীয়ত, কৃষি ও বর্জ্য খাতে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ কমানোর উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তৃতীয়ত, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যেখানে স্থানীয়ভাবে পরিচালিত অভিযোজন, আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা ও কমিউনিটি সহনশীলতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। চতুর্থত, দীর্ঘমেয়াদি নিম্ন-কার্বন উন্নয়ন কৌশল প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্যারিস চুক্তির ন্যায়পরায়ণতার নীতি অনুযায়ী উন্নত দেশগুলোকে ‘জরুরি ও গভীর’ নিঃসরণ কমাতে হবে এবং জলবায়ু সহায়তা বহুগুণ বাড়াতে হবে। নাভিদ শফিউল্লাহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছেন শক্তিশালী সরকারি অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার জন্য, বিশেষ করে অভিযোজন অর্থায়ন বছরে ১২০ বিলিয়ন ডলারে ত্রিগুণ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। এমন আর্থিক প্রবাহের দাবি জানানো হয়েছে যা সরাসরি সহনশীলতা, অভিযোজন এবং ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলাকে অগ্রাধিকার দেবে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি বৈশ্বিক আর্থিক প্রবাহকে নিম্ন-কার্বন ও জলবায়ু-সহনশীল পথে সামঞ্জস্য করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘এটি শুধু অর্থ বা কৌশল নয়, এটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য বাধ্যতামূলক সহায়তা।’
নাভিদ শফিউল্লাহ গ্লোবাল স্টকটেকের ফলাফলও উল্লেখ করেন এবং ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমাকে বৈশ্বিক প্রচেষ্টার কেন্দ্রে রাখার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন।
এছাড়া ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের জলবায়ু সহায়তা সংক্রান্ত পরামর্শমূলক মতামতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন, ক্ষতি প্রতিরোধ, সহযোগিতা এবং ঝুঁকিপূর্ণ রাষ্ট্রগুলোকে সহায়তা– এসব বিষয়ে দেশগুলোর বাধ্যবাধকতা স্পষ্ট করা হয়েছে, যা বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের ন্যায্যতার দাবি আরও জোরালো করছে।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি বলেন, দেশের জন্য কপ৩০-এ আসা কেবল কূটনীতি নয়, এটি টিকে থাকার প্রশ্ন। ‘আমরা অনেক আশা ও দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এসেছি। বিশ্ব নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি, এই সম্মেলনকে এমন একটি মোড় ঘোরানোর মুহূর্তে পরিণত করতে যেখানে প্রতিশ্রুতি বাস্তব কর্মে রূপ নেবে এবং ন্যায়ভিত্তিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিশ্চিত হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষার জন্য এখনই সম্মিলিত সাহস দেখাতে হবে।’
উচ্চপর্যায়ের সেশনে আর্থিক সহায়তা, নিঃসরণ হ্রাসের পথনকশা, অভিযোজন লক্ষ্যমাত্রা এবং ক্ষয়ক্ষতি তহবিল কার্যকর করার বিষয়ে আলোচনা তীব্র হচ্ছে। বাংলাদেশ বিভিন্ন উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক সহায়তার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এ সেশনের ফলাফলের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]